মাতৃভাষা যেকোন ব্যাক্তির,পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যাক্তিগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ। মানবশশিু মাতৃর্গভে থাকাকালেই তার মায়ের ভাষার শ্রবণ ক্ষমতার প্রতি সংবদেনশীল হয়ে থাকে, মাতৃর্গভে বেড়ে উঠার সময়ই মায়ের গর্ভের ভেতরেও বাইরের শব্দ সে শুনতে পায়। ফলশ্রুতিতে এই শিশু জন্মকালেই তার মায়ের ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া বিশেষ করে এই ভাষাটির সর্ম্পকে অল্প-বিস্তর পরিচিত থাকে। এই প্রক্রিয়ার কারণে যেকোনো নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণের পর মাতৃর্গভে থাকাকালে যে ভাষার ধ্বনি শুনেছে এবং শোনে তাই হয়ে থাকে একটি শিশুর মাতৃভাষা। আর এই কারণে মাতৃভাষার প্রতি থাকে যেকোন জাতির আবেগ, অহংকার, চেতনা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
আমরা যদি ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাই তাহলে দেখব আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবিতে সংগঠিত গনআন্দোলনের ইতিহাসের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। “বাংলা ভাষা” কে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যখন ক্ষোভে উত্তাল রাজপথ তখন ছাত্রসমাজ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক এবং বাংলা ভাষা ভাষী সকল শ্রেণির জনগণ নেমে এসেছিলেন রাজপথে। তখন আওয়ামী লীগের সভাপতি “মাওলানা ভাসানী”র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধিদের সভায় গঠিত হয় “সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ”। তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেল যা ব্যারাক নামে পরিচিত ছিল, (বর্তমানে শহীদ মিনার অবস্থিত) তা ছিল ভাষা আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। এবং ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি যখন হাজার হাজার ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হন এবং ছাত্ররা পরবর্তীতে ১৪৪ দ্বারা ভঙ্গ করে নেমে আসেন রাজপথে তখন বাংলাভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, রফিক, শফিক সহ নাম না জানা আরো অনেকে। কারাবরণ করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র এম আই শহীদ , আবু সিদ্দিক,আলী আজগর, জসিমুল হক ও ফরিদুল হক, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কর্নেল রোকেয়া আনিস (গাইনী ও অবস্) সি.এম.এইচ. এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী।
যখন ২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথ, তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা সিদ্ধন্ত নিলেন যে, শহীদদের রক্তে রঞ্জিত স্থানে একটি মিনার স্থাপন করবেন। তখন হাসপাতালের নির্মাণ কাজের জন্য সংরক্ষিত ইট, বালি ও সিমেন্ট নিয়ে সূর্যাস্তের পর ছাত্ররা ১২ নং ব্যারাকের ৬নং রুমও হোস্টেলের পূর্ব পাশের গেইটের মধ্যবর্তী এক জায়গায় মিনারটি স্থাপন করেন।
আমাদের ভাষা আন্দোলনের পরিণতি ছিল সুদূর প্রসারী। বাংলাভাষার জন্য আন্দোলন এখানেই শেষ হয়নি। বাংলা ভাষা (মাতৃভাষা) বাঙ্গালীদের ভালোবাসা, গর্ব অহংকার অস্তিত্ব পরবর্তীতে ২১শে ফেব্রুয়ারি’কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
“চিকিৎসা ভাষাবিজ্ঞান” বাংলা ভাষার আরেকটি নতুন উম্মেষদ্বার সেখানে “অটিজমসহ ভাষা বৈকল্য রোগীদের নিয়ে শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণামূলক কার্যবিধি। চিকিৎসক, শিক্ষক, ও ভাষাবিদরা বাংলাদেশর মানুষের আশা আকাঙ্খা অনুযায়ী ভাষা বৈকল্য রোগীদের সেবা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে সব সময়।