হজের সময় ডায়াবেটিক এবং অন্য রোগীদের করণীয়
– অধ্যাপকডা. মো. ফরিদউদ্দিন
হজ পালন করা সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহ্ যাকে ডাক দেন সেই হজে যেতে পারে। কবুল হাজী শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যায়। হজ পালনের জন্য শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা একান্ত প্রয়োজন। হজের প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতা শ্রমসাধ্য ব্যাপার। পরিবর্তিত পরিস্থিতি জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ধর্মীয় আবেগ, অতিরিক্ত পরিশ্রম, আবহাওয়ার তারতম্য সবমিলে হাজিরা, বিশেষকরে ডায়াবেটিক রোগীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে পারেন। পানিশূণ্যতা, সর্দিজ্বর, কাশি, শরীর ব্যথা, ডায়রিয়া এবং সুগার কম বেশী হতে পারে। বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণ রোগ সম্পর্কে (ডায়রিয়া, সর্দি, মাথাব্যথা, বমি, পেটে গ্যাস, আমাশয় এবং বুকে ও প্রস্রাবে ইনফেকশন) এবং এর নিরাময়ের জন্য ঔষধ সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নিয়ে এবং অন্যান্য রোগীরা তাদের ডাক্তারের সঙ্গে রোগ সম্পর্কে আগে থেকে পরামর্শ করে প্রস্তুতি গ্রহণ করে এই জটিলতা থেকে রেহাই পেতে পারেন।
রোগীদের হজ পূর্ব প্রস্তুতি :
- রমজানের আগে থেকে মুয়াল্লিম এবং ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে হজের প্রস্তুতি নিন।
- প্রতিদিন আধা ঘন্টা হাঁটার অভ্যাস করুন।
- ডায়াবেটিস এবং ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখুন। অন্যান্য রোগের চিকিৎসা নিন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সুগার এবং ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে হাতে কলমে শিক্ষা নিন।
- হাইপোগ্লাইসেমিয়া এবং সিক ডে ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে জেনে নিন ।
- প্রয়োজনীয় ঔষধ, ইনসুলিন, সিরিঞ্জ, গ্লুকোমিটার, তুলা, ডিপস্টিক প্রভৃতি আলাদা প্লাস্টিকের খালি বাক্সে নিন।
- সবসময় প্রেসক্রিপশন সাথে রাখবেন, ফটোকপি অন্য ব্যাগে রাখবেন।
- গরম জায়গায় ইনসুলিন পানিতে রাখতে পারবেন অথবা সরবরাহকারকদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারবেন।
হজের সময় রোগীদের করণীয় :
- সব সময় কিছু খাবার (যেমন- গ্লুকোজ, চিনি, বিস্কুট, খেজুর) সঙ্গে রাখবেন।
- হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে কিভাবে চিকিৎসা করতে হবে তা সাথীদেরকে শিখাবেন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি (জমজমের) পান করবেন।
- যারা ২-৩ বার ইনসুলিন নিয়ে থাকেন তারা ইহরামের পূর্বেই গ্লুকোমিটার দিয়ে গ্লুকোজ এবং ডিপস্টিক দিয়ে প্রশ্রাবে কিটোন দেখে নিতে পারেন।
- ইহরামের দিনগুলিতে প্রশ্রাবের সুগার দেখে ইনসুলিন ও ডায়াবেটিসের ঔষধ ঠিক করতে পারবেন।
- তাওয়াফের আগে, সা’ঈ এর আগে, কংকর (পাথর) নিক্ষেপের আগে কুরবানী এবং অপরাপর অতিরিক্ত পরিশ্রমের জায়গাতে আগে কিছু খেয়ে নেয়া ভালো।
- ঐসব পরিশ্রমের দিনগুলিতে ইনসুলিন ২৫% কম নেয়া এবং সালফোনাইল ইউরিয়া গ্রুপের ঔষধ ২৫% কম খাওয়া ভালো।
- অতিরিক্ত হাঁটা-হাঁটির সময় পায়ের যত্ন নিবেন।
- জমজমের স্বাভাবিক পানি প্রচুর পরিমাণে পান করবেন।
- যে-কোন জরুরী অবস্থায় হজ মেডিকেল টিমের শরণাপন্ন হবেন।
লেখক : অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন,
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।
প্রেসিডেন্ট, অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল এন্ড্রোক্রাইনোলজি অ্যান্ড ডায়াবেটোলজিস্ট অব বাংলাদেশ (এসিইডিবি)
অনলাইন ও অফলাইনে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে ভিজিট করুন- www.mk4c.com এবং মনের খবর ম্যাগাজিনের প্রিন্ট পিডিএফ পেতে এখানে- ক্লিক করুন।