যখন ব্যক্তি কোন কাজ করতে গিয়ে বা যোগ্যতা প্রমাণ করতে গিয়ে দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও মানসিক অবস্থার কারণে ব্যর্থ হয়, তখন এর পেছনে মূল কারণ হতে পারে মানসিক উদ্বিগ্নতা।
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সবার সামনে নাচতে, গান করতে বা অন্য কোন পারফরম্যান্স করতে সংকোচ বোধ করেন বা মানসিক চাপ বোধ করে। এ কারণে অধিকাংশ সময় তাদের প্রদর্শনী বা অংশগ্রহণ সুসম্পন্ন হয় না।
আবার অনেকে আছেন যাদের ক্ষেত্রে এই মানসিক চাপ বা উদ্বিগ্নতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তারা এসব পরিস্থিতি বা অনুষ্ঠান সব সময় এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করেন। জনসমক্ষে কথা বলা, সঙ্গীত, নাটক বা ক্রীড়া বিষয়ক প্রতিযোগিতা প্রদর্শন, পরীক্ষামূলক কথা বলা, নতুন চাকরি শুরু করা ইত্যাদি হল এ ধরণের অতি মাত্রায় মানসিক চাপ এবং উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি করতে পারা কাজ।
তাছাড়া পরিবার বা কাছের কেউ অসুস্থ হলে অপারেশন বা জটিল কোন রোগের চিকিৎসায় পাশে থেকে সাহায্য করাও অনেকের মধ্যে এতোটাই উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি করে যা সহ্য করা মুশকিল এবং অনেকেই এ ধরণের পরিস্থিতি অনিচ্ছাকৃত ভাবে হলেও এড়িয়ে চলতে বাধ্য হন বা মানসিক স্বস্তির জন্য এড়িয়ে চলেন।
এমন মানসিক সমস্যা যাদের রয়েছে তাদের সাধারণ উপসর্গ গুলোর মধ্যে রয়েছে, গলা শুকিয়ে যাওয়া, হৃদ স্পন্দন বেড়ে যাওয়া, মাথা ঘোরানো, নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া, বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং মানসিক অবস্থা এমন অবস্থায় পৌঁছে যাওয়া যখন ব্যক্তি ঐ পরিস্থিতি বা তার উদ্বিগ্নতা ভিন্ন অন্য যে কোন কিছু সে ভাবতে অসমর্থ হয়।
এভাবে নিজের যোগ্যতা বা বাস্তবিক অর্থে কি করনীয় সেটি ভাবতে অসমর্থ হয়ে ব্যক্তি মানসিকভাবে এতোটাই ভেঙ্গে হয়ে পড়েন, যা তাকে পরিস্থিতি থেকে পলায়ন করতে বাধ্য করে এবং উদ্বিগ্নতার কারণে সৃষ্ট এসব সমস্যায় ব্যক্তি তার যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়।
এ ধরণের উদ্বিগ্নতা সাধারণত বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতেই সৃষ্টি হয়। প্রকৃতপক্ষে কোন সমস্যা বা বিপদ না থাকলেও ব্যক্তি তার মানসিক চাপ এবং উদ্বিগ্নতার কারণে ভীতিগ্রস্ত বোধ করেন। বিভিন্ন বিপদ এবং প্রতিকূল অবস্থার কথা কল্পনা করে যার আদতে কোন অস্তিত্ব নেই।
এ ধরণের অনুমান প্রসূত বিপদের ভয় থেকে উক্ত অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাসহ ঘুমের অভাবও দেখা দেয়। এভাবে শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলো তাকে তার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে অসমর্থ করে তোলে।
যাদের জীবনে উদ্বিগ্নতা এমন এমন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে আছে তাদের জীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে এই মানসিক সমস্যার সমাধান করা জরুরী। মানসিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ ধরণের সমস্যা যেমন ওষুধের মাধ্যমে ঠিক করা যায় তেমনি কাউন্সেলিং করেও ঠিক করা যায়।
অনেক ক্ষেত্রেই যখন এটি একটি সহনীয় পর্যায়ে থাকে, চিকিৎসক কাউন্সেলিংকেই বেছে নেন এই ধরণের সমস্যা সমাধানের জন্য। এই ব্যবস্থায় উদ্বিগ্নতায় ভোগা ব্যক্তির মন থেকে এই অযাচিত এবং অবাস্তব ভয় দূর করার পাশাপাশি তার মনোবল বৃদ্ধি, তার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ ঘটানো এবং উক্ত ধারণার পরিবর্তন আনার প্রয়াস করা হয়।
ধীরে ধীরে ব্যক্তি বুঝতে পারে যে বিপদ ঘটার সম্ভাবনা তার কল্পনা প্রসূত, যা বাস্তব নয়। আর এই অবাস্তব কল্পনা করে মানসিক চাপ বৃদ্ধি, ভয় ভীতি বা উদ্বিগ্নতা কোন কিছুই সঠিক নয়। ব্যক্তি নিজে যখন বুঝতে পারবে এবং উদ্বিগ্ন না হয়ে নিজের সামর্থ্যের উপর ভরসা রাখবে, অবশ্যই সে তার যোগ্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হবে।
উদ্বিগ্নতা এমন একটি মানসিক সমস্যা যা ব্যক্তিকে ভেতরে ভেতরে শেষ করে দেয়। সামর্থ্য প্রমানের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকে অসফল হতে হয়। তাই এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন, যাতে ব্যক্তি একটি সুন্দর ও সফল জীবন লাভ করতে সক্ষম হয়।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে