বার বার একই ভুলে করণীয়

একজন সফল মানুষ যে ব্যর্থ হন না, তা নয়। কিন্তু তিনি তার প্রতিটি ব্যর্থতা থেকে শেখেন। ব্যর্থতা তাকে হতোদ্যম না করে নতুনভাবে, নতুন কৌশলে কাজ করার উদ্দীপনা যোগায়। আর সাধারণ মানুষ ভুল থেকে শেখে না। একই ভুল বারবার করে।
এ বিষয়ে মহাভারতে পঞ্চপাণ্ডবের একটি ঘটনা আছে। রাজ্য থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। বড় ভাই যুধিষ্ঠিরের তেষ্টা পেল। ছোট ভাই গেলেন তার জন্যে পানি আনতে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটি হ্রদ দেখতে পেয়ে যে-ই না আঁজলা ভরে পানি নিতে গেলেন, অমনি দৈববাণী শুনলেন, থামো! পানি নেয়ার আগে তোমাকে একটি প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। আর জবাব দিতে না পারলে তোমাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে।
প্রশ্নটি হলো- জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য কী? ছোট ভাই জবাব দিতে পারল না। সাথে সাথে মারা গেল। চতুর্থ, তৃতীয়, দ্বিতীয় ভাইও একে একে এল এবং জবাব দিতে না পেরে মৃত্যুমুখে পতিত হলো। সবশেষে এলেন যুধিষ্ঠির। এসে দেখলেন হ্রদের তীরে মৃত চার ভাইকে। দৈববাণী তাকেও একই প্রশ্ন করল।
যুধিষ্ঠির জবাব দিলেন, `মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্য হলো মানুষ কখনো শিখতে চায় না।` যুধিষ্ঠিরের জবাব সঠিক ছিল।
দৈববাণী তখন বলল, তুমি যা বলেছ তা ঠিক। আঁজলা ভরে পানি নিয়ে তোমার ভাইদের চোখে মুখে ছিটিয়ে দাও, তারা আবার প্রাণ ফিরে পাবে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের প্রধান কারণ হলো সে তার ভুল থেকে শেখে না। তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলায় না। স্বভাব বা কৌশলের যে ত্রুটির কারণে সে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে, সেগুলোকে শোধরাবার কোনো উদ্যোগ তার থাকে না।
অধিকাংশ মানুষের বৃত্ত হলো তারা একই ভুল বার বার করে। যেমন, দৈনন্দিন জীবনেও সে একই ভুল অভ্যাস, আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গিরই পুনরাবৃত্তি করে এবং সমস্যায় পড়ে। যেমন, স্বামী-স্ত্রী হয়তো রাগারাগি বা ঝগড়া করছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই ঝগড়া, মনোমালিন্য একই ইস্যু নিয়ে, একই প্যাটার্নে।
আবার একজন ছাত্র/ছাত্রী পরীক্ষায় খারাপ করছে হয়তো অমনোযোগের কারণে, সময় নষ্ট করার কারণে বা বিশেষ কোনো ভুলের কারণে। ভালো রেজাল্ট করতে চাইলেও এই ভুলগুলো সে শোধরাচ্ছে না।
আবার কেউ হয়তো সময় মেনে চলে না। এর জন্যে অনেক রকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লেও যে কারণগুলোর জন্যে তার দেরি হয় সে কারণগুলো সে দূর করছে না। এবং বারবার সময় মতো কাজ না করার ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
কেউ হয়তো বার বার প্রেমে পড়ছে এবং দুর্ভোগে পড়ছে। কিন্তু কিছুদিন পরই সে একই ধরনের ছেলে বা মেয়ের পাল্লায় একই রকমভাবে প্রতারিত হয়ে প্রেমের দুর্ভোগে পতিত হচ্ছে। কিন্তু বুদ্ধিমান মানুষ ভুল থেকে শেখে এবং কার্যকারণ বুঝতে পারে যে কেন এটা হচ্ছে? ভুলগুলো বিশ্লেষণ করে সমস্যাকে তারা উৎপাটন করে মূল থেকে। আর এর জন্যে মেডিটেশন বা ধ্যান হলো সবচেয়ে ভালো উপায়। ধ্যানের গভীর তন্ময়তায় সে তার ভুল বুঝতে পারে, শোধরাতে পারে। বেরুতে পারে ভুলের বৃত্ত থেকে।

Previous articleএ্যাথেনা’র আয়োজনে আসক্তি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন অনুষ্ঠিত
Next articleরান্না করলে মন ভালো থাকে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here