আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা, দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সেসবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন ‘প্রতিদিনের চিঠি’ বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আমাদের আজকের প্রশ্ন যিনি পাঠিয়েছেন তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
প্রশ্ন: আচ্ছা স্যার আমার বয়স ১৬। আমি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবো। কিন্তু পড়াশোনার অবস্থা খুবই খারাপ। পড়তে ভালো লাগে না, মনোযোগহীনতায় ভূগি। আর সবসময় অনলাইন গেইম খেলতে মন চায়। ভালো একটা মেডিটেশন বা রিলাক্সেশন টেক দিন স্যার।
আরেকটা সমস্যা হলো গত কয়েকদিন আগে আমার পরিবারের সদস্য মারা যাওয়ার পর আমি খুবই সূস্থভাবে দাফনের যাবতীয় কাজ করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমার সারা শরীর অবশ হয়ে আসলো, শ্বাস-প্রশ্বাস, হাটা চলা সব একেবারে অবশ হয়ে আসছিলো।
এমন মনে হচ্ছিলো যে আমি এখন কোথায় আছি? স্বপ্ন দেখছি না বাস্তবে আছি, এরকম ৩ঘন্টা অব্যাহত থাকে। তারপর আমি কিছুটা সুস্থ হয়েছিলাম। এটা কেনো হয়েছিলো জানাবেন প্লিজ….
উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনি প্রথম অংশে লিখেছেন যে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছেন না এবং আপনি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবেন। এটার জন্য কি ধরণের মেডিটেশন বা রিলাক্সেশন করতে পারেন? সেটা জানতে চেয়েছেন। আর বলছেন যে গেমস খেলেন।
প্রথম অংশের জন্য স্পষ্ট ভাবে আপনাকে জানতে হবে যে এটা আপনার একটা মানসিক সমস্যা এবং সেটা গেমসের উপর এডিক্টেড হয়ে গেছেন। আপনাকে এই এডিক্টেড দূর করার জন্য শুধুমাত্র মেডিটেশন বা রিলাক্সেশন করলে কাজ হবে না। আপনাকে মেডিটেশন বা রিলাক্সেশন সহায়তা করবে কিন্তু টোটাল এই এডিক্টেশন থেকে বের হয়ে আসতে হলে আপনাকে জানতে হবে।
এটার জন্য আপনাকে কিছু ঔষধ খেতে হবে আবার অন্যান্য চিকিৎসাও নিতে হবে। শুধু মাত্র একটা মেডিটেশন বা রিলাক্সেশন দ্বারা এই সমস্যা দূর হবে না। বরং এই সমস্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনাও থাকতে পারে। কারণ তখন এডিকশন ও রিলাক্সেশন দুটো মিলেও আপনার যে কাঙ্খিত কাজ সেটা থেকে আপনি আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে পারেন।
সুতরাং আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে এটা একটা রোগ। এটা বিহ্যাভিওরাল এডিকশন থেকে একটা রোগ। সেই রোগটা থেকে রেব হয়ে আসতে হবে এবং প্রোপারলি চিকিৎসা নিতে হবে। মেডিটেশন বা রিলাক্সেশন সেটাও করতে হবে।
আর আপনার দ্বিতীয় অংশ যেটা সেটা হয়তো বা আমি মনে করবো পরবির্ততে যদি আর কোনো সমস্যা না থাকে এই বিষয়ে। তাহলে এটা নিয়ে আরে চিন্তা করার দরকার নেই।
হয়তো বা সাময়িক ভাবে আপনি কোনো কারণে এনজাইটিতে পরে গেছেন বা আপনি মনে করতে পারেন এটা শরীরের ফিজোওলোজিকাল পরিবর্তন হয়েছিল সেটা আবার ঠিক হয়ে গেছে। তাতে কোনো সমস্যা হয় না। এটা একটা নরমাল বিষয়। কখনো কখনো ভয়ের কারণে এটা হতে পারে। তাই এটা নিয়ে চিন্তা ভাবনার কোন দরকার নেই। বরং প্রথমটার দিকে নজর দিন।
ইতি,
প্রফেসর ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক – মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সেকশন মেম্বার – মাস মিডিয়া এন্ড মেন্টাল হেলথ সেকশন অব ‘ওয়ার্ল্ড সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন’।
কোঅর্ডিনেটর – সাইকিয়াট্রিক সেক্স ক্লিনিক (পিএসসি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সাবেক মেন্টাল স্কিল কনসাল্টেন্ট – বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিম।
সম্পাদক – মনের খবর।