বন্ধ্যাত্ব ও মানসিক স্বাস্থ্য

বন্ধ্যাত্ব বা ইনফারটিলিটি বলতে সাধারণত বুঝায় যে কোনো দম্পতি এক বছর বা তার অধিক সময় একসাথে আছেন এবং চাওয়া সত্ত্বেও স্ত্রী গর্ভধারণ করতে পারছেন না বা করলেও তা বাচ্চা প্রসবের নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত নিতে পারছেন না।
স্বামী, স্ত্রী বা উভয়ের সমস্যার কারণেই এ সমস্যা বা রোগ হতে পারে। এ রোগে দীর্ঘদিন যাবত ঔষুধ খেতে হয় এবং নানা রকম চিকিৎসার সন্মুখীন হতে হয় যা অনেক সময় রোগীর মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে রোগীর নানা রকম মানসিক সমস্যা হতে পারে। মানসিক চাপ বা মানসিক সমস্যার কারণে অনেক সময় ইনফারটিলিটি চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটে।
ইনফারটিলিটি চিকিৎসা চলাকালীন স্বামী, স্ত্রী উভয়েরই মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে গুরুত্ব দেয়া খুব জরুরি।
মানসিক চাপের কারণ
দীর্ঘকালীন চিকিৎসা।
অর্থনৈতিক সমস্যা।
বারবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো।
সময়মতো ডাক্তারের সিরিয়াল পেতে অসুবিধা হওয়া।
নিয়মমতো ঔষুধ খাওয়া।
বিভিন্ন রকম চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যবস্থা থাকা।
অনেক সময় দেরিতে সাফল্য আসা।
ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
আশেপাশের মানুষদের বিরূপ মন্তব্য।
আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতা না পাওয়া।
গর্ভপাত হয়ে যাওয়া।
দাম্পত্য কলহ।
উপরোক্ত চাপের কারণে রোগি নিম্ন লিখিত মানসিক রোগে ভুগতে পারে
বিষণ্নতা।
অস্থিরতা।
মানসিক রোগের লক্ষণসমূহ
অল্পতে রেগে যাওয়া।
নিজেকে ও অন্যকে দায়ী করা।
সবসময় সবকিছুতে মন খারাপ করা।
খাওয়া ও ঘুমে হঠাৎ করে পরিবর্তন আসা।
মনোযোগ কমে যাওয়া।
আত্মহত্যার চেষ্টা করা।
কাজে উৎসাহ কমে যাওয়া।
অল্পতে ভেঙ্গে পড়া।
চিকিৎসকের করণীয়
রোগী ও তার পরিবারকে ইনফারটিলিটি ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান দেয়া।
মানসিক রোগ ও তার লক্ষণ দেখা গেলে মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে রোগীকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
রোগীর করণীয়
ধৈর্য্য ধারণ করা।
সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখা।
ডাক্তারের পরামর্শমতো চলা।
নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাওয়া।
স্বামী স্ত্রী উভয়ের একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল ও দায়িত্ত্বশীল হওয়া, একে অপরকে দোষারোপ না করে সহযোগিতা করা।
নিয়মিত হাঁটাচলা করা।
স্বাভাবিক সব কাজকর্ম করা।
পরিমিত ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো ও বিশ্রাম নেয়া।
অপরিচিত কাউকে নিজের সমস্যার কথা না বলা।
পরিচিত কারো প্রশ্নের উত্তর না দিতে চাইলে তা এড়িয়ে যাওয়া।
চিকিৎসার ফলাফল যাই হোক না কেন তা মেনে নেয়া।
আত্মীয়দের করণীয়
অযথা প্রশ্ন করে রোগীকে বিরক্ত না করা।
ধৈর্য্য ধারণ করা।
সম্পূর্ণ সহযোগিতা করা।
চিকিৎসার ফলাফল ভালো না হলে তা মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে রোগীকে উৎসাহিত করা।
পরিশেষে বলা যায়, বন্ধ্যাত্ব বা ইনফারটিলিটির যে চিকিৎসা দেয়া হয় তা একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। চিকিৎসা চলাকালীন রোগী নানা রকম মানসিক চাপের সন্মুখীন হয়। অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা মানসিক রোগের কারণে রোগী অনেক সময় আশানুরূপ ফল পায় না।
সময় মতো মানসিক রোগ নির্ধারণ ও মানসিক রোগের চিকিৎসা যদি নিশ্চিত করা যায় তাহলে রোগী ও তার পরিবারের ভোগান্তি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এমতাবস্থায় যদি চিকিৎসক, পরিবার ও আশেপাশের মানুষের সম্পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে রোগীর পক্ষে সম্ভব একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন উপভোগ করা।  


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleঅজানা মনের সুখ দুঃখ
Next articleআপনার বোন বর্তমানে বিষণ্নতা রোগে ভুগছেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here