মাহজাবীন আরা
সাইকলজিস্ট
মানুষের আচার—আচরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানসিক বৈশিষ্ট্য। একজন মানুষের গ্রহণযোগ্যতা বহুলাংশে তার আচার—আচরণের ওপরই নির্ভর করে। সাধারণভাবে কোনো বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনায় সাড়া দিতে গিয়ে মানুষ যে ক্রিয়া—প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে, তাই হলো তার আচরণ। যদিও স্থান—কাল—পাত্রভেদে মানুষের আচার—আচরণগত পার্থক্য দেখা যায়।
অসংগত আচরণ হলো এমন আচরণ যা অপ্রত্যাশিত বা পরিস্থিতির জন্য অযৌক্তিক বলে বিবেচিত। অসংগত আচরণ বলতে বোঝায় একজন ব্যক্তির (অভ্যন্তরীণ বা প্রকাশকৃত) মনোভাব এবং প্রকৃত কাজের মধ্যে অসংগতি। অসংগত আচরণকে কখন মানসিক রোগ বলা যেতে পারে আসুন সে সম্পর্কে জেনে নেই—
প্রথমেই আসা যাক পোশাকের ব্যাপারে। কিছু জটিল মানসিক রোগ আছে, তখন রোগীরা পোশাক পরিধানের ব্যাপারে সচেতন থাকতে পারে না; অনেকে ময়লা ছেড়া পোশাক পরে আবার কেউ কেউ কোনো কাপড় ছাড়াই ঘুরে বেড়ায়।
- সাধারণত পোশাকের ক্ষেত্রে সমাজের নিয়ম অনুযায়ী ছেলেরা শার্ট—প্যান্ট, লুঙ্গি ও মেয়েরা সালোয়ার—কামিজ বা শাড়ি পরবে; কিন্তু কোনো ছেলে যদি মেয়ের বা মেয়ে যদি ছেলের জন্য নির্ধারিত পোশাক সবসময় পড়ে তবে তার মানসিক সমস্যা ধরে নেয়া হয়।
- ঠিক তেমনিভাবে সাজসজ্জার ক্ষেত্রেও কোনো ছেলে যদি মেয়েদের মতো অলংকার ও সাজগোজ করে থাকে তখন সেটা মানসিক সমস্যা বলে চিহ্নিত করা যায়।
- শুধু বেশভূষাই নয়, কেউ কেউ তাদের কথা—বার্তা বা চালচলনেও বিপরীত লিঙ্গের রুপ ধারন করে থাকে। অর্থাৎ এসব মানসিক রোগী ছেলে নিজেকে মেয়ে ভাবে বা মেয়ে নিজেকে ছেলে ভাবে।
- পারিবারিক বা সামাজিক নিয়মানুসারে আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান, যেমন—জন্মদিন, বিয়ে ইত্যাদি আয়োজন করে থাকি। কেউ যদি প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে এসব আয়োজন করে তখন সেটা মানসিক রোগের মধ্যে পড়ে।
- সাধারণত টিকেট কাটা এবং টাকা তোলা বা জমা দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদেরকে নিজের সিরিয়াল না আসা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার নিয়ম; কিন্তু দেখা যায় যে, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তি সেই ধৈর্যর্ রাখতে পারেন না; অযথা লাইনের অন্যদের বিরক্ত করা, ধাক্কাধাক্কি বা লাইন ভেঙে সামনে চলে যাওয়া ইত্যাদি আচরণ করে থাকেন।
- অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে বা কারো সাহায্য চাইতে গেলে আমরা যেভাবে ভাবের আদান—প্রদান করে থাকি; কিছু কিছু মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সেভাবে আচরণ করতে পারে না; বরং চিৎকার চেঁচামেচিসহ অনেক অসংগত আচরণ প্রকাশ করে।
- বিভিন্ন আবেগের প্রকাশে যেমন—রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে আমরা একা একা কথা বলে ফেলি। শিশুরাও খেলতে গিয়ে খেলনার সঙ্গে বা পুতুলের সঙ্গে একা একা কথা বলে। তবে ওই কথাগুলোর মধ্যে পারিপার্শ্বিক সামঞ্জস্যতা আছে। এটা মানসিক রোগের লক্ষণ নয়। কিন্তু ঘোরতর মানসিক রোগীদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনবরত কথা বলতে দেখা যায়। যা অসংগত বা সামঞ্জস্যহীন।
- ভুলে যাওয়া রোগ অর্থাৎ ডিমেনসিয়া রোগীরা এমন কিছু আচরণ করেন যা সাভাবিকভাবে পরিবার বা সমাজের চোখে অসংগত বলে মনে হয়।
- নিজের বা অন্যের প্রয়োজনে কেনাকাটা করা মানুষের স্বাভাবিক আচরণ কিন্তু মানসিক রোগাক্রান্ত ব্যক্তি কেনাকাটা করতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে যে তাকে ধারদেনাও করতে হয় ।
পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন প্রথা বা নিয়ম মানুষেরই তৈরি এবং পরিবার থেকেই সেগুলো দেখে, শিখে এবং পরবর্তিতে নিজের মধ্যে ধারণ করেই শিশুরা বড়ো হয় এবং সে অনুযায়ী আচরণ করে থাকে। যখন আচরণগুলো নিয়ম মেনে করা হয় সেগুলোতে কারো কোনো সমস্যা হয় না কিন্তু যখন তা কোনো স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যে পড়ে না তখনই সেগুলো চোখে পড়ে এবং বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে।