কেন শিশুরা আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে ওঠে এবং কিভাবে তাদের এই ধ্বংসাত্মক মানসিকতা বদলানো যায় সেটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের সবার কাছেই এটি একটি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক এবং অকল্পনীয় বিষয় যে কম বয়সী ছেলেমেয়েরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্যি, দিন দিন অল্প বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ছে এবং প্রতি বছর একটি বেশ বড় সংখ্যার শিশু কিশোর আত্মহত্যা করছে। কেন তাদের মাঝে এ ধরণের মানসিকতা গড়ে উঠছে এবং কি কারণে তারা এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত ঘটাচ্ছে সেটির উত্তর দেওয়া সত্যিই বেশ জটিল। তবে মনস্তাত্ত্বিকদের মতামত এবং বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল থেকে কিছু কারণ নিচে তুলে ধরা হল।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫০ শতাংশ অপ্রাপ্ত বয়স্করা পরিবার সংক্রান্ত জটিলতা, যেমন মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়ার অভাব, অবহেলা, সহিংস আচরণ, অবমাননা বা পারিবারিক মানসিক সমস্যা ও আত্মহত্যার ইতিহাস ইত্যাদির কারণে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। যাদের বংশে এমন আত্মহত্যার মতো উদাহরণ থাকে তাদের অনেকের মাঝেই জেনেটিক ভাবে এই সমস্যা দেখা যায়। তাছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রভাব অনেক বেশি মাত্রায় পড়ে, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধি কালের কিশোর কিশোরীদের মাঝে যখন তাদের মাঝে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন গুলি শুরু হয়। তাছাড়া, অপ্রাপ্ত বয়স্করা মানসিক ভাবে অনেক বেশি অপরিপক্ব থাকায় অনেক ছোট বিষয় গুলিও তাদেরকে অনেক বেশি মাত্রায় প্রভাবিত করতে পারে যেটি হয়তো একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ সহজেই বুঝে ফেলতে পারবে। তাদের মাঝে যুক্তি এবং আবেগের অসামাঞ্জস্যতা অনেক বেশি থাকায় তাদের মাঝে এ ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ ও নেতিবাচক মানসিকতা গড়ে ওঠে এবং আত্মহত্যার মতো দুর্ঘটনা ঘটে। আত্মহত্যা প্রবণতা সৃষ্টির আরেকটি বড় কারণ হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এসব মাধ্যমের অপব্যবহার তাদেরকে বাস্তবতা বর্জিত করে তোলে এবং তারা মানসিক ভাবে অসুস্থ জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে এক সময় আত্মহত্যার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত ঘটায়।
শিশু কিশোরদের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতা কখনোই এক দিনে তৈরি হয়না। এটি বেশ দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া। তাই তাদেরকে আত্মহত্যা থেকে বিরত করতে হলে আত্মহত্যা প্রবণতার লক্ষণ গুলি আগে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। এই সতর্কতামূলক আচরণ গুলির মাঝে অন্যতম হল, একাকী থাকা, এক সময়ের ভালোলাগার বিষয় গুলির প্রতি অনীহা, হঠাৎ করে সামাজিক মেলামেশা এড়িয়ে চলা, অধিকাংশ বিষয়ের প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রদান, মুড সুয়্যিং, নিদ্রাহীনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। সন্তানদের মাঝে এসব বিষয় লক্ষ্য করলে অভিভাবকদের অবশ্যই তাদের প্রতি আরও গুরুত্ব প্রদান করতে হবে এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
আমাদের সম্পর্কগুলিই আমাদের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তাই নিজেদের মধ্যে আত্মিক বন্ধন আরও দৃঢ় করা প্রয়োজন। অভিভাবকদের উচিৎ তাদের সন্তানকে যতটা সম্ভব সময় দেওয়া, তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং তাদের সব রকম মানসিক সমস্যায় তাদের সহায়ক শক্তি হয়ে ওঠা। তাদের সাথে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন যেন আপনার সন্তান আপনাকে ভরসা করতে পারে, আপনার প্রতি আস্থা রাখতে পারে। তাহলে জীবনে যে কোন ধরণের অভিজ্ঞতাই হোক, সেটি অবশ্যই সে আপনার সাথে শেয়ার করবে। আপনাকে সে তার মনের কথা খুলে বলতে পারবে। তাদের সব ধরণের দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনায় আপনাকেই তার আশ্রয়স্থল মনে করবে। এমন সম্পর্ক তৈরি হলে শিশু কিশোরদের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতা অবশ্যই কমবে। শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা হ্রাস করতে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। তারা যদি সচেতন হয় এবং সন্তানদের সব রকম মানসিক সাপোর্ট প্রদান করতে পারে তাহলে শিশু কিশোরদের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতা অবশ্যই হ্রাস পাবে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে