ইলেকট্রনিক ডিভাইসের স্ক্রিণে অধিক সময় ব্যয়ের সঙ্গে আত্মহত্যা সম্পর্কিত

ইলেকট্রনিক ডিভাইসের স্ক্রিণে সময় কাটানো কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি বলে নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয় যে সকল টিনএজাররা স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের জন্য বেশী সময় ব্যয় করে, তাদের বিষণ্ণতার অনুভূতি ও আত্মহত্যার কথা চিন্তা করার প্রবণতা এবং উদ্যোগ নেয়ার প্রবণতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশী।

ফ্লোরিডার স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক টমাস জয়নার ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিক্যাল সায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণায় সহকারী গবেষক তিনি বলেন, আধুনিক সময়ে ইলেকট্রনিক স্ক্রিনের জন্য কাটানো সময়ের ব্যাপ্তিকে বিষণ্ণতা ও আত্মহত্যার জন্য ঝুঁকির কারণ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত ।

সান ডিয়েগো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী গবেষক মনে করেন যে, ইলেকট্রিক স্ক্রিনের জন্য কাটানোর সময় এবং বিষণ্ণতা, আত্মহত্যার চেষ্টার মাধ্যমে মৃত্যু এ দুটোর সম্পর্ককে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত। এইসব মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিষয়গুলোকে বাবা মায়েদেরও গুরুত্বের সাথে চিন্তা করা উচিত।

জয়নার জানান, বাবা-মাকে টিনএজারদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। কারণ, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের সাথে বেশী কাটানো সময়ের সঙ্গে বিষণ্ণতা এবং আত্মহত্যামূলক আচরণ গড়ে ওঠার সম্পর্ক রয়েছে।

দেখা গেছে, ২০১০ সালে টিনএজার যাদের বয়স ১৩-১৮ বছর তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বিষণ্ণতা এবং আত্মহত্যা বেড়েছে। যার মধ্যে মেয়েদের হার বেশি ছিল। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন এর করা এক গবেষণায় ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাব্য কারণ হিসেবে জানায়। ২০১০-২০১৫ সালে করা সিডিসি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে যে, টিনএজারদের মধ্যে ৩১ শতাংশ আত্মহত্যার হার বেড়েছে। অপরদিকে জাতীয় পর্যায়ের এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে শতকরা ৩৩ জন কিশোর তাদের অত্যাধিক বিষণ্ণতার ব্যাপারে রিপোর্ট করেছে।

এই টিনএজারদের বেশীরভাগ ছিলো মেয়ে। এদের মধ্যে শতকরা ৬৫ জনের আত্মহত্যার প্রবণতা এবং ৫৮ জনের মধ্যে গুরুতর বিষণ্ণতা দেখা গিয়েছে। আত্মহত্যার সাথে সম্পর্কিত আচরণ যেমন নিরাশা, আত্মহত্যার ব্যাপারে ভাবা অথবা চেষ্টা করা এগুলো শতকরা ১৪ জনের মধ্যে দেখা গিয়েছে।

গবেষকেরা আবিষ্কার করেছেন যে ৪৮ শতাংশের মতো টিনএজার প্রতিদিনে পাঁচ ঘন্টা বা তার অধিক সময় ধরে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে অন্য টিনএজারদের তুলনায় আত্মহত্যাপ্রবণ আচরণ বেশী লক্ষ্য করা যায়।

গবেষকরা জানিয়েছেন, যারা ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বেশী সময় কাটায় তাঁরা তুলনামূলকভাবে অসুখী। অপরদিকে যারা অন্যান্য কাজ যেমন খেলাধুলা, বন্ধুদের সাথে মুখোমুখি কথা বলা, বাড়ির কাজ করা অথবা প্রার্থনা এগুলোর সাথে সম্পৃক্ত তারা বেশী সুখী।

পূর্বে কিছু গবেষণায় কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে অর্থনৈতিক অবস্থা, পড়াশোনার চাপ এবং বাড়ির কাজের চাপ এগুলোর সম্পর্ক খোঁজা হলেও গবেষকেরা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাননি।

গবেষকেরা বাবা-মাকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহারের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ না এনে বরং সময় সীমাবদ্ধ করে দেয়ার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে সন্তানদের অন্যান্য কাজের শারিরিক কাজের দিকে উৎসাহিত করেছেন।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleমানসিক স্বাস্থ্য: চিকিৎসার উপর আস্থা রাখুন
Next articleআঘাত পরবর্তী মানসিক চাপ যৌনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here