মানসিক রোগ ডিলিরিয়াম

0
120

ডিলিরিয়াম কী?
ডিলিরিয়াম একটি অস্থায়ী জীবননাশক অবস্থা, যা মানসিক ভারসাম্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং যার কারণে মানুষের পরিবেশ সচেতনতা হ্রাস পেতে থাকে ও চিন্তাশক্তি বিক্ষিপ্ত হয়।এই রোগের সূত্রপাত হয় খুবই আকস্মিক ভাবে এবং কয়েক দিন বা ঘণ্টার মধ্যেই মানুষের আচরণে  লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যায়।

ডিমেনশিয়া এবং ডিলিরিয়াম-এর মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
যেহেতু ডিমেনশিয়া এবং ডিলিরিয়াম, দুটি রোগেরই উপসর্গ প্রায় এক এবং এই দুটি রোগই এক সঙ্গে হতে পারে, তাই আমাদের এই দুটি রোগের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে।

ডিলিরিয়াম একটি অস্থায়ী রোগ, যা হঠাৎ শুরু হতে পারে এবং বিভ্রম সৃষ্টি করতে পারে। এর থেকে হওয়া উপসর্গগুলি সেরেও উঠতে পারে আবার আরও মারাত্মক রূপও ধারণ করতে পারে। এইরকম অবস্থা কয়েক ঘন্টা বা কয়েক সপ্তাহের জন্য থাকতে পারে।

ডিমেনশিয়া একটি ঘটমান স্নায়ু অবক্ষয়মূলক ব্যাধি, যা ধীরে ধীরে বিকাশিত হয় এবং সময়ের সঙ্গে মস্তিস্কের কোষগুলিকে ক্ষয় করে, যা মৃত্যু অবধি ঘটাতে পারে। এই রোগে বিভ্রম ঘটে না।

ডিলিরিয়াম- এর উপসর্গ গুলি কী?
ডিলিরিয়াম-এর উপসর্গগুলি কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যে লক্ষ করা যায়। এই সময় মানসিক ভারসাম্যে হেরফের হয়। মানুষটিকে কিছুটা সুস্থ আবার এই উপসর্গে মাঝামাঝি ধরনের জর্জরিত হতে দেখা যায়।

উপসর্গের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ
পরিবেশে সম্পর্কে সচেতনতা হ্রাস পাওয়া
  • কিছু অতি সামান্য বিষয়ে বিভ্রান্ত হওয়া
  • নির্দিষ্ট কোনও বিষয়ে মনঃ সংযোগ করতে না পারা
  • পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর প্রতিক্রিয়া কমা বা বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • সংলাপ বা প্রশ্নের জবাব দিতে না পারা

চিন্তাশক্তি লোপ পাওয়া

  • স্মৃতিশক্তি কমে আসা, মুলত শীঘ্র ঘটনা ঘটে যাওয়ার ক্ষেত্রে
  • মতিভ্রম,আশেপাশের লোকজনকে চিনতে না পারা
  • সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
  • শব্দ চয়ন ও শব্দ মনে রাখতে অসুবিধা
  • অর্থহীন বাক্য ব্যবহার করা
  • লিখতে বা পড়তে অসুবিধা হওয়া

ব্যবহারিক পরিবর্তন

  • সে সকল জিনিস দেখতে পাওয়া যার কোনও অস্তিত্ব নেই
  • অস্থিরতা, রাগ, বিরক্তি, অথবা ক্ষুব্ধ ব্যবহার
  • সব সময় ঘুম পাওয়া বা অনিদ্রা
  • মেজাজের পরিবর্তন অথবা বেশি মাত্রায় ভয়, দুশ্চিন্তা, রক্ষণশীলতা

শারীরিক পরিবর্তন যেমন হৃদস্পন্দনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, ক্ষুব্ধ হয়ে যাওয়া,নিদ্রাচক্রে পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

সাধারণ কিছু কারণ হল দুরারোগ্য জ্বর, কড়া মাত্রার ওষুধ সেবন, সংক্রমণ (মূত্রনালী, বা ত্বক এবং উদরে সংক্রমণ), নিউমোনিয়া, মদ বা মাদক দ্রব্যের ব্যবহার।
ডিলিরিয়াম-এর আরও কিছু কারণ হতে পারেঃ

  • জ্বর এবং তীব্র সংক্রমণ, শিশুদের ক্ষেত্রে
  • একটা নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসার জন্য বহু প্রকারের ওষুধ ব্যবহার করা
  • বিভিন্ন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা বা সার্জারি
  • ড্রাগ ও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বা প্রত্যাহার

এ ছাড়া কিছু ওষুধ, যা দুশ্চিন্তা, হতাশা, পার্কিনসন্‌স রোগ, হাঁপানি ও ঘুমের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, সেগুলিও ডেলিরিয়ামের কারণ হতে পারে।

ডিলিরিয়াম কয়েক ঘণ্টা, কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের জন্য দেখা যেতে পারে। যে ব্যক্তি দুরারোগ্য অসুখে ভুগছে, তার ডিলিরিয়াম হওয়ার আগে যে চিন্তাশক্তির ক্ষমতা ছিল, তা সে ফিরে নাও পেতে পারে। যদি ডিলিরিয়াম-এর চিকিৎসা সময়মতো না হয় তাহলে একজন ব্যক্তির যা  অভিজ্ঞতা হতে পারে, সেগুলি হলঃ

  • স্বাস্থ্যের অধঃপতন
  • সার্জারির পরে সেরে ওঠার সম্ভাবনা কমে যাওয়া
  • মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি

    ডিলিরিয়াম নির্ণয় করা হয় রোগীর চিকিৎসার ইতিহাস, মানসিক স্থিতির পর্যবেক্ষণ, শারীরিক ও স্নায়ু পরীক্ষার দ্বারা।

    যদি পরিবারের কোন ব্যক্তি বা বন্ধুর ডেলিরিয়ামের উপসর্গগুলি দেখা যায়, তাহলে সঠিক সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদি সেই ব্যক্তির ডিমেনশিয়াও হয়ে থাকে তাহলে সতর্ক থাকুন তার আকস্মিক চিন্তাশক্তির পরিবর্তন ঘটার, যা ডিলিরিয়াম-এর সূত্রপাত হতে পারে। সেই ব্যক্তিটির উপসর্গগুলির উপর, তার চিন্তাধারার প্রবাহ, রোজকার অভ্যেস ও কাজকর্মের উপর আপনার পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
    বয়স্ক ব্যক্তিরা, যারা হাসপাতালে ভর্তি বা অনেক দিন ধরে বিশেষ পর্যবেক্ষনের মধ্যে রয়েছে, তাদের ডিলিরিয়াম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর কারণ হল, কিছু কিছু উপসর্গের মাত্রায় তারতম্য দেখা যায় – যেমন সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া বা দুর্বল প্রতিক্রিয়া। যদি আপনি কখনও কোন হাসপাতালে বা নার্সিং হোমে কোনও ব্যাক্তির মধ্যে ডিলিরিয়াম-এর উপসর্গগুলি দেখতে পান, তাহলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারকে জানান।
    ডিলিরিয়াম-এর ক্ষেত্রে, মূল কারণটি  সমাধান করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। উদাহরণঃ সংক্রমণের মতো একটি শারীরিক রোগ অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করা যায়, এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ওই ডিলিরিয়াম থেকে মুক্তি পেতে পারে।

    যখন পরিবারের কোনও সদস্য বা বন্ধু ডিলিরিয়াম থেকে সেরে উঠছে, তার পাশে গিয়ে দাঁড়ান এবং তাকে মানসিক সহায়তা প্রদান করুন। নীচে কিছু পরামর্শ দেওয়া রইল, কীভাবে একজন ডিলিরিয়াম আক্রান্ত রোগীর পাশে এসে দাঁড়াবেন।

    • পরিস্থিতি সামালানোর জন্য দৈনিক কাজকর্মের একটা নির্দিষ্ট তালিকা তৈরি করুন।
    • ব্যাক্তিটিকে দিনের বেলায় কিছু শারীরিক কাজকর্ম বা ব্যায়াম করার জন্য উৎসাহিত করুন
    • তাকে উষ্ণ, গরম, ক্যাফেন বা মদ বর্জিত পানীয় দিন রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগে, যাতে তার ঘুমের ধরন নির্ণয় করা যায়।
    • রোগীকে ঘড়ি বা ক্যালেন্ডারের হিসাব রেখে কিছু কাজকর্ম করায় উৎসাহিত করুন
    • রোগীর আশেপাশে তার পছন্দের জিনিসপত্রগুলি রাখুন, যাতে তার কোনও ভাবে দম বন্ধ না মনে হয়।
    • চেঁচামেচি ও হইহট্টগোল থেকে রোগীকে দূরে রাখুন
    • খেয়াল রাখুন ব্যাক্তিটি যেন সময়মতো ওষুধ খায়
    • ডিলিরিয়াম-এ আক্রান্ত ব্যাক্তির যত্ন নেওয়া বেশ কঠিন। রোগীর সঙ্গে আপনার নিজের শারীর ও মনের যত্ন নিতে হবে। যথেষ্ট ঘুম, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, নিজের জন্য সময় বার করে নিতে হবে এবং এই রোগের সম্পর্কে একটু পড়াশোনা করতে পারলে আপনি রোগীকেও যথাযথ যত্ন সহকারে সারিয়ে তুলতে পারবেন।

     

    মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন ক্রয়ের বিশেষ অফার

    স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
    করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
    মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleসন্দেহপ্রবণতায় আয়ু কমে:গবেষণা
Next articleনিজেকে সঠিকভাবে প্রকাশের প্রয়োজনীয় কিছু কৌশল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here