আপনি যখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বা হতাশাগ্রস্ত থাকেন, তখন অনেক ডাক্তার, থেরাপিস্টের পরামর্শ নেন, কিন্তু অনেক সময় কিছুতেই যেন কাজ হতে চায় না। সব কিছুই মনে হয় এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে এবং আপনি নিজেকে আরও হতাশ মনে করতে থাকেন এবং ভাবেন, আপনার ব্রেইন ঠিকমত কাজ করছে না বা আপনার শারীরিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে গেছে।
কিন্তু এই ভাবনাটা ঠিক নয়, কারণ অনেক সময় আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ও এড়িয়ে যাই এবং অনেক ক্ষেত্রে কেউ কেউ দুশ্চিন্তা ও হতাশা দুটাতেই আক্রান্ত থাকেন, সেই সময় শুধু ওষুধে কাজ হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে কিছু জীবনদক্ষতা আমাদের খুবই কাজে লাগে মানসিক চাপ মোকাবেলার জন্য।
অনেক কাজই আমরা পরিবার থেকে শিখতে পারি না, কারণ পরিবারেরই হয়তো সেটা অজানা থাকে। পরিবার আমাদের ততটুকুই যতটা তাদের জানা থাকে। তাই কোনো দক্ষ উপদেষ্টার সাহায্য না পেলে আমাদের জীবনদক্ষতার অনেক কিছু অজানা থেকে যেতে পারে, যা কি-না জীবনের আবেগীয় সময়গুলো মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন।
কোনো কোনো সময় আপনি কোনো পরিস্থিতিতে ভুলভাবে প্রতিক্রিয়া করতে পারেন এবং এর জন্য আপনাকে বাজে পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। একে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় Dysfunctional Thought Pattern or Cognitive Distortion বলে।
আবেগীয় পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য যে দক্ষতাগুলো প্রয়োজন-
১। প্রতিকূলতা মোকাবেলার জন্য প্রাণোচ্ছল হওয়া।
২। বিবাদ মোকাবেলার ক্ষমতা।
৩। সংগঠিত হওয়ার কাজ।
৪। সময়ানুবর্তীতা।
৫। সামাজিক দক্ষতা, অন্যের সাথে ভাব জমানোর ক্ষমতা।
৬। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা।
৭। কেন্দ্রবিন্দুতে আসার দক্ষতা।
৮। নিজের সীমানা ঠিক করা
যদি আমরা সমাজে মিশতে না পারি, তাহলে একাকী হয়ে যাই এবং এর থেকে হতাশার জন্ম হয়।
আমরা যদি কোনো পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া করতে ব্যর্থ হই, তবে তার থেকেও আমাদের দুশ্চিন্তা বা হতাশার জন্ম হতে পারে।
আমরা যদি একসাথে বসবাস না করতে পারি এবং প্রতিনিয়তই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, তবে তা-ও হতাশার কারণ হতে পারে।
অনেক সময় যারা আমাদের কাছে সময় চায় বা যাদের কাছে আমাদের সময়ের মূল্য আছে, তাদের আমরা সময় দিতে পারি না এবং এই সমস্যার কারণে আমদের আবেগীয় ঝামেলার সৃষ্টি হয়, যা অনেক বেদনাদায়ক।
এটা বলা ঠিক না যে, সব দুশ্চিন্তা ও হতাশার কারণ জীবন পরিচালনায় দক্ষতার অভাব, হরমোনের কারণে বা ব্রেইনের কিছু ক্যামিক্যালের কারণেও এমন হতে পারে।
আপনি যখনই হতাশা বা দুশ্চিন্তার জন্য চিকিৎসার কথা ভাবেন, তখন প্রথমেই আপনার শারীরিক অবস্থা কেমন এবং হরমোনজনিত কোনো সমস্যা আছে কি-না, এই বিষয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। এরপর আপনি একজন থেরাপিস্টের সাথে কথা বলতে পারেন। তিনি আপনার সব সমস্যা শুনে এবং অতীতটা জেনে আপনাকে জীবন দক্ষতা শিখানোর বিষয়ে সাহায্য করবেন।
আপনি এই দক্ষতাগুলো নিজেও শিখতে পারেন যেমন বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, বই বা কোনো স্পেশালিস্টের কাছে থেকে।
এটা বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ যে, এসব জীবনদক্ষতা আপনার জীবনের সমস্যা সমাধানের জন্য এবং জীবন নিয়ন্ত্রণের জন্য।
তথ্যসূত্র: সাইকসেন্ট্রাল ডটকমে প্রকাশিত Audrey Sherman এর রচনা অবলম্বনে লিখেছেন সুস্মিতা বিশ্বাস।
লিংক: https://blogs.psychcentral.com/dysfunction/2018/05/for-anxiety-and-depression-do-you-need-therapy-life-skills-or-both/