পরিবার যেভাবে সদস্যদের মানসিক রোগ শনাক্ত করবে

0
46

কারো মধ্যে আচরণের কমবেশি অস্বাভাবিকতা থাকলেই তাকে মানসিক রোগী বলা যাবে না। যখন কোন ব্যক্তির আচরণ, চিন্তাভাবনা ও আবেগীয় প্রকাশে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় এবং এই পরিবর্তনে যদি তার স্বাভাবিক বা প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হতে থাকে; এমনকি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে, তখনি বুঝতে হবে সে হয়তো মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সঠিক সময়ে চিকিৎসার পাশাপাশি তাঁর পরিবার ও কাছের মানুষের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে সঠিক যত্ন এবং চিকিত্সার মাধ্যমে মানসিক রোগী সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। আর এজন্য সবার আগে প্রয়োজন রোগীকে শনাক্ত করা এবং সেটা পরিবারের সদস্যারাই সঠিকভাবে করতে পারেন।

পরিবারে কেউ মানসিক রোগাক্রান্ত কিনা তা কিভাবে শনাক্ত করবেন আসুন সে বিষয়ে জেনে নেই-

  • যদি পরিবারের কেউ কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে এমন কার্যকলাপগুলি করা বন্ধ করে দেয় যেগুলিতে সে নিয়মিত অংশগ্রহণ করত; যেমন বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো বা ক্লাসে যাওয়া এবং বাসার, অফিসের বা পেশাগত কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়া বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি পরিবর্তন দেখা গেলে বিষয়টিকে গুরুত্ত দিতে হবে৷
  • ব্যক্তি সাধারণ কোন সমস্যা বা পরিস্থিতি সম্পর্কে অতিরিক্ত উদ্বেগ অনুভব করলে, দৈনন্দিন চাপ এবং স্ট্রেসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তার মধ্যে অক্ষমতা লক্ষ্য করা গেলে।
  • পরিবারে কারোও মধ্যে অনেকদিন ধরে নিজেকে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে রাখা, কারো সাথে কথা বলতে না চাওয়া, যেকোন সামাজিক অনুষ্ঠান বা সামাজিক সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা ইত্যাদি পরিবর্তন দেখা গেলে।
  • আবেগ ও অনুভূতির দ্রুত পরিবর্তন অর্থাৎ মেজাজের নাটকীয় পরিবর্তনে; যেমন- সামান্য বিষয়ে বা কোন কারণ ছাড়াই হঠাত অতিরিক্ত মন খারাপ, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত রাগ বা ভাংচুর করলে।
  • যখন কারো স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে বা সামাজিক কার্যকলাপে অস্বাভাবিক হ্রাস ঘটে, যেমন স্কুলে ব্যর্থ হওয়া, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করা, পরিচিত বা সহজ কাজগুলি সম্পাদন করতে অসুবিধা অর্থাৎ সবকিছুতেই পুর্বের চেয়ে পিছিয়ে পড়লে।
  • মানষিক রোগে আক্রান্ত হলে ব্যক্তির খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি খাবার গ্রহণ করতে পারেন। তাই কোন ব্যক্তির খাবার গ্রহণে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে।
  • ঘুমের অভ্যাসের ক্ষেত্রে পরিবর্তন হলে; অর্থাৎ অতিরিক্ত ঘুম বা হাইপারসোমনিয়া এবং অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া দেখা গেলে।
  • যদি কারও ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়; অর্থাৎ স্মৃতি, বিভ্রান্তি এবং জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াকরণের সমস্যা হলে।
  • সিদ্ধান্তহীনতা বা আগের তুলনায় মনোযোগের ঘাটতি দেখা দিলে অর্থাৎ কোনকিছুতে মনোযোগ দিতে, জিনিসগুলি মনে রাখতে বা যৌক্তিক চিন্তাভাবনা বজায় রাখতে অসুবিধার সৃষ্টি হলে।
  • কারোও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি হলে; নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা, সবকিছুতে নিজেকে দায়ী মনে হওয়া ইত্যাদি সমস্যার ক্ষেত্রে।
  • মানসিক রোগ হলে বেশকিছু শারীরিক প্রভাব যেমন মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, শ্বাসে সমস্যা, দুর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে যদি দেখা যায় যে, তার আসলে শারীরিক কোন সমস্যা নেই, তারপরেও তিনি এরকম সমস্যায় ভুগছেন। তখন এটা মানসিক কারণে হতে পারে বলে শনাক্ত করা যায়।
  • নিজের প্রতি যত্ন না নেয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকা; এমনকি গোসল বা দাঁত মাজার মতো নিয়মিত প্রাত্যহিক কাজগুলি করা বন্ধ করে দিলে।
  • উদ্ভট বা অযৌক্তিক আচরণ বা চিন্তাভাবনা করা, অকারণে অন্যদের সন্দেহ করা, গায়েবী আওয়াজ বা কথা শোনা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলে।

মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো প্রাথমিকভাবে ধরা পড়লে এবং সময়মতো চিকিতস্যা নিলে সহজেই এ ভয়াবহ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

তাই উপরোক্ত লক্ষণগুলো কারো মধ্যে দেখা গেলে পরিবারের সদস্যদের তা সনাক্ত করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।

/এসএস/মনেরখবর/

Previous articleযৌন সম্পর্কে চিন্তারোগের প্রভাব এবং প্যানিক ডিজঅর্ডার
Next articleপ্রবাসে একাকীত্ব দূর করতে যা করবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here