সংস্কৃতি-অঙ্গনের অনেকেই তাঁকে চিনেন। তিনি কামরুজ্জামান কামু। গীতিকার হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়, তবে প্রধানত তিনি কবি। ‘আমার বাড়ির রঙের মেলায়’, ‘তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও’ এর মতো জনপ্রিয় গানের রচয়িতা তিনি। কবিতা ছাড়াও তিনি যুক্ত আছেন চলচ্চিত্র নির্মাণে। সম্প্রতি কথা হলো তাঁর সাথে। তিনি নিজের মন, লেখালেখি, সিনেমা নির্মাণ ও প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে কথা বলেছেন মনের খবর- এর সাথে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মামুন মিজানুর রহমান।
মনের খবর: ভালো আছেন? কীভাবে মন ভালো রাখার চেষ্টা করেন?
[int-ans name=”কামরুজ্জামান কামু”] হ্যাঁ, ভালোই আছি। মন ভালো রাখার জন্য আমি আমার বাচ্চাদের সাথে খেলি। অন্য শিশুদের পেলে তাদের সাথেও খেলি। গান শুনে মন ভালো রাখার চেষ্টা করি। বই পড়ি, কবিতা পড়ি
মনের খবর: মন ভালো রাখতে হলে আমাদের কী করা উচিত? আপনার কী পরামর্শ?
কামরুজ্জামান কামু: আমি পরামর্শ দিই না। তবে আমার ধারণা, এক্ষেত্রে উচিত হলো সহজ থাকা। সহজ থাকলে মন ভালো থাকবে। সহজ থাকার জন্য নিজের মনকেও সহজ রাখতে হবে।
মনের খবর: মন খারাপ হলে কী করেন?
কামরুজ্জামান কামু: মন তো নানা কারণেই খারাপ হয়। একেক ধরনের মন খারাপে একেক ধরনের আচরণ করি। আমি আসলে মন ভালো রাখার জন্য যা করি, মন ভালো রাখার জন্যও তা-ই করি। বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাই। গান শুনি, কবিতা পড়ি। বেশি মন খারাপ লাগলে ঘুরতে বেরিয়ে যাই।
মনের খবর: হতাশা অনুভব করেন কখনো? কীভাবে হতাশা থেকে বাঁচা যায়?
কামরুজ্জামান কামু: হ্যাঁ, মাঝে মাঝেই আমি হতাশায় আক্রান্ত হই। যেহেতু আমি চাকরি-বাকরি করি না, বেশির ভাগ সময় বাসায় বসে থাকি, ফলে মাঝে মাঝেই হতাশা বোধ করি। হতাশ হলে আমি নতুন স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করি। নতুন স্বপ্ন দেখার চেষ্টার মাধ্যমে হতাশা অনেকটাই লাঘব হয়। নতুন নতুন সম্পর্কে জড়াই, নতুন নতুন আড্ডায় যাই। এভাবে হতাশা অনেকটাই কেটে যায়।
মনের খবর: স্বপ্ন দেখেন? কী ধরনের স্বপ্ন দেখেন?
কামরুজ্জামান কামু: স্বপ্ন তো মানুষ দেখেই। আমিও দেখি। কীভাবে সুস্থ শরীরে সন্তানদের নিয়ে ১০০ বছর বেঁচে থাকা যায়, সেই স্বপ্ন দেখি। টাকা-পয়সা নিয়ে আমার কোনো স্বপ্ন নাই। এছাড়া আমি একটা মহাকাব্য লেখারও স্বপ্ন দেখি।
মনের খবর: রেগে গেলে কী করেন?
কামরুজ্জামান কামু: রেগে গেলে রাগারাগিই করি। হৈ চৈ করি। নিজের চুল ছিঁড়ি। ভাংচুর করি। একটা পর্যায়ে বেরিয়ে যাই। বাইরের অন্য পরিবেশে গেলে রাগ কমে আসে।
মনের খবর: কবিতা-গান কীভাবে মন ভালো রাখতে সহায়তা করে?
কামরুজ্জামান কামু: কবিতা-গান অনুভূতিকে সতেজ রাখতে সহায়তা করে। স্বপ্ন দেখতে শেখায়। বেঁচে থাকাকে আনন্দময় করে তোলে। কবিতা-গান পছন্দ করলে মানুষ বাজে চিন্তার দিকে এগিয়ে যায় না।
মনের খবর: শৈশবে আপনার কী স্বপ্ন ছিল?
কামরুজ্জামান কামু: খুব ছোটবেলায় দেশের প্রেসিডেন্ট হতে চাইতাম। আরেকটু বড় হয়ে, যখন এইটে পড়ি, তখন থেকে কবি হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করি।
মনের খবর: কবিতার দিকে কীভাবে এলেন?
কামরুজ্জামান কামু: এই যে বললাম, এইটে পড়ার সময় থেকে কবি হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করি। তখন থেকে কবিতা লেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ছড়া দিয়ে শুরু করিনি, শুরু থেকেই আমি কবিতা লিখছি। ছড়া লিখেছি আরো অনেক পরে, আমার মেয়ের জন্মের পরে মেয়েকে শোনানোর জন্য।
মনের খবর: আপনার প্রথম কাব্য কোনটি? এছাড়া অন্যান্য কাব্য?
কামরুজ্জামান কামু: ১৯৯৭ সালে বেরিয়ে ছিল আমার প্রথম কাব্য ‘কবি মুখপত্রহীন’। এরপর একে একে প্রকাশিত হয়েছে ‘অহেতু গুঞ্জনমালা’, ‘মামুজির নৌকায়’, ‘তুনির কবিতা’, ‘নিগার সুলতানা’, ‘চেয়ে আছো’, ‘কবিতাসংগ্রহ’ এবং ‘আমি রোহিঙ্গা’।
মনের খবর: গানের দিকে কীভাবে ঝুঁকলেন?
কামরুজ্জামান কামু: কবিতা নিয়ে যেমন ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল, গান নিয়ে কখনো স্বপ্ন ছিল না। সেভেন-এইটে পড়ার সময় একবার গান শিখতে গিয়েছিলাম, সা রে গা মা শুনেই বিরক্ত হয়ে ফিরে এসেছিলাম। গায়ক সঞ্জীব চৌধুরী আমার কাছে গান চেয়েছিলেন, তখন আমি কিছু গান লিখে ফেলেছিলাম। এর পর থেকে কিছু কিছু গান লিখছি।
মনের খবর: আপনার গানগুলো নিয়ে বলুন।
কামরুজ্জামান কামু: আমি গান অনেক কম লিখেছি। আমার প্রথম গান ‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায়’। এরপর লিখেছি ‘তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও’, ‘হৃদয়ের দাবি রাখো’, ‘হাতের উপর হাতের পরশ রবে না’ ইত্যাদি। আমার লেখা গানগুলো বেশির ভাগ গেয়েছেন সঞ্জীব চৌধুরী। এছাড়াও গেয়েছেন সালমা। এর বাইরে নিজের সিনেমার জন্য গান লিখেছি, মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর চলচ্চিত্রে গান লিখেছি, নূরুল আলম আতিকের ধারাবাহিক নাটকে গান লিখেছি।
মনের খবর: গান নিয়ে আপনার বিশেষ কোনো স্বপ্ন আছে?
কামরুজ্জামান কামু: গান নিয়ে আমার একটা বিশেষ স্বপ্ন আছে। এখন আমার বয়স ৪৭ বছর, বয়স পঞ্চাশ হলে আমি আবার নতুন করে গান লেখায় হাত দিবো। আমার মেয়েরা বড় হচ্ছে। তারা আমার লেখা নতুন গান গাইবে। এতদিন যেগুলো লিখেছি, এগুলো আসলে গান লেখার প্র্যাকটিস। আমি অনেক গান লিখতে চাই। রবীন্দ্র-নজরুলের সমপরিমাণ গান লিখতে চাই।
মনের খবর: সিনেমা তৈরি করেছিলেন, সেটার কী অবস্থা?
কামরুজ্জামান কামু: ‘ডিরেক্টর’ নামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছিলাম, সেটা অনেকদিন পর্যন্ত সেন্সর বোর্ডে আটকে ছিল। সেন্সর থেকে বেরিয়ে আসলেও সিনেমাটি চলচ্চিত্র পরিবেশকদের অসহযোগিতার কারণে সিনেমা হলে চালানো সম্ভব হয়নি। কিছু দিনের মধ্যে আমি সিনেমাটি বড় শহরগুলোতে দেখানোর চেষ্টা করবো প্রজেক্টরের মাধ্যমে। এছাড়া এ বছরের শেষ দিকে নতুন একটা চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করছি।
মনের খবর: আপনি তো নাটকও নির্মাণ করেছিলেন।
কামরুজ্জামান কামু: ২০০৬ সালে ‘স্ক্রিপ্টরাইটার’ নামে একটি নাটক তৈরি করেছিলাম। আমি অবশ্য সেটাকেও নাটক বলতে রাজি নই, আমি এটাকে চলচ্চিত্রই বলবো।
মনের খবর: নবীন কবি-গীতিকারদের প্রতি আপনার পরামর্শ?
কামরুজ্জামান কামু: আমি পরামর্শ দিতে পছন্দ করি না, সেটা আগেই বলেছি। মন দিয়ে নিজের কাজ করা, নিজের কাজের প্রতি সৎ থাকাই ভালো করার জন্য যথেষ্ট।
মনের খবর: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
কামরুজ্জামান কামু: আপনাকেও ধন্যবাদ।