জেনারালাইজড এনজাইটি ডিজঅর্ডার

0
107

মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল

জেনারালাইজড এনজাইটি ডিজঅর্ডার [Generalized Anxiety Disorder] : সহজ বাংলা করলে হয় দুশ্চিন্তা। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক দুশ্চিন্তার মাঝে সীমাবদ্ধ না। তার চেয়ে এক কঠিন সমস্যা কিংবা আরো বেশী। আমরা তাই শাব্দিক অর্থ না খুঁজে বরং জিনিসটা আসলে কী সেটা বোঝার চেষ্টা করবো।

দুশ্চিন্তায় পড়িনি, এমন কেউ আমাদের মাঝে নেই। হোক সেটা এডমিশন টেস্ট, কিংবা প্রথম প্রেমপত্র দিতে গিয়ে। কিন্তু সেগুলো একটা বিশেষ ঘটনাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এ ধরণের দুশ্চিন্তা আমাদেরকে আরো এলার্ট করে তোলে, আমরা অনেক বেশী ফোকাস করতে পারি। প্রেম পত্র দেওয়া হয়ে গেলেই সব দুশ্চিন্তা আকাশে উড়ে যায়। আমরা তখন মুক্ত পাখি, আকাশে-বাতাসে উড়ে বেড়াই।

এইটার সাথে এনজাইটি ডিজঅর্ডারের পার্থক্য হল, এতে সাময়িক ভয় কিংবা দুশ্চিন্তার চেয়ে বেশী কিছু থাকে। দেখা যায়, এই অনুভূতিটা দিনের পর দিন আরো জেঁকে বসছে, এবং খারাপ থেকে আরো খারাপ হচ্ছে। এটা মানুষের এক্টিভিটিতে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। তার কাজ, পড়াশোনা, রিলেশনশিপ সব ক্ষেত্রেই নিত্যনতুন ঝামেলা সৃষ্টি হয়। একদম ছোটখাটো ব্যাপারও তখন দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করে।

যেমন: আচ্ছা, আমি কি অনেক খারাপ? সবাই কি আমাকে ঘৃণা করে? আমার কি আরেকটু জোরে সালাম দেওয়া উচিত ছিল? আচ্ছা ও লোকটা কি আমার কথা শুনছে? শুনেও কিছু বলে নাই? কেন বলে নাই? সে কি আমার ওপর রেগে আছে? আমার কি তাকে আবার বলা উচিত? আমার কি তাকে জিজ্ঞেস করা উচিত সে কেমন আছে? আমি রিপ্লাই দিবো? না দিলে কি সে রাগ করবে? রিপ্লাই দিলে কি দিবো? কেন দিবো? কীভাবে দিবো? কখন দিবো?

এনজাইটি কী? এনজাইটি বলতে কয়েক ধরণের সমস্যা বোঝায় :

(১) ফোবিয়া : কোনো বিশেষ ঘটনা বা পরিস্থিতি সম্পর্কে ভীতি কাজ করা। যেমন, অনেকের এলিভেটরে ঢুকলে মনে হয় তাকে চারপাশ থেকে চেপে ধরা হচ্ছে। কিংবা অনেকের উচ্চতা ভীতি আছে। একইভাবে অনেকের পোকামাকড় সহ আরো অনেককিছুর প্রতি ভীতি কাজ করে।

(২) প্যানিক এটাক : এইটা এনজাইটির প্রকট পর্যায়। যেমন দেখা যায়, সব ঠিকভাবে চলেছে, সে হাসি-খুশি সবার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, একেবারে হঠাত করেই তার প্রবল ভীতি কিংবা ডিসকমফোর্ট শুরু হয়।

৩) পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার : এইটা সাধারণত কোনো দুর্ঘটনার পরে হয়ে থাকে। এই স্মৃতি মন থেকে মুছে যায় না। সবসময় চোখের সামনে দৃশ্যটা ভাসতে থাকে, বেশী পরিমাণে দুঃস্বপ্ন আসতে শুরু করে।

(৪) অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার : একই কাজ কিংবা একই চিন্তা বারবার করতে থাকা। বারবার বললে ঠিক বোঝানো হয় না। বলা যায় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, সারাদিন-সারারাত।

(৫) জেনারালাইজড এনজাইটি ডিজঅর্ডার : জীবনের সার্বিক ব্যাপারগুলো (কাজ, পড়াশোনা, রিলেশনশিপ ইত্যাদি) নিয়ে অত্যধিক [অনেক ক্ষেত্রে অকারণ] দুশ্চিন্তা।

এই লেখায় আমরা মূলত জেনারালাইজড এনজাইটি ডিজঅর্ডার নিয়ে কথা বলবো।

লক্ষণসমূহ :

এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো। যে লক্ষণগুলো বলা হবে, সেগুলো থাকার অর্থ এই নয় যে কেউ জেনারালাইজড এনজাইটি ডিজঅর্ডারে ভুগছে। বরং এর মানে হল “হয়তো সে জেনারালাইজড এনজাইটি ডিজঅর্ডারে ভুগতে পারে। তাকে চিকিৎসক দেখাতে হবে।” নিচের বেশ কিছু লক্ষণ দৈনন্দিন জীবনে এমনিতেই দেখা যায়। এগুলো থাকলে GAD হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ছয় মাস বা তার বেশী সময় ধরে :
এক বা একাধিক ঘটনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগা
দুশ্চিনা থামাতে না পারা (অনেকের ধারণা কেউ চাইলেই দুশ্চিন্তা থামাতে পারে। এজন্যে একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়, “আরে চিন্তা করিও না! তুমি চিন্তা করে করেই সব এমন করে ফেলো!” যারা ডিজঅর্ডারে ভোগে, তাদের জন্য এটা থামানো সম্ভব না। )
দৈনন্দিন কার্যক্রমে কি প্রভাব বিস্তার করছে? [পড়াশোনা, অফিসের কাজ, হ্যাংআউট]
উপরের প্রশ্নগুলির উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে সাথে কি নিচের এক বা একাধিক ব্যাপার ঘটছে?

১.অস্থিরতা
২.খুব সহজেই টায়ার্ড হয়ে যাওয়া
৩.মনোযোগ দিতে না পারা
৪.অল্পতেই বিরক্ত হয়ে যাওয়া
৫.পেশীতে সমস্যা [যেমন, পিঠ কিংবা ঘাড়ে ব্যাথা ]
৬.ঘুমাতে সমস্যা [ ঘুমাতে না পারা, কিংবা বার বার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া ]
৭.Lightheadedness
৮.হাতের তালু ঘেমে যাওয়া
৯.অকারণে ভীতি
১০.সাহায্য নেওয়ার অনিচ্ছা
১১.ধংসাত্বক চিন্তাভাবনা
১২.পার্ফেকশন নিয়ে খুব বেশী মাথা ঘামানো
১৩.এনজাইটি শুরু হলে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া

এনজাইটি সৃষ্টি করে এমন বিষয় বা ঘটনা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা। এটা বিশেষভাবে ক্ষতিকর। কারণ অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, সে নিজেকে তার কাছের মানুষজন, কিংবা কাজকর্ম থেকে দূরে সরিয়ে ফেলছে। কারণ, কিছু একটা ঠিকভাবে না হলে সে এনজাইটিতে ভুগবে! যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে হয়তো জেনারালাইজড এনজাইটি ডিজঅর্ডার হতে পারে।

এছাড়া এনজাইটি ডিজঅর্ডারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে আরো কিছু ডিজঅর্ডার যেমন, ডিপ্রেশন, সোশ্যাল ফোবিয়া (সোশ্যাল সিচুয়েশনগুলা এড়িয়ে যাওয়া)। এছাড়া মাথা ব্যাথা, Bowel complaint-এগুলোও প্রায়ই দেখা যায়।

যদি মনে হয়ে থাকে যে, অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে, তাহলে তাকে বুঝতে হবে কাউন্সেলিং কিংবা সাইকিয়াট্রিস্টের সাহায্য দরকার। এখানে ভয় বা লজ্জার কিছুই নেই।

চিকিৎসা:

১. মেডিসিন (By Psychiatrist)
২. সাইকোথেরাপি (cognitive behavior therapy)
৩. Relaxation therapy

লেখক : মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল
এমফিল গবেষক (পর্ব-২)
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এই ক্যাটাগরির অন্যান্য লেখা পড়তে ক্লিক করুন এখানে :

/এসএস/মনেরখবর/

Previous articleবিএপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ২০ ডিসেম্বর, সভাপতি-সম্পাদক আজিজুল-তারিকুল
Next articleওয়ার্ল্ড সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের আঞ্চলিক কংগ্রেসে প্রবন্ধ আহ্বান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here