অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার: লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার: লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার হল এমন একটি মানসিক সমস্যা, যখন আপনি স্ট্রেসফুল/চাপমূলক জীবনের ঘটনাগুলো মোকাবেলায় অসুবিধা অনুভব করেন তখনই ঘটতে পারে।

এর মধ্যে প্রিয়জনের মৃত্যু, সম্পর্কের ভাঙ্গন/সমস্যা, কাজ থেকে বরখাস্ত হওয়া ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। আমরা প্রত্যেকেই স্ট্রেসের মুখোমুখি হই, অনেক সময় আমাদের নির্দিষ্ট চাপ সহ্য করতে সমস্যা হয়।

চাপযুক্ত ঘটনার সাথে সামঞ্জস্য করতে অক্ষমতা এক বা একাধিক মারাত্মক মানসিক লক্ষণ এবং এমনকি শারীরিক লক্ষণ গুলোর কারণ হতে পারে। অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশু উভয়কেই প্রভাবিত করতে পারে।

আপনি অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার থেরাপির মাধ্যমে দ্রুত এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন। অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার সাধারণত ছয় মাসের বেশি স্থায়ী হয় না, যদি না অবিরত চাপ থাকে।

লক্ষণ/Symptoms

লক্ষণগুলো অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডারের ধরণের উপর নির্ভর করে এবং ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পৃথক হতে পারে। আপনি একটি স্ট্রেসাল ইভেন্টের প্রতিক্রিয়া হিসাবে সাধারণত প্রত্যাশার চেয়ে বেশি চাপ অনুভব করেন এবং স্ট্রেসটি আপনার জীবনে উল্লেখযোগ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।

অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার আপনার নিজের বিশ্বাস সম্পর্কে আপনি কীভাবে অনুভব করেন এবং চিন্তা করেন তা প্রভাবিত করে এবং আপনার ক্রিয়া বা আচরণকেও প্রভাবিত করতে পারে।

যেমন- দুঃখ বোধ করা, নিরাশ হওয়া বা আপনি যে জিনিসগুলো উপভোগ করেছেন তা উপভোগ করছেন না, প্রায়শই কান্না বা ক্রন্দন করা, উদ্বিগ্ন, চাপযুক্ত উদ্বেগ বা চাপ অনুভূতি, ঘুমের সমস্যা, ক্ষুধা অভাব, মনোনিবেশ বা মনোযোগ করতে অসুবিধা, দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত, সামাজিক পরিবেশ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা, কাজ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি এড়ানো, আত্মহত্যা চিন্তা বা আত্মঘাতী চিন্তাভাবনা বা আচরণ।

অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলো চাপমূলক ঘটনার বা স্ট্রেসাল ইভেন্টের তিন মাসের মধ্যে শুরু হয় এবং চাপমূলক ঘটনা বা স্ট্রেসাল ইভেন্টটি শেষ হওয়ার পরে ৬ মাসের বেশি সময় ধরে থাকে না। তবে অবিচ্ছিন্ন বা দীর্ঘস্থায়ী অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডারের লক্ষণ ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষত চাপ চলমান, যেমন- বেকারত্ব, পারিবাহিক দ্বন্দ্ব, সম্পর্কের সমস্যা, দাম্পত্যকলহ ইত্যাদি।

কখন Psychologist/Psychiatrist সাথে দেখা করতে হবে

অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলো ভাল হয়ে যায় যখন চাপ বা চাপমূলক পরিস্থিতি কমে যায়। তবে কখনও কখনও মানসিক চাপ আপনার জীবনের অংশ হয়ে যায়। বা একটি নতুন চাপযুক্ত পরিস্থিতি সামনে আসে এবং আপনি আবার একই সংবেদনশীল লড়াইয়ের মুখোমুখি হন।

আপনি যদি লড়াই চালিয়ে যান এবং আপনার যদি প্রতিদিন সমস্যা হতে থাকে তবে আপনার সাইকোলজিস্টের সাথে কথা বলুন। আপনি চাপযুক্ত ইভেন্টগুলোর সাথে আরও ভাল মোকাবেলা করতে এবং জীবন সম্পর্কে আরও ভাল বোধ করার জন্য চিকিৎসা নিতে পারেন। আপনার সন্তানের আচরণ সম্পর্কে যদি আপনার উদ্বেগ থাকে তবে শিশু বিশেষজ্ঞের বা শিশু মনোবিজ্ঞানীর সাথে কথা বলুন।

ঝুঁকির কারণ

কিছু জিনিস আপনাকে অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। মানসিক চাপের ঘটনাগুলো ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয়ই আপনাকে অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

উদাহরণ স্বরূপ- বিবাহ বা বৈবাহিক সমস্যা, সম্পর্ক বা আন্তঃব্যক্তিক সমস্যা ইত্যাদি, পরিস্থিতিতে পরিবর্তন, যেমন- অবসর গ্রহণ, বাচ্চা হওয়া বা স্কুলে যাওয়া, প্রতিকূল পরিস্থিতি যেমন- চাকরি হারানো, প্রিয়জনের ক্ষতি হওয়া বা আর্থিক সমস্যা থাকা ইত্যাদি, স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে সমস্যা, শারীরিক সমস্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো প্রাণঘাতী অভিজ্ঞতা, চলমান চাপ।

আপনার জীবনের অভিজ্ঞতা

আপনি কীভাবে মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে পারেন তা জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ- আপনার অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে যদি শৈশবকালে উল্লেখযোগ্য চাপ অভিজ্ঞতা থাকে, বাড়ির অন্যান্যদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আছে বা একই সাথে জীবনের বেশ কয়েকটি কঠিন পরিস্থিতি ঘটছে ইত্যাদি।

জটিলতা

যদি অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার সমাধান না করেন তবে তা আরও গুরুতর মানসিক সমস্যা যেমন- উদ্বেগজনিত সমস্যা, হতাশা বা মাদক, অপব্যবহারের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

চিকিৎসা

মেডিসিন: মেডিসিন খেলে কিন্তু চাপমূলক পরিস্থিতি কেটে যাবে না বা ঘটনা পরিবর্তন হবে না। তবে কিছু ওষুধ হতাশা, আবেগ প্রবণতা, আগ্রাসন বা উদ্বেগের মতো লক্ষণগুলো বা সহজাত সমস্যাগুলোতে সহায়তা করতে পারে।

ওষুধের মধ্যে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, অ্যান্টিসাইকোটিকস বা mood-stabilizing ওষুধ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। মেডিসিনের জন্য মনোরোগ (Psychiatrist) বিশেষজ্ঞ সাথে পরামর্শ করতে হবে।

প্রতিরোধ

অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার রোধ করার কোনও গ্যারান্টিযুক্ত উপায় নেই। তবে স্বাস্থ্যকর মোকাবিলার দক্ষতা বিকাশ এবং স্থিতিস্থাপক হতে শেখা উচ্চ চাপের সময় আপনাকে সহায়তা করতে পারে। যদি আপনি জানেন যে একটি চাপজনক পরিস্থিতি চলে আসছে, যেমন- অবসর। তবে আপনার অভ্যন্তরীণ শক্তিকে আহ্বান জানান, আপনার স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো বাড়িয়ে নিন এবং আপনার সামাজিক সমর্থনগুলোকে আগাম সমাবেশ করুন।

নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন যে এটি সাধারণত ক্ষনস্থায়ী এবং আপনি এটি মোকাবেলা করতে চান ও এর মধ্যে দিয়ে যেতে চান। আপনার স্ট্রেস পরিচালনা করার স্বাস্থ্যকর উপায়গুলো পর্যালোচনা করতে আপনার সাইকোলজিস্ট বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এর সাথে দেখা করুন।

আপনার স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে পারেন যেভাবে

আপনাকে সমর্থন করার জন্য লোকের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক বিকাশ করা, কঠিন পরিস্থিতিতে ইতিবাচক বা রসবোধের সন্ধান করা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ভাল আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি উপায়ে আপনি আপনার স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে পারেন।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleসফলতা পেতে মনস্তাত্ত্বিক মুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম
Next articleযৌন মিলনই তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here