নিজের হীনমন্যতা অন্যের জন্য ক্ষতিকর

হীনমন্যতা একটি সাময়িক ও পরিস্থিতিগত উপসর্গ। আমরা সবাই ক্ষেত্র বিশেষে কম বেশী এই হীনমন্যতায় ভুগে থাকি। বেশিরভাগ মানুষ এই উপসর্গ থেকে নিজেই বের হয়ে আসতে সক্ষম হোন তবে অনেক সময় মানসিক রোগের কারণে অথবা ব্যক্তিত্বের কারণে অনেকে বের হয়ে আসতে পারেন না।
মনোবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে “inferiority complex” বলে একটি term আছে। “superiority complex” একটি defense mechanism মাত্র। রোগের কারণে হীনমন্যতায় ভোগাটার ব্যাখ্যা আছে। যেমন, বিষণ্নতা রোগের ক্ষেত্রে বলা যায় এই রোগে ভোগার কারণে সারাক্ষণ মন খারাপ থাকে তাই নিজেকে অপদার্থ, অধম, অকৃতী, অপরাধী মনে হতে থাকে যা অনেক সময় যুক্তি দিয়েও খন্ডানো যায় না। তাই বিষন্নতায় ভোগা রোগী নিজেকে হীন ভাবাটাই স্বাভাবিক। চিকিৎসার পর রোগী যখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেন তখন এই হীনমন্যতা থেকেও বের হয়ে আসতে সক্ষম হোন।
অনেক সময় continuous Stress বা একটানা মানসিক চাপের কারনেও এমন হীনমন্যতায় মানুষ ভুগতে পারেন। Stress নানাবিধ হতে পারে। এটা দৈনন্দিন জীবনের টানাপড়েন থেকে শুরু করে শারীরিক অসুস্থতাও হতে পারে। অনেক সময় একটানা চাপের মাঝে থেকে মানুষ যখন তার নিজের দক্ষতার পরিবর্তন/অধঃপতন দেখতে পায় তখন সাময়িকভাবে হীনমন্যতার স্বীকার হতে পারে। অবস্থার পরিবর্তন এবং stress free হবার সাথে সাথে এই হীনমন্যতা দূর হয়ে যায়। রোগ ছাড়া ব্যক্তিত্বের কারণেও অনেকে হীনমন্যতায় ভোগেন এবং নিজের হীনমন্যতা দূর করার জন্য defense mechanism এর মাধ্যমে “superiority complex”  ভুগতে থাকেন। এই মানুষগুলো নিজের হীনমন্যতা দূর করতে গিয়ে এবং নিজের তৈরী করা “superiority complex” বজায় রাখতে গিয়ে অনেক সময়
১. আশেপাশের মানুষগুলো কে অপদস্ত/অপমান করে ফেলেন।
২. নিজের বাকপটুতা বা রসবোধ (sense of humor) প্রমান করতে গিয়ে প্রায়শই offensive word বা আক্রমণাত্মক শব্দ ব্যবহার করে ফেলেন।
৩.নিজের শ্রেষ্টত্ব বজায় রাখতে গিয়ে একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সারাক্ষন নিজেকে লিপ্ত করে ফেলেন।
এই defense mechanism প্রতিনিয়ত ব্যবহারের ফলে এক পর্যায়ে এটা অভ্যাসে পরিনত হয়ে যায়। এই  শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে গিয়ে সামনের মানুষটাকে যে প্রতিনিয়ত তিনি বুঝে/না বুঝে আঘাত করে ফেলছেন অনেক সময় বুঝতে পারেন না। তবে এরা নিজেদের “low esteem” সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তাই criticism/সমালোচনা নিতে পারেননা। কখনো কেউ ধরিয়ে দিলেও বোঝার চেষ্টা করেননা বা মেনে নিতে চান না। নিজের মনের ভাব প্রকাশে কেউ ছোট হয়ে যায়না। সাময়িক ভাবে নানাবিধ কারনে নিজেকে অপদার্থ, rejected, deprived, ভাবার মাঝে কোন অন্যায় নেই। মানুষ হিসেবে আমরা কেউ perfect বা নিখুঁত না। আমাদের অনেক গুনাবলীর পাশাপাশি অনেক অক্ষমতা ও ত্রুটি আছে। তাই  সাময়িকভাবে আমরা হীনমন্যতার স্বীকার হতেই পারি। আমার নিজের হীনমন্যতা কারন, আমাকেই খুঁজে বের করে এর থেকে মুক্ত হয়ে আসতে হবে। নিজের হীনমন্যতাকে ঢেকে রাখতে গিয়ে যে “superiority complex” আমরা তৈরী করে ফেলি সেই ভ্রান্তিবিলাশে বসবাসে আমরা যেন comfort feel করতে থাকি বের হয়ে আসতে চাইনা। স্বভাবতই আমরা একটি জটিল, আত্মদ্বন্দপূর্ন, অহংকারী ও বেপরোয়া চরিত্রের অধিকারী হয়ে যাই। সব কিছুতেই জটিলতা খুঁজে পাই এবং নিজের জীবন জটিল করে ফেলি। এতে সাময়িকভাবে একটা সুখানুভূতি পাওয়া যায় তবে দূরবর্তি পরিনামে তা অশান্তি ও একাকিত্ব তৈরি করে নিজের মাঝে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিজ্ঞানী যারা সাধারন মানুষের মন এবং তার নানাবিধ রোগ নিয়ে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এই “superiority complex” এবং “inferiority complex” বোঝা সেই অনুযায়ী রোগীর কষ্টগুলা(flaws) আবিষ্কার করে রোগীকে এই জিনিষগুলো থেকে বের করে নিয়ে আসাটা একটি শিল্প এবং মহান দায়িত্ব। রোগীর এই সমস্যা বোঝাতে গিয়ে অনেক সময় অনেকে আমরা যারা এই বিষয়ে কাজ করি তারা নিজের দম্ভ প্রকাশ করে ফেলি যা রোগীকে পীড়া দেয় এবং তাকে  আরো “inferiority complex” এ ভুগতে সাহায্য করে। অনেকে জেনে বা না জেনে ‘Self acualization” এবং “superiority complex” একই ভাবেন বা ভাবতে ভালোবাসেন। Self acualization অনুভবের বিষয় ,দেখানোর নয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিজ্ঞানী যদি এই দুইটার পার্থক্য না করতে পারেন তার সাইকোথেরাপী দেয়া সমীচীন নয়।
হীনমন্যতা একটি কঠিন সমস্যা। যদি তা আপনাকে কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছে মনে করেন তাহলে চিকিৎসা নিন, যদি মনে করেন এর কারণে আপনি প্রায় দ্বন্দে লিপ্ত হচ্ছেন নিজের সাথে অথবা অন্যের সাথে তাহলে সাহায্য নিন এবং এখান থেকে বের হয়ে আসুন। সুন্দর স্বাভাবিক জীবনকে উপভোগ করুন যেখানে কখনো আমি পিছিয়ে আবার কখনো আমি এগিয়ে।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleভালো থাকার আগ্রহটা মনের মধ্যে পোষণ করি: সঙ্গীত শিল্পী জানে আলম
Next articleআমি ছোটবেলা থেকে চুপচাপ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here