এসারটিভনেস এর শাব্দিক অর্থ দৃঢ়তাসূচনা। এখানে ব্যক্তি সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে অথচ মার্জিত ও ভদ্রভাবে নিজের মত তুলে ধরেন ও অধিকার আদায় করে নেন। অর্থাৎ এসারটিভনেস হলো অন্যকে অসম্মান না করেও নিজের স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষমতা। অন্যের প্রতি আবেগ প্রকাশ করার ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে-অনুভূতি, বন্ধুত্ব, স্নেহ, বিরক্তি, আনন্দ, দুঃখ ও শোক প্রকাশ করা, প্রশংসা ও সমালোচনা করা এবং অন্যের করা প্রশংসা ও সমালোচনা নেয়ার ক্ষমতা।
যখন কেউ নিজেকে প্রকাশ করতে অক্ষম হয় তখন সে তার অনুভূতিকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না। তাই ঘরে-বাইরে সবক্ষেত্রে নিজেকে সঠিকভাবে প্রকাশের জন্য প্রয়োজন কিছু কৌশল অর্জন করা। যেমন-
কাউকে অনুরোধ করার ক্ষমতা
আপনি হয়ত কোনো জরুরি কাজে গিয়েছেন কিন্তু কলম নিতে ভুলে গিয়েছেন। তখন কাউকে অনুরোধ করে বলতে পারেন, প্লিজ কলমটা একটু দেয়া যাবে? আবার, কন্ডাক্টরকে ভাড়া দিতে গিয়ে বুঝতে পারলেন মানিব্যাগ বাড়িতে ফেলে এসেছেন। সেক্ষেত্রে আপনি ইতস্তত বোধ না করে বিনীতভাবে আপনার সমস্যা বর্ণনা করে আপনাকে বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারেন।
অনুরোধ রক্ষা না হলে তা মেনে নেয়ার ক্ষমতা
পৃথিবীতে নানা মতের মানুষ বাস করে। আপনার অনুরোধ অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। যেমন : আপনি হয়ত কোনো বন্ধুকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দিলেন কিন্তু আপনার বন্ধু যেতে রাজি হলেন না সেক্ষেত্রে বিষয়টি যাতে দৃষ্টিকটু না হয় আপনি বলতে পারেন, ঠিক আছে তাহলে পরে না হয় একদিন….।
অধিকার রক্ষায় দৃঢ়ভাব
দোকান থেকে কেনাকাটার পর বিক্রেতা আপনাকে ছেঁড়া নোট দিল। সেক্ষেত্রে আপনি বিক্রেতার দিকে দৃঢ়ভাবে তাকিয়ে বলতে পারেন, ভাই এই নোটটি ছেঁড়া। নোটটি বদলে দিন। দিতে রাজি না হলে আবারো বলুন। ভয় বা লজ্জা পাবেন না। কারণ আপনি আইনের পক্ষে আছেন। উত্তেজিত না হয়ে উপস্থিত ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণও করতে পারেন।
অনুরোধ অগ্রাহ্য করা বা কাউকে না করা
যদি কেউ আপনাকে এমন কোনো অনুরোধ করে বসে যা আপনি রাখতে পারবেন না আবার তার সাথে এমন সম্পর্ক যে আপনি তাকে আহতও করতে চাচ্ছেন না; আপনি হয়ত তখন তার অনুরোধ অগ্রাহ্য করার জন্য বলতে পারে-কিছু মনে করবেন না, আমার একটা জরুরি কাজ আছে। অথবা কেউ আপনার প্রতি দুর্বল কিন্তু আপনি তাকে পছন্দ করেন না। ঐ ব্যক্তি বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে আপনি ব্যস্ততার অজুহাতে এড়িয়ে যেতে পারেন। তাতেও কাজ না হলে সরাসরি তার অনুরোধ দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রাহ্য করুন।
প্রশংসা করা
প্রশংসা মানুষের কাজের অনুপ্রেরণা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে একে অন্যের সাথে সম্পর্ক ভালো হয়। যেমন : আপনি হয়ত কাউকে বলতে পারেন-আপনাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে, আপনার ধৈর্যশক্তি প্রশংসনীয়, আপনি যুক্তিসংগত কথা বলেন ইত্যাদি।
দুঃখ প্রকাশ করা
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাচনিক সামাজিক দক্ষতা। ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত ভুুল-ত্রুটির জন্য তাৎক্ষণিক দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। এই দুঃখ প্রকাশ আপনার চোখের দৃষ্টিতে, চেহারায়, দেহভঙ্গি ও গলার স্বরে উপস্থিত থাকতে হবে। যেমন : চলার পথে কারো সাথে ধাক্কা লাগলে আপনি Sorry বা দুঃখিত বলতে পারেন। অনেকে দুঃখ প্রকাশ করতে পারে না। সেক্ষেত্রে ভুল বোঝাবোঝির সৃষ্টি হয়।
খানিকটা সচেতন হলেই বদলে যেতে পারে আপনার পারিপাশ্বির্ক পরিবেশ। এমনকি আপনার সাথে অন্যদের আচরণ। তাই দেখুন না আচরণের একটুখানি পরিশোধন করে বদলে দেয়া যায় কিনা আপনার নিত্যদিনকার জীবন!
সূত্র: লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে