ভূতের ভয় বা ফ্যাজমোফোবিয়া
ভূতে বিশ্বাস করেন এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে, আবার এমন মানুষও খুব কম পাওয়া যাবে যারা ভূতে ভয় পান না। বিষয়টি বেশ অদ্ভুত ও গোলমেলে। এটি আরো বেশি মজার ও অদ্ভুত হয় যখন দেখা যায় অধিকাংশ মানুষই ভূতের ভয়টি পেতে আগ্রহী। যেমন, ভূতের গল্প শুনে বা ভূতের সিনেমা দেখে অনেকেই শিহরিত হন বা বেশ পুলক অনুভব করেন। গবেষণায় দেখা যায়, যতক্ষণ মানুষ তার নিজের উপর নিয়ত্রণ রাখতে পারে ততক্ষণ কোনো ঝুঁকিপূর্ণ বা ভয়ের কিছুতে একটা আনন্দ অনুভব করে থাকে। তাই গল্প বা সিনেমা থেকে ভূতের ভয়ের যে আবহ তৈরি হয় সেটি মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অর্থাৎ যেখানে ভয় নেই সেখান থেকে ভয়ের আনন্দ উপভোগ করা।
কিন্তু সমস্যা হয় তখনই যখন এটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অনেক সময় দেখা যায় মৃত্যু ভয় এবং ভূতের ভয় (অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো আত্মা বা জীবের) একসাথে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার পেছনে কোনো না কোনো মানসিক রোগ বিদ্যমান। তাই এমন সমস্যা হলে দ্রুত মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
মৃত্যু ভয় বা থেনটোফোবিয়া
সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, এটি সবারই জানা। কিন্তু কয়জন এই মৃত্যুভয় নিয়ে সারাক্ষণ ভীত এবং চিন্তিত থাকেন। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্তরা ভাবতে থাকেন, মৃত্যু কিভাবে হবে, কখন হবে, সাথে কে থাকবে, মৃত্যুর পরে কি হবে ইত্যাদি। তাদের মৃত্যুর ভাবনার একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে, মরে গেলে তার নিজের কি হবে, তার উপর যারা নির্ভরশীল তাদের কি হবে। তারা মৃত্যুর ভয়াবহতা নিয়ে আরো বিভিন্ন কল্পনা করতে থাকেন।
অনেক ক্ষেত্র মৃত্যু বিষয়ক এ ভাবনাগুলি স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হলেও, মৃত্যু ভাবনা বা ‘ফেয়ার অব ডেথ’ একজনের মনে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করছে তার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় মানুষের দৈনন্দিন কাজের উপর এই মৃত্যু ভাবনা প্রভাব বিস্তার করছে, যার ফলে তার স্বাভাবিক জীবন বিপন্ন হয়। কোনো কাজ মনোযোগের সহিত করতে পারে না, কোনো পেশায় স্থির থাকতে পারে না, নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ইত্যাদি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে তাকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অকারণ ভয় বা এপ্রিহেনশন
সব সময় তটস্থ থাকা, ঘন ঘন চমকে ওঠা, কোথায় কি যেন ঘটছে এমন আতংকে থাকা, কোনো কারণ ছাড়াই ভয় লাগা এমন অনুভূতি কারও জীবন যাপনকে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যায়। তবে সব সময় এমন ভয়ের কোনো নির্দিষ্ট কারণ বা ব্যাখ্যা জানা থাকে না। কোনো একটা কারণ থাকলে তবুও নাহয় ব্যাপারটি মানা যায়, কিন্তু যখন ভয়ের কোনো কারণই থাকে না তখন কেন এমন হয়? মনে হয় সামনে কোনো বড় ধরনের বিপদ আসছে, অগোচরে কিছু একটা দূর্ঘটনা ঘটছে বা ঘটতে চলেছে। কখনও নিজের জন্য ভয় আবার কখনও নিকটজনের কিছু হবে এমন ভয়। এমন ভয়ের মধ্যে থাকার ফলে বুক ধড়ফড় করা, বুকের ভেতরে কেমন একটা অনুভূতি, অস্থিরতা ইত্যাদি অনুভূত হতে থাকে। ইংরেজিতে এ ধরনের ভয়কে বলা হয়, ‘ফ্রি ফ্লাটিং এনজাইটি’ বা এপ্রিহেনশন।
সাধারণত এনজাইটি সংশ্লিষ্ট মানসিক রোগের কারণে এমনটা হয়ে থাকে। হরমোনাল কোনো সমস্যার জন্যও এমনটি হতে পারে। কারো এমন অহেতুক ভয়ের অনুভূতি হলে দেরি না করে দ্রুত মনোরোগ চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত।
পরামর্শ
উপরে উল্লেখিত তিন ধরনের ভয়ই কখনও স্বাভাবিক অবস্থায় হতে পারে আবার কখনও হতে পারে কোনো মানসিক রোগের কারণে। ভূতের ভয় বা মৃত্যু ভয় কোনো একজন মানুষ নিজের থেকেই চাইতে পারেন। ভূতের ভয় চাইতে পারেন আনন্দ উত্তেজনার জন্য আর মৃত্যু ভয় চাইতে পারেন ধর্মীয় কারণে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত এই ভয়গুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে ততক্ষণ এগুলোকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবেই দেখতে হবে। কিন্তু এ ভয় যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা নিতে হবে। সাধারণ দু’একটি পরামর্শ এখানে কোনো সুফল বয়ে আনবে না। অনেকে মনে করেন দু’একটি পরামর্শ হয়তো কার্যকরী হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, রোগ রোগই। সেখানে উপদেশ নয় বরং চিকিৎসা প্রয়োজন।
চিকিৎসা
এ ধরনের ভয়গুলোর সাথে বিভিন্ন মানসিক রোগের যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা থাকলেও, সাধারণত এনজাইটি বিষয়ক মানসিক রোগের সাথেই এগুলো বেশি থাকে। জেনারালাইজড এনজাইটি ডিজঅর্ডার, প্যানিক ডিজঅর্ডার, কনভারশান ডিজঅর্ডার, ডিল্যুশনাশ ডিজঅর্ডার বা বিভিন্ন ধরনের ফোবিক ডিজঅর্ডারের সাথে এটি যুক্ত থাকতে পারে। পেছনের কারণ বা রোগের সম্পৃক্ততার উপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা পদ্ধতি কেমন হবে। ওষুধ, সাইকোথেরাপি এবং সাইকোএডুকেশন সবই প্রয়োজনীয় হবে।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।
মৃত্যুর ভয় রোগের ঔষুধ বলে দিলে ভালো হত আমি এই রোগে ভুগতেছি