আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথোপকথন শুরু করা কঠিন বলে মনে হতে পারে, কারণ ভুল বোঝার বা ভুলভাবে উপস্থাপন করার ভয়ে আমরা নিরব থাকতে পছন্দ করি।
উপরন্তু, পিতামাতারা তাদের নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি তাদের সন্তানদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চান কারণ এটিকে ‘বয়স উপযুক্ত নয়’ হিসাবে ভাবেন। অতবা পিতামাতার দূর্বলতা পরিবারের গতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর হবে বলে মনে হতে পারে।
কিন্তু শিশুরা সাধারণত অধিকতর অনুসন্ধিৎসু মনের হয়ে থাকে। এবং তারা যা প্রত্যক্ষ করে সেটা তাদের মস্তিস্কে গেঁথে যায়। যা পরবর্তীতে তাদের ব্যক্তিজীবনে প্রভাব ফেলে। এজন্য পিতামাতার উচিত তাদের কোনো সমস্যা থাকলে সন্তানদের সাথে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোলামেলা আলাপ করা। ফলস্বরূপ, ভবিষ্যতে তাদের সন্তানদের জন্য তা বুঝতে সহজ হবে।
আরো পড়ুন
অল্পতে রেগে যায়, নিজেকে অবহেলিত ভাবে
করোনা পরবর্তী সময় : শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যে নজর রাখা জরুরী
মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা গত এক দশকে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মানুষ এখন খোলামেলা এবং কঠিন অনুভূতি সম্পর্কে কথা বলার গুরুত্ব জানে। তবে এটি সবসময় সহজ হয় না।
ক্রমবর্ধমান গ্রহণযোগ্যতা সত্ত্বেও অনেকেই আছেন যারা নীরব থাকেন। তারা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা কথা বলার ব্যাপারে লজ্জিত হওয়া নিয়ে চিন্তিত থাকেন। পিতামাতা সন্তানদের সাথে এ ব্যাপারে আরো বেশি ভয়ে থাকেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘মেন্টাল হেলথ টুডে’র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কিছু উপায়। কীভাবে পিতামাতা তাদের সমস্যা নিয়ে সন্তানদের সাথে আলাপ করবে।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে শিশুদের সাথে কথা বলা
১. সৎ হোন
যতটা সম্ভব সৎ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ, সহজবোধ্য ভাষা ব্যবহার করা। কোনো কিছু না লুকিয়ে বা মিথ্যা না বলে সহজভাবে আলাপ করার চেষ্টা করতে হবে। আপনার শিশুকেও কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। সে কী বলতে চায় তা শুনতে হবে। কিছু জিজ্ঞেস করলে তার সঠিক উত্তর দিতে হবে।
২. আগাম প্রস্তুতি
আগে থেকেই প্রস্তুতি নিন আপনি কী বলতে চান। যা বলবেন তা ভেবে চিন্তে বলুন। খোলামেলা আলাপ করুন। ধীরে সুস্থে বুঝিয়ে বলুন। যাতে করে আপনার শিশু সন্তান বিষয়টাকে সহজভাবে নিতে পারে। তার মনে কোনোভাবেই আঘাত করা যাবে না। এজন্য যা বলবেন আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিতে হবে। প্রয়োজনে নিজে নিজে অনুশীলন করে নেয়া যেতে পারে।
৩. তাদের আশ্বস্ত করুন
শিশুরা স্বভাবতই অহংকেন্দ্রিক এবং বিশ্বাস করে যে পৃথিবী তাদের চারপাশে ঘোরে। এর মানে হল যেমন সে যখন কোনো বিষয় ভুলে যায় তখন সে ধরে নেয় সেটা হয়নি। সে সেটা করেনি। তারা ধরে নেবে এটি তাদের দোষ এজন্য তারা সেটা পুরোপুরি অস্বীকার করে। তাই পিতামাতা হিসাবে, আমাদের সন্তানদের জানাতে হবে যে এটি তাদের দোষ নয় এবং এমন কিছু নেই যা তাদের ভিন্নভাবে করা উচিত ছিলো। ভুলে যাওয়ার কারণে তাদেরকে বুঝাতে সময় লাগতে পারে। এভাবে নিজেদের ব্যাপারে তাদেরকে সহজ করে বুঝাতে হবে।
৪. তাদের সন্তান হতে দিন
যদিও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোলামেলা এবং সৎ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ, এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা পিতামাতা হিসাবে আমাদের ভূমিকা বজায় রাখছি। কোনো কিঝু বুঝাতে গিয়ে পিতামাতাকে কাউন্সিলর আর সন্তানকে ক্লায়েন্ট বানানো যাবে না। তাদেরকে সন্তানের মতো করেই বুঝাতে হবে। সন্তানকে সন্তানের মতো থাকতে দিতে হবে। শিশুরা বন্ধুর মতো নির্ভয়ে কথা বলতে পছন্দ করে। এজন্য তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে ‘যে শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের মানসিক সুস্থতার জন্য দায়ী মনে করে- তাদের নিজেদের সংগ্রাম করার ঝুঁকি অন্যদের থেকে অনেক বেশি’।
৫. সক্রিয় হোন
আমরা পুরোপুরিভাবে জানি না যে কখন মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দেবে তাই সব সময় সতর্কা থাকতে হবে। নিজের ও পরিবারের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। গুরুতর কোনো সমস্যা মনে হলে খোলামেলা পর্যালোচনা করতে হবে।
এটাও পড়ুন
যে সব খাবার হতাশা দূর করে
মেন্টাল হেলথ টুডে ইউকে অবলম্বনে শাহনূর শাহীন
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে
/এসএস