বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতি দিন যদি টুকটাক লেখালেখি করা যায়, তাহলে মন বেশ ভাল থাকে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের এই দুঃসময়ে আমাদের সবাইকেই ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে গৃহবন্দী জীবন যাপন করছি। এই সময়ে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা যদি আমাদের প্রতি দিনের অভিজ্ঞতা নিজস্ব ডায়রিতে লিখে রাখি, বা প্রতিদিন টুকটাক লেখালেখির কাজ করি তাহলে এই অভ্যাস আমাদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
ছোট বেলায় স্কুলের দিনগুলোতে প্রায় প্রতি দিনই আমাদের কাগজ-কলম ব্যবহার করতে হত। তাছাড়া আমাদের অনেকের মধ্যেই ছোট বেলায় ডায়রি লেখার অভ্যাস ছিল। সেই বিশেষ ডায়রিতে আমরা আমাদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা, গান, কবিতা ইত্যাদি লিখে রাখতাম, বিভিন্ন রকম ছবি আঁকতাম। এটি আমাদের যেমনি অনেক পছন্দের কাজ ছিল, তেমনি নিজেদের সাথে এটি আমাদের আরও ভালোভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে সহায়তা করত। ধীরে ধীরে জীবনে কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় প্রতি দিনের সেই অভ্যাস আমাদের ত্যাগ করতে হয়েছে।
পৃথিবীব্যাপী করোনা ভাইরাস আতঙ্কে সব মানুষ আজ গৃহবন্দী। সারা দিন ঘরে বেসে থেকে থেকে সবাই ক্লান্তও। তাছাড়া প্রতি দিন মৃত্যুর মিছিলে নতুন নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে। এসব বিষয় আমাদের মাঝে অত্যধিক মানসিক চাপের সৃষ্টি করছে এবং দিন দিন আমরা আরও বেশী অবসন্ন হয়ে পড়ছি। এখন দিনের ২৪ ঘণ্টাই আমাদের অবসর সময়। এই অলস সময়ে যদি সেই পুরনো অভ্যাসে আমরা আবার নতুন করে অভ্যস্ত হতে পারি তাহলে এই দুঃসময়ের মানসিক চাপ বেশ খানিকটাই কমে যাবে।
প্রতি দিন কিছু লেখার অভ্যাস আমাদের একাকীত্ব দূর করতে সাহায্য করে, আমাদের মানসিক চাপ কমায়, দুশ্চিন্তা থেকে আমাদের দূরে রাখে এবং পরিস্থিতি যেমনই হোক, আমাদের মনে শান্তি ফিরিয়ে আনে। আমরা লিখতে পারি প্রতি দিন যা কিছু ঘটছে সে সব কিছুর বিষদ বর্ণনা বা লিপি বদ্ধ করতে পারি ভবিষ্যতে আমরা যা কিছু দেখতে চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ ইচ্ছে, স্বপ্ন ইত্যাদি। এই ধরণের লেখা আমাদের মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমিয়ে মনের জোর বৃদ্ধি করবে, ইতিবাচক চিন্তাধারার বিকাশ ঘটাবে এবং সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগাবে।
সব সময় মনে রাখবেন বিশ্বব্যাপী এই মহামারীর সময়ে ঘরে থেকে আপনি আপনার সেরাটা দিচ্ছেন। আমাদের হাতে এর থেকে বেশী কিছু দিয়ে করোনার সাথে যুদ্ধ করার মত কিছুই নেই। তাই ঘরে থেকে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করাটাই সব থেকে উত্তম এবং লেখালিখি করা এর মধ্যে অন্যতম ভাল একটি উপায়। মনে রাখবেন সবার জীবনেই সুখের সময়, দুঃখের সময় উভয়ই আসে। সুখ-দুঃখ মানুষের অত্যন্ত স্বাভাবিক দুটো অনুভূতি। খারাপ লাগা অন্যায় কিছু নয়। পরিবারের অন্যান্যদের সাথে শেয়ার করতে না পারলেও মনের কথা নির্দ্বিধায় লিখে ফেলতে পারেন ডায়রির পাতায়। এতে মন অনেক হালকা হবে।
বৈশ্বিক এই সমস্যায় আমাদের স্বাভাবিক কর্মকান্ডের ব্যত্যয় ঘটেছে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমরা হতাশায় ডুবে থাকব। আমাদেরকে অবশ্যই এর সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হবে। সুদিনের কথা ভাবতে হবে। সব সময় সাহস রাখতে হবে। বিপদ আসলে অবশ্যই আপনি সেটি মোকাবেলা করতে পারেন এবং অনেক ভালভাবেই করতে পারেন-এই বিশ্বাস রাখুন। যা কিছু হোক, আপনি সামলে নিতে পারবেন।
আমরা হয়তো জানিনা এই করোনা ভাইরাস কবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে এবং আমরা কবে আবার আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারব। কিন্তু এক দিন এর ইতি ঘটবেই। প্রতিটি ঝড়ই এক সময় শেষ হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। এই অবস্থায় আপনার দায়িত্ব নিজেই নিজেকে ভাল রাখা। এজন্য সেই কথা গুলো লিখুন যা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে, আপনাকে সাহস যোগাবে। অনুপ্রেরণামূলক কথা গুলো ডায়রির পাশাপাশি লিখে রাখতে পারেন আপনার দরজায়, আপনার আয়নায় বা আপনার পড়ার টেবিলে যেখানে সহজে আপনার চোখ পড়ে।
সেসব কিছু লিখুন যা আপনি এই মুহূর্তে শুনতে চান, যা আপনার মনকে প্রশান্তি যোগাবে, মানসিক চাপ কমাবে, এবং নতুন আশার সঞ্চার করবে। এই কথাগুলো মন প্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করুন এবং সুফল উপভোগ করুন।