মিনা বুলবুল হোসাইন
নির্বাহী ব্যবস্থাপক (বিক্রয় বিভাগ)
বিকন ফার্মাসিটিক্যালস পিএলসি
জেনারেল মেম্বার
ট্রেইনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
“যে ব্যক্তি নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে,সে ভাগ্যও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে”
রাগ দুইভাবে কাজ করে—
ধ্বংসের শক্তি হিসেবে এবং পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে যদি রাগের ব্যবস্থাপনা না থাকে, তাহলে এটি জীবনকে নেতিবাচক ও ধ্বংসাত্মক করে তুলতে পারে। আর যদি এটি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়,তাহলে রাগের ব্যাড ইম্প্যাক্ট সংগঠিত হয় যা মুহূর্তেই মানুষে-মানুষে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। রাগের বশে ভুল সিদ্ধান্ত জীবনকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যায়। ক্রোধ দেহে নেতিবাচক হরমোন (কর্টিসল) বৃদ্ধি করে, যা স্ট্রেস,উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক চাপ তৈরি করে। রাগ মানুষকে প্রতিশোধপরায়ণ ও হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি শুধুমাত্র রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে বিভিন্ন কাজে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন এরকম ঘটনার বহু প্রমাণ রয়েছে দুনিয়াতে। তাই ক্রোধ পরিচালনা- এর মাধ্যমে জীবন রূপান্তর এবং কোন কোন উপায়ে সম্ভব তা নিম্নরূপ তুলে ধরা হলো।
১। রাগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজেকে ধৈর্যশীল, দায়িত্বশীল ও আত্মনিয়ন্ত্রিত করে গড়ে তোলা সম্ভব। সফল ব্যক্তিরা কখনো ইমোশনকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে দেয় না, বরং তারা ইমোশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে!
২। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়:
একজন সফল ব্যক্তি প্রতিক্রিয়া করে না,বরং রেস্পন্ড করে! ক্রোধ পরিচালনা শিখলে আকস্মিক রাগের বশে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া বন্ধ হবে।
৩ শরীর ও মনের শান্তি নিশ্চিত করে:
রাগ আমাদের দেহে ক্যামিকাল ইমব্যালেন্স তৈরি করে, যা ডিপ্রেশন, অ্যানজাইটি ও হাই ব্লাড প্রেসার এর কারণ হতে পারে।
ক্রোধ পরিচালনা চর্চা করলে শরীর ও মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সম্পর্ক উন্নত করে:
রাগের কারণে বেশিরভাগ সম্পর্ক নষ্ট হয় পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, অফিস কলিগ,আত্মীয়-স্বজন কিংবা দাম্পত্য জীবনেও এর প্রভাব বর্ণনা করার মত নয়। রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখলে, সম্পর্কগুলো মজবুত হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
সৃজনশীলতা এবং ক্যারিয়ার গ্রোথে সাহায্য করে:
স্টিভ জবস, এলন কস্তুরী- এর মতো সফল ব্যক্তিরা রাগ নয়,বরং এটিকে জীদ হিসেবে তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণের মত গঠনমূলকভাবে ব্যবহার করেছেন। তারা রাগকে উদ্দেশ্যের শক্তিতে পরিণত করেছেন,যা তাদের বিশ্বজয়ী মনোভাব তৈরিতে সহায়তা করেছে !
কিভাবে রাগ পরিচালনা-এবং এর মাধ্যমে জীবন পরিবর্তন করা যায় তার কিছু আলোচনা সচেতন শিক্ষিত সকলের উপলব্ধির জন্য শেয়ার করছি।
থামুন এবং ভাবুন: রাগের সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া বা রিয়াক্ট করবেন না, বরং থামুন এবং চিন্তা করুন!
বুঝতে চেষ্টা করুন, এমন কেন হচ্ছে? কারণ বুঝতে পারলে সমাধান বের করা সহজ হয়।
শান্তির অনুশীলন করুন: শান্তির স্বাধীনতা উপভোগের জন্য নিজেকে প্রশ্ন করুন:
“এই রাগ আমার জীবনে কী প্রভাব ফেলবে?”
“এই রাগের কারণে আমি কি কি ভুল সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি?”
“আমি কি রাগের বদলে অন্যভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারি?”
সৃজনশীল কিছু করুন: গান লিখুন, কবিতা লিখুন, ব্যায়াম করুন অথবা যা যা আপনাকে মানসিকভাবে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। সঠিক মানসিকতা তৈরি করুন:মনে রাখবেন আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণ না করলে রাগ আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে যা অর্গানাইজেশন বা নিজের এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ হয়।
রাগকে শক্তিতে পরিণত করুন! কল্যাণের পথে নিজেকে শক্তিশালী করুন। ক্রোধ পরিচালনা শুধু একটি অভ্যাস নয়, এটি একটি সুপার পাওয়ার! যারা রাগকে কন্ট্রোল করতে জানে, তারা জীবনের সব ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে পারে। আপনি কি রাগ পরিচালনা- এর মাধ্যমে জীবন রূপান্তর করতে চান? তাহলে আজ থেকেই রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল রপ্ত করা শুরু করুন! রাগ,বিরক্তি,মেজাজ গরম,রগচাঁটা,ক্রোধ,মনঃক্ষুন্ন রিয়েকশন,মানসিক আঘাত দেয়া,আঘাত পাওয়া,দুর ব্যবহার করা এসবই রাগান্বিত অর্থে উত্তেজিত মুহূর্তে মনের ভেতরের অবস্থার বহিঃপ্রকাশ যা সামাজিক ব্যবস্থাপনার সাথে একদমই যায় না। জীবন আসলে কঠিন নয়,যত সহজ করে চিন্তা করবেন এটি ততই সহজ,কে কার থেকে বেশি বড়,শক্তিতে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে,পদমর্যাদায়,দক্ষতায় এটি তুলনা না করে মানুষ হিসেবে সহজ, সরল, সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার মানদণ্ডে নিরেট সততার বিস্তৃতি ছড়িয়ে পড়ুক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সর্বস্তরে এমন প্রত্যাশা রেখে পরিশেষে বলতে চাই… ভালো মানুষের সাথে থাকুন বুদ্ধি না থাকলেও সৎ পরামর্শ পাবেন। মেধার দৌড়ে জিততে না পারেন,পরিশ্রম দিয়ে জেতার চেষ্টা করুন এর থেকে বড়মাত্রার বিকল্প হেরিটেজ আর অন্য কিছু হতে পারে না।
আরও পড়ুন-