অজানা মন

আগেই বলে নেই আমার আজকের লেখাটার মধ্যে বিজ্ঞানের অংশ বেশ অল্পই কেউ এটাকে পুরোপুরি বিজ্ঞান ভেবে নিলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে এই লেখাটাতে আমার ব্যক্তিগত মতামতও নিহিত আছে
কিশোর বয়সে মনে হতো আর একজনকে অনুভব করাই বুঝি মন; অনুভব করতে পারলে ভালো লাগতো আর না করতে পারলে খারাপ লাগতো। অনুভবই যখন ভাল আর খারাপের কারণ হতে পারে সুতরাং সেটাই মন হতে পারে। সময়ের সাথে সাথে অনেক ধারণা বদলেছে, অনেক কিছুই আর আগের মতো নেই। আমার মনের ধারণাও নাই আগের মতো। বারেবারে পরিবর্তন হয়েছে। এখনও ক্রমাগতভাবে পরিবর্তিত হয়ে চলেছে।
সাহিত্য পড়ার সময় একটা সময় মনে হতো নিজের সব স্বকীয়তাটাই মন, যেখানে অন্য কেউ বুঝি পুরোপুরি ঢুকতে পারে না। একেবারেই নিজের বলে কিছু না কিছু থাকে। যা দেখা যায় তার সবটুকুই ঠিক না আবার যা ঠিক তা সব দেখা যায় না।
একজন ডাক্তার হিসাবে বারবার খোজার চেষ্টা করেছি মন বলে কোনো অঙ্গ আছে কিনা, থাকলে সেটা শরীরের কোথায় থাকে ডাক্তারি বিদ্যায় শরীর ব্যাবচ্ছেদ করার সময় খুঁজেছি কোথায় থাকে মন; ছুঁয়ে দেখার মত কোনো অঙ্গ আছে কিনা; আমি পাইনি, আছে কিনা আজও জানিনা
মনোরোগবিদ্যা পড়তে এসেও একই প্রশ্ন আমার দেমাগে ঘুরে, মনটা আসলে কি? এখানে এসে এখন পর্যন্ত যতটুকু বুঝতে পেরেছি, মন হলো কিছু রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়া মাত্র। এটা নিয়ে আগেও আমার একটা লেখায় উল্লেখ করেছি “জীবনের রসায়ন” (https://www.monerkhabor.com/featured/2016/07/31/6965) , মন ও রসায়নের ক্রিয়া। এখানেও প্রশ্ন আসে আমার, আসলেই কি রাসায়নিক ক্রিয়াই মন?
আমরা যখন রোগীদের জিজ্ঞাসা করি আপনার মনটা কেমন? বেশ বড় একটা অংশ রোগীদের আমাদের আবার ব্যাখ্যা করে বলতে হয় মনটা আসলে কি এবং আমি তার কাছ থেকে কি জানতে চাচ্ছি। আবার অনেক রোগীরা এসে বলেন আমার মন ভাল নেই। অনেকে বলেন মনের মধ্যে ফাঁকা ফাঁকা লাগে। ভাবতে থাকি মনটাই বা কি আর ফাঁকাই বা কোথায়?
আমার পরিচিত স্কুল বন্ধুদের কাছে যখন বলেছি মন ভাল নাই অনেকেই বলেছে মন আবার কি? সময়ের সাথে সাথে বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে গেছে মানুষের আচার আচরণ মাপা যায় কিন্তু আসল মনটাকে কি আসলেই মাপা যায়?   
বিজ্ঞান অনেক আগে থেকেই বলেছে মন বলে কিছু একটা আছে যেটা আমাদের ভাল থাকা না থাকার ওপর ভূমিকা রাখে। কেও বলেন দেহ ও মন আলাদা, কেও বলেন দেহ ও মনের দ্বিমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান। একটা দিয়ে আর একটা প্রভাবিত হয়। শরীর খারাপ হলে মন খারাপ হয় বা হতে পারে; আবার মন খারাপ হলে শরীর খারাপ হতে পারে। গবেষণায়ও তাই প্রমাণিত বলে দেখা যায়। সর্বশেষ ভাবে এখন বিজ্ঞান বলে দেহ ও মন একটা আর একটার অংশ মাত্র আলাদা কিছু নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্যের সংজ্ঞায় মনের অঙ্গটিকে যুক্ত করেছে এবং এটা পরিস্কার যে স্বাস্থ্য বলতে মনের স্বাস্থ্যও বুঝায়।
আমাদের দেশে রাজধানীর একটি হৃদরোগ হাসপাতালে একটা জরিপ চালানো হয়েছিল এবং জানার চেষ্টা করা হয়েছিল মন বলে কোনো স্থায়ী অঙ্গ আছে কিনা থাকলে কোথায় সেটা থাকে? সেই জরিপে অনেক একটা অংশ মতামত দিয়েছেন মন আসলে আমাদের হৃদপিণ্ড । আমি অনেক খুঁজেছি হৃদপিণ্ডের মাঝে এমন যায়গা পাইনি।
সময়, বয়স, জ্ঞান, পরিস্থিতির সাথে সাথে মানুষের অনেক কিছু বদলায়; আমারও বদল হয়ছে, বদল হয়েছে আমার মনের ধারণা। কিন্তু এটা আমি নিশ্চিত যে মন কি সেটা আমি আজও জানি না এবং জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আমি এটা বিশ্বাস করি ও আশ্চর্য হই মন বিধাতার এক অদ্ভুত সৃষ্টি।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।
 

Previous articleমাদকাসক্তি: নিরাময় পদ্ধতি বর্ণনা ১
Next articleআপনি কিছুটা উদ্বেগপ্রবণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here