আমাদের দেশে পরীক্ষা শব্দটিই ভীতিকর বলে মনে হয়। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার রুটিন পাওয়ার সময় থেকেই এক ধরনের মানসিক চাপ ভোগে। পরীক্ষার সময়কালে সেই চাপ রীতিমতো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অনেকে তো মানসিক দুঃশ্চিন্তার জন্যই পরীক্ষার সময় পড়ালেখা ঠিকমতো করতে পারে না। ফলে পরীক্ষা যথারীতি খারাপ হয় এবং মানসিক চাপের পরিমাণ আরও বাড়তে থাকে। যার ফলে অল্প বয়স থেকেই শিক্ষার্থীরা মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে পড়ে।
পরীক্ষার আগে মেধাবী থেকে শুরু করে কম মনোযোগী শিক্ষার্থী সকলের মধ্যে এই মানসিক চাপ কাজ করে। এই সময় অনেকে অকারণে পায়চারি করে। বুকের ভেতর কেমন জানি খালি খালি অনুভব করে। চোখে ঝাপসা দেখে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া শুরু করে। খেতে পারে না, ঘুম আসে না। এসব উৎকণ্ঠায় পরীক্ষার দিকেই মনোযোগ দিতে পারে না শিক্ষার্থীরা।
পরীক্ষার আগে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত চাপ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল কিছু সমাধান দিয়েছেন। তাঁর দেওয়া কার্যক্রমগুলো নিচে দেওয়া হলো।
রুটিন তৈরি করা
পরীক্ষার আগে নিয়ম করে দৈনন্দিন কাজগুলো সাজাতে হবে। কেবল পড়া নয়, দিনের প্রতিটি কাজ এই রুটিনমাফিক করার চেষ্টা করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম
মানুষের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য ঘুম খুবই প্রয়োজনীয়। পরীক্ষার আগে পরিমিত ঘুম মনোযোগ আর একাগ্রতাকে বাড়িয়ে দিবে। তাই পরীক্ষার আগে রাত জাগার অভ্যাস ত্যাগ করে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
সুষম খাদ্য
শুধু পড়লেই হবে না, নিয়মিত সুষম খাদ্যও খেতে হবে। বাইরের জাঙ্ক ফুড ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। আর প্রচুর পানি ও ফলের রস পান করতে হবে। এতে করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি আর শরীরে খনিজ লবণের পরিমাণ সঠিক থাকবে।
নিজের যত্ন
নিজের যত্ন নিতে হবে ঠিকমতো। ফলে নিজের প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। নিজের বই, খাতা থেকে শুরু করে এসবও ঠিকঠাকমতো রাখতে হবে। তাহলে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহও বাড়বে।
টানা পড়া নয়
পরীক্ষার আগে একটানা অনেকক্ষণ পড়া উচিত নয়। এতে মস্তিষ্কের উপর বেশ চাপ পড়ে। পড়ার মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। নিজের ইচ্ছেমতো কিছু করা উচিত। এর ফলে মানসিকভাবে প্রশান্তি পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও নিজের বিনোদন পাওয়ার কাজগুলোও করা উচিত।
উৎকণ্ঠা সংক্রমিত করবেন না
অভিভাবকেরা তাঁদের নিজেদের উৎকণ্ঠা পরীক্ষার্থী সন্তানদের মধ্যে সংক্রমিত করেন। তাই অভিভাবকদেরও উৎকণ্ঠামুক্ত থাকতে হবে। সন্তানের প্রতি অহেতুক চাপ দেবেন না, তাঁকে নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিতে দিন। সন্তানের পড়াগুলো আপনিই পড়ে ফেলবেন না! এমনকি পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। সময় নিয়ে বেরুনো উচিত।
পথে বা পরীক্ষার হলে পড়া নয়
পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে, গাড়ি-বাস-রিকশায় বসে অথবা পরীক্ষার হলে পরীক্ষা শুরুর মিনিট কয়েক আগে পড়বেন না। তখন আপনার মনে হতে থাকবে, ‘এখনো অনেক পড়া বাকি রয়ে গেল।’ এই ‘মনে হওয়া’টুকু আপনার পরীক্ষার ওপর প্রভাব ফেলবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
পরীক্ষার সময় বা নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে। ডিপ ব্রিথ নিতে হবে। তাহলে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব। তাহলে নিজের মধ্যে সতেজতা আর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।
লিখেছেনঃ কামরুল ইসলাম ইমন
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে