আবু রায়হান ইফাত, মনের খবর : বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ ‘মানসিক’ নির্যাতনের শিকার। সামাজিক লজ্জার ভয়ে অনেকেই এসব বিষয় প্রকাশ করতে চান না নিজেদের পরিচালিত এক গবেষণার ভিত্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন।
সংগঠনটি বলছে, সামাজিক লজ্জার ভয়ে পরিচয় প্রকাশ করেন না অভিযোগকারীরা। বিবাহিত অনেক পুরুষের নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়ে একমত মানবাধিকারকর্মীরাও। তারা বলছেন, পুরুষদের নির্যাতিত হওয়ার খবর তাদের কাছে আসে। তবে যেই নির্যাতিত হোক তার আইনি সরক্ষার দাবি জানান তারা।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শেখ খাইরুল আলম জানান, ‘নির্যাতিত পুরুষদের’ পরামর্শ ও আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা দিতে এই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রতিদিন যে ফোন আসছে তাতে আমরা দেখেছি, নীরবে চোখের জল ফেলছেন অনেক পরুষ। লজ্জায় তারা নির্যাতনের কথা বলতে পারছেন না।
খাইরুল আলম বলেন, ‘কোনো নারী নির্যাতিত হলে তিনি তো বিচার চাইতে পারেন। অনেক সংগঠন তার পাশে দাঁড়ায়। নির্যাতিত পুরুষদের সহযোগিতার জন্য আমরা এ সংগঠনটি করেছি।’
নিজেও এমন নির্যাতনের শিকার দাবি করে আলম বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার হয়ে আমি অনেক মানবাধিকার সংগঠনের কাছে গিয়েছি। তারা কেউই নির্যাতিত পুরুষদের পাশে দাঁড়াতে রাজি হয়নি। অনেকটা বাধ্য হয়েই আমরা এই সংগঠন করেছি। এখন আমরা নির্যাতনের শিকার পুরুষকে আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা করছি। তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।
- জাতীয় সংসদে পুরুষ নির্যাতনবিরোধী আইন করার জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছি। এই আইনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রচারণাও চালাচ্ছি।
সংগঠনটির গবেষণার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রতিদিন যে অভিযোগ আসে তার ভিত্তিতেই আমরা গবেষণাটি করেছি। তবে সমস্যা হলো, কেউই লিখিত অভিযোগ করতে চান না। ফলে আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোন দলিলাদি নেই।’
সাম্প্রতিক সময়ের উদাহরণ দিয়ে আলম বলেন, ‘গত কিছুদিন আগে ঢাকার মিরপুর থেকে একজন ফোন করে নির্যাতনের অভিযোগ করছেন। তিনি ফোন করে কাঁদছিলেন। লজ্জায় নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি। অধিকাংশ পরুষের ক্ষেত্রেই একই চিত্র। নীরবে চোখের জল ফেলছে, প্রতিকার চাইতে পারছে না।’
সংগঠনটির দাবি বিদেশ থেকে ফোন করেও অনেকে তাদের কাছে নির্যাতনের অভিযোগ করছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী ফারুক সাজেদের মতে, বাংলাদেশে পুরুষদের উপর নির্যাতন, বৈষম্যের ব্যাপারটি এখন বিরাট সামাজিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশে সবার জন্য অধিকার আদায়ের সংগঠন আছে। যেমন নারীদের জন্য, শিশুদের জন্য, তৃতীয় লিঙ্গের জন্য, এমনকি প্রাণী অধিকার রক্ষার জন্যও আছে। কিন্তু পুরুষদের জন্য কোনো প্লাটফর্ম নেই। বাংলাদেশে পুরুষ এখন এতটাই ভালনারেবল যে তার নামে একটি মামলা দিলে, একটা অভিযোগ করলে, সেটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের কোনো ব্যাপার এখন আর নেই এখানে।
বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইম্যান এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সানজীদা আখতার বলেন, ‘আমাদের সমাজে পুরুষ একই সঙ্গে কিন্তু নির্যাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রেণিভেদে তারা নির্যাতিত হলেও হতে পারে।’
তিনি বলেন ‘গত বছর আমাদের এখানে (বাংলাদেশে) ছোট পরিসরে পুরুষ দিবস উদযাপিত হয়েছে। পুরুষ নির্যাতন নিয়ে আমরা এখনো কোনো গবেষণা বা পরিসংখ্যান পাইনি। পুরুষরা যত বেশি পুরুষ হিসেবে নির্যাতিত হয়ে থাকেন তার চেয়ে অনেক বেশি শ্রেণী, অবস্থান ও আর্থ-সামাজিক দূর্বল অবস্থানের কারণে নির্যাতিত হন। একই কারণে নারীও নির্যাতিত হন। আমি মনে করি সব নির্যাতনেরই আইনী সুরক্ষা থাকা প্রয়োজন।’
তার মতে, পুরুষ দিবসকে তাৎপর্যপূর্ণ করতে চাইলে সমাজে পরুষকে যেভাবে তৈরি করা হয় সেই জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে।
পুরুষ নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে একমত পোষণ করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী শিপা হাফিজা। নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে হাফিজা বলেন, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকার সময় দেখেছি, অনেক পুরুষ নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। আমার ঘনিষ্ট ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তাও এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার স্ত্রীর অভিযোগের পর গণমাধ্যমে সেটি ফলাওভাবে প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু আদালতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। ততদিনে কিন্তু তার সমাজিক যে ক্ষতি, সেটা হয়ে গেছে।’
তবে তিনি মনে করেন, নারীরা নিজেদের অধিকার রক্ষায় আলাদা দিবস পালন করছে এ কারণে পুরুষদেরও এমন দিবস পালন করতে হবে বিষয়টি এমন হওয়া উচিত নয়। তবে কোনো পুরুষ নির্যাতিত হলে তারও আইনি সুরক্ষা থাকা উচিত, বলে জানান তিনি।
পারিবারিক সংহিংসতা, বংয়স্কদের ওপর পারিবারিক সহিংসতার কারণ ও প্রতিকার, শিশু-কিশোরদের ওপর পারিবারিক সংহিংসতার প্রভাব, যৌনজীবনে পারিবারিক সহিংসতা সহ সহিংসতার নানা দিক নিয়ে সাজানো মাসিক ‘মনের খবর’ জুন ২২’ সংখ্যা সংগ্রহ করতে কল করুন 01797296216 এই নাম্বারে। অথবা মেসেজ করুন ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।
/এসএস