প্রতিদিনের চিঠি – আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সেসবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন ‘প্রতিদিনের চিঠি’ বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আপনিও লিখতে পারেন আমাদেরকে এই ইমেইলে monerkhaboronline@gmail.com। সেজন্য ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
প্রশ্ন- উত্তর পর্বে দেয়া উত্তরগুলো কেবলমাত্র প্রাথমিক দিকনির্দেশনা। সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সাথে সরাসরি দেখা করে চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রশ্ন – আমি একটা সরকারী মেডিকেলে চতুর্থ বর্ষে পড়ছি। ইন্টারমেডিয়েট পড়ার সময় কিছুদিন আমি একটা অদ্ভুত সমস্যায় ভুগেছিলাম। তখন- তালাটা লাগানো হলো নাকি দেখার জন্য খুলে দুবার লাগাতাম, বাইরে থেকে এসে প্রতিবার গোসল করতাম, গ্যাসের চুলাটা বন্ধ হয়েছে নাকি দেখতে চুলা অন করে আবার অফ করতাম, এই ধরনের সমস্যা আমার লেখাপড়ায় খুব ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিলো। একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানোর পর – উনি আমার সমস্যাটা OCD বলে সনাক্ত করলেন, এবং তখন serolux 100mg, epilim crono 200mg দুটো ওষুধ দিলেন। এই ওষুধ তিন বছর আমি কন্টিনিউ করেছি, উনার কথা মতো। পরের প্রতিবার কাউন্সেলিং এ উনি ওষুধের ডোজ কমিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন একসময় আমার মনে হলো আপাতত আমার ওই সমস্যা নেই। আমি ওষুধ বন্ধ করে দেই। এবং আলহামদুলিল্লাহ সমস্যার প্রকটতা কমে যায়, কিন্তু আমি খুব ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকি, হঠাৎ হঠাৎ করেই, এমন নয় যে সেটা বারবার হচ্ছে। কিন্তু ডিপ্রেশন যখন দেখা দেয় তখন আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে, দায়িত্ব বা চাপ নিতে পারি না, এড়িয়ে যাই, ভয় হয়, আমি যদি না পারি ! এখনো এই জিনিষটা মাঝে মাঝে আমাকে খুব ভোগায় আমার ওষুধ থামানো কি উচিত হয়েছিলো, এখন কি আরেকবার কাউন্সেলিং করানো উচিত ? আমি বুঝে উঠতে পারছিনা।
পরামর্শ – আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় সমস্যার শুরু এবং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে তিন বছর ঔষধ খাওয়ার পরে আপনি কিছুদিন ভাল ছিলেন। এই সময়ের সমস্যাগুলো চিকিৎসক মনে করেছিলেন যে ওসিডি রোগের কারণে হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে আপনি ধীরে ধীরে ঔষধ ছেড়ে দিতে পেরেছিলেন; এই তথ্যগুলোও আপনার লেখায় আমরা পাই। তবে ঔষধ বন্ধ করার পরে আপনার মানসিক অবসাদ বোধ করেন। আপনি ওসিডির যে ঔষধগুলো সেবন করেছিলেন সেগুলো থেকে কিন্তু আপনার ডিপ্রেশন তৈরি হয় নাই; সম্ভবত আপনার ওসিডির সাথেই ডিপ্রেশন ছিল যা পরবর্তীতে মাঝে মাঝে আপনার দেখা দিয়েছে। অতীতের চিকিৎসা বন্ধ করা উচিত হয়েছিল কিনা সেটা নিয়ে আপনার এখন না ভাবাই ভাল। কারণ একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যিনি অনেক দিন আপনাকে দেখেছেন উনি আপনাকে ধীরে ধীরে ঔষধ বন্ধ করেছেন। মানসিক রোগের ঔষধগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে কমিয়ে তারপর বন্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে নিয়মের তেমন ব্যতিক্রম হয় নাই। আপনার উচিত হবে আপনার ডিপ্রেশনের যথাযথ চিকিৎসা নেয়া। আপনার মনে রাখতে হবে, মানসিক ডিপ্রেশন মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে এবং ব্যক্তির জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত তৈরী করে; আপনার এই ব্যাপারগুলোই ঘটেছে। পত্রিকায় পাঠানো রোগের বর্নণায় অনেক সময় সব ব্যাপার উঠে আসে না এবং আপনি যেহেতু সরকারী মেডিকেল কলেজে পড়ছেন, সেজন্য আপনার জন্য ভাল হবে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সাথে সরাসরি দেখা করে কথা বলে বর্তমানে যে সমস্যাগুলোকে আপনি ডিপ্রেশন বলে অনুভব করছেন সেই সমস্যাগুলো নিয়ে আলাপ করা। বর্তমানে মানসিক অবসাদের ভাল চিকিৎসার জন্য এন্টিডিপ্রেস্যান্ট ঔষধের সাথে সাথে সাইকোথেরাপী এবং শারিরীক ব্যায়ামের উপকারী ভূমিকা আছে। আপনি আশা করি আমাদের উত্তর থেকে দিক নির্দেশনা পেয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা নিয়ে আপনার সমস্যাগুলো থেকে উপকার পাবেন।
পরামর্শ দিয়েছেন-
ডা. নূর অহমেদ গিয়াসউদ্দিন
সহযোগী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, মনোরোগ বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল ।
আরও দেখুন-