আমি আমার কাজের মাঝেই ভালো থাকি : মামুনুর রশীদ

[int-intro] একজন প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক তিনি। নাট্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেশে বিদেশে পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা ও পুরষ্কার। প্রতিষ্ঠা করেছেন আরণ্যক নাট্যদলের। সামাজিক বৈষম্য ও সচেতনতাই মূলত তাঁর নাটকের প্রধান উপজীব্য। মঞ্চের পাশাপাশি ছোট বড় পর্দাতেও রয়েছে সমান বিচরণ। তিনি মামুনুর রশীদ। মনেরখবর পাঠকের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানাচ্ছেন তাঁর মনের কথা, স্বপ্নের কথা, ইচ্ছার কথা, দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবনার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ মামুন।  [/int-intro]
[int-qs]কেমন আছেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”] ভালো আছি। [/int-ans]
[int-qs]ভালো থাকতে কী করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]আমি আমার কাজের মাঝেই ভালো থাকি।[/int-ans]
[int-qs]মন খারাপ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]হ্যাঁ হয়।[/int-ans]
[int-qs]মন খারাপ হলে কী করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]মন খারাপ হলে বই পড়ি, গান শুনি। [/int-ans]
[int-quote]আমরা দীর্ঘদিন পরাধীন ছিলাম। পাঠানরা আমাদের শাসন করেছে, মুঘলরা আমাদের শাসন করেছে, ইংরেজরা দীর্ঘদিন আমাদের শাসন করেছে, তারপর আসলো পাকিস্তানি শাসন। এরপর আমরা স্বাধীন হয়েছি ঠিকই কিন্তু স্বাধীন মানুষের মানসিক গঠন যেটি হওয়ার কথা ছিল সেটি হয়তো এখনও হয়নি। হয়তো হবে সেজন্য আরো সময় লাগবে।[/int-quote]
[int-qs]রাগ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”] হয়।[/int-ans]
[int-qs]রাগ নিয়ন্ত্রণ করেন কীভাবে?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]রাগ হলে চুপচাপ থাকার চেষ্টা করি।[/int-ans]
[int-qs]মনেরখবরের সূচনালগ্ন থেকেই মানসিক স্বাস্থ্যসেবার এই মাধ্যমটির সাথে আপনি জড়িত। ব্যক্তিগতভাবে মানসিক স্বাস্থ্যকে কীভাবে দেখেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]এটা খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কিন্তু আমাদের দেশে এটা খুবই অবহেলিত। আমার মতে মানসিক স্বাস্থ্যকে সবারই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত। মানসিক রোগের চিকিৎসকরা যেমন পাগলের ডাক্তার না, তেমনি মানসিক রোগ মানেই পাগল না। প্রতিটা মানুষের মধ্যে কষ্ট আছে, সমস্যা আছে। এ সমস্যাগুলো যখন প্রকটাকার ধারণ করে এবং স্বাভাবিক জীবনকে ব্যহত করে তখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত। [/int-ans]
[int-qs] আমাদের সমাজে মানুষে মানুষে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ত্বের কারণ কী বলে মনে করেন? [/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এরমধ্যে আমার কাছে সবচে বড় যে কারণটি মনে হয় তা হলো অনিশ্চয়তা। আমরা দীর্ঘদিন পরাধীন ছিলাম। পাঠানরা আমাদের শাসন করেছে, মুঘলরা আমাদের শাসন করেছে, ইংরেজরা দীর্ঘদিন আমাদের শাসন করেছে, তারপর আসলো পাকিস্তানি শাসন। এরপর আমরা স্বাধীন হয়েছি ঠিকই কিন্তু স্বাধীন মানুষের মানসিক গঠন যেটি হওয়ার কথা ছিল সেটি হয়তো এখনও হয়নি। হয়তো হবে সেজন্য আরো সময় লাগবে। এছাড়াও রয়েছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভাব, রয়েছে রাজনৈতিক অবস্থার প্রভাব। [/int-ans]
[int-qs]শিক্ষা ও রাজনীতি আমাদের কীভাবে বিভক্ত করছে?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]আমাদের দেশে নানামুখী শিক্ষা ব্যবস্থা। একটি সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা, একটি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা, একটি ইংরেজি শিক্ষা ব্যবস্থা। এর বাইরেও একই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষাপ্রদান পদ্ধতির মধ্যেও রয়েছে ফারাক। যেমন সাধারণ শিক্ষার মধ্যে ক্যাডেট কলেজগুলো আবার নিজেদের আলাদা নিয়মে চলে। শিক্ষা ব্যবস্থার এসব বিভক্তি শিক্ষা লাভের শুরুর থেকেই সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। দেশের শিক্ষিত শ্রেণি এখন পুরোপুরি নানা ভাগে বিভক্ত। কেউ হয়তো বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করছে আবার কেউ হয়তো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করছে। এদিকে আমাদের রাজনীতিবিদগণ হলেন ক্ষত্রিয়ের মতো। অর্থাৎ কেউ সরে দাঁড়াতে রাজি নয়। আমি থাকলে তুমি থাকবে না অথবা তুমি থাকলে আমি থাকবো না। যার কারণে এমনিতে রাজনীতি তো দ্বিধা বিভক্ত হচ্ছেই, একই সাথে মূল দলগুলোর ভেতরেও দেখা যাচ্ছে অসংখ্য উপদল তৈরি হচ্ছে এবং এই উপদলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে।  [/int-ans]
[int-qs]জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উপায় কী হতে পারে?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”] জাতীয় ঐক্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সমাজ বা জাতি বিনির্মাণে কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। তবে সম্পুর্ণ ঐক্য আদৌ সম্ভব কিনা আমি জানিনা। ভারত ভাগ হয়ে আমরা যখন পাকিস্তান হলাম তখনও আমাদের সবার মাঝে ঐক্যবদ্ধতা ছিল না, পাকিস্তান ভেঙ্গে যখন বাংলাদেশ হতে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছিলো তখনও জাতি পুরোপুরি ঐক্যবদ্ধ ছিল না। তারপরেও দেশ স্বাধীন হয়েছে। কারণ সমাজে বা জাতিতে যখন কোনো জোয়ার আসে সে জোয়ারকে রোধ করা যায় না। আর বর্তমানে আমরা যেটা দেখছি যে রাজনীতি মেরুদণ্ডহীন হয়ে গেছে, রাজনীতি অর্থনীতির কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, শিক্ষিত শ্রেণি পুরোপুরি বিভক্ত হয়ে পড়েছে, যে যেভাবে পারছে ক্ষমতায় থাকছে। এতে যা হচ্ছে ঐক্যের সম্ভাবনা কমে গিয়ে বিভক্তির পরিমাণ বাড়ছে শুধু।  [/int-ans]
[int-qs]বিভক্তি তৈরি করে রাখাটাও কি এক ধরনের রাজনীতি নয়?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]অবশ্যই। কোনোকিছু নিরঙ্কুশ হচ্ছে না, সবকিছুকে বিতর্কিত করে দেয়া হচ্ছে। মানুষ বিতর্কের উর্ধ্বে থাকছে না, বিচার ব্যবস্থা বিতর্কের উর্ধ্বে থাকছে না, শিক্ষা ব্যবস্থা বিতর্কের উর্ধ্বে থাকছে না। এবং দেখা যাচ্ছে এসব বিভক্তি আস্তে আস্তে আমাদের পরিবারের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে।  [/int-ans]
[int-qs]এর থেকে পরিত্রাণের কোনো পথ?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। বিশেষ করে এই সময়ে ব্যাপারগুলো আরো কঠিন। কারণ এখন অনেক কিছুই আন্তর্জাতিকভাবে সংশ্লিষ্ট থাকে। তারমধ্যে বর্তমানে অর্থনীতিবাদ ধরনের একটা বিষয় চলে এসেছে। যেখানে ছড়ানো হচ্ছে যে অর্থই মানুষের সুখ সাফল্যের প্রধান উপকরণ। মানুষ ছুটছে আরো বেশি অর্থ উপার্জনের পথে। যার ফলে মানুষের বিবেক, মূল্যবোধ অথবা ভালোবাসার মাঝে তৈরি হচ্ছে অবক্ষয়ের।  [/int-ans]
[int-qs]এই কঠিনের মাঝেও কোনো উপায়?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”] একান্ত যদি আমার মতামত বলি তাহলে বলবো, সমাজটাকে যদি একটু পাঠমুখী করা যায় অর্থাৎ সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান এসব বিষয়ে মানুষের পড়াশুনার একটা সংস্কৃতি যদি তৈরি করা যায় তাহলে হয়তো সম্ভব হলেও হতে পারে। এ পড়াশুনা চাকুরি পাওয়া বা অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হবে না, এ পড়াশুনার সংস্কৃতি হবে আত্মিক ও মানবিক উন্নয়নের হাতিয়ার। [/int-ans]
[int-img name=””]https://monerkhabor.com/wp-content/uploads/2017/04/mamunur-rashid-2.jpg[/int-img]
[int-qs]আবারো ব্যক্তিগত প্রশ্ন। স্বপ্ন দেখেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]স্বপ্ন তো দেখিই।[/int-ans]
[int-qs]কেমন সে স্বপ্নগুলো?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]নানা ধরনের স্বপ্ন রয়েছে। এর কিছু যেমন রয়েছে ঘুমিয়ে দেখার স্বপ্ন তেমনি আবার কিছু রয়েছে জেগে দেখার স্বপ্ন।[/int-ans]
[int-qs]স্মৃতি কাতরতা আছে?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]খুব। আমি খুব স্মৃতি কাতর মানুষ। [/int-ans]
[int-qs]একটি স্মৃতি আমাদের বলবেন কি?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]ছোটবেলায় মায়ের কোলে চড়ে নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা নাটক দেখতে গিয়েছিলাম এবং নাটক দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এই স্মৃতিটি আমার আমার মনে এক মধুর স্মৃতি হিসবে গেঁথে আছে যা আমি প্রায়ই রোমন্থন করে থাকি। [/int-ans]
[int-qs]অবসরে কি করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]আমার কোনো অবসর নেই। হয় লিখি, নইলে পড়ি, নইলে অভিনয় করি, গল্প করি। [/int-ans]
[int-qs]অনেক ধন্যবাদ আপনাকে?[/int-qs]
[int-ans name=”মামুনুর রশীদ”]ধন্যবাদ মনেরখবরের সকলকেও।[/int-ans]

Previous articleআমার অতীতের কিছু অপ্রিয় ঘটনা মাথায় জেঁকে বসেছে
Next articleস্কুলগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি অভিভাবকদের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here