একিউট ডিসঅর্ডার ও পিটিএসডির চিকিৎসা

0
16
একিউট ডিসঅর্ডার ও পিটিএসডির চিকিৎসা

ডা. শাহরিয়ার ফারুক
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও সহকারী অধ্যাপক, ওএসডি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা

কোন ব্যাক্তির সাথে ঘটে যাওয়া বড় কোন দুর্ঘটনা যা তার জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ ছিল কিংবা তিনি তেমন কোন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন- এমন কোন ঘটনার পরে সবচেয়ে বেশি যে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তার একটি হচ্ছে একিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার আরেকটি হচ্ছে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার। সমস্যা দুটোর লক্ষণ মূলত একই রকম কিন্তু সমস্যা শুরুর সময়ের উপরে ভিত্তি করে এই দুইটির মধ্যে পার্থক্য করা হয়ে থাকে। দুইটি সমস্যার ক্ষেত্রেই মাঝারি থেকে তীব্র আবেগ জনিত এবং আচরণজনিত কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। দুর্ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার এক মাসের মধ্যে যদি এই লক্ষণগুলো দেখা দেয় তাহলে তাকে বলা হয় একিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার আর যদি ঘটনা ঘটার এক মাসের পরে লক্ষণগুলো দেখা দেয় কিংবা এক মাসের মধ্যে শুরু হয়ে এর পরেও লক্ষণগুলো বিরাজ করে তখন তাকে বলা হয় পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসর্ডার। সংক্ষেপে একে বলা হয় পিটিএসডি।

একিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে এই সমস্যা এমনিতেই কমে ঠিক হয়ে যায়। কখনো অবশ্য সাইকোলজিকাল ফার্স্ট এইড বা প্রাথমিক মানসিক সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে। তবে পিটিএসডি এর ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে যথাযথ চিকিৎসার। এইক্ষেত্রে কিছু সাইকোথেরাপি এবং কিছু ঔষধ ও দেয়া হয়ে থাকে। যে সাইকোথেরাপিগুলো দেয়া হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ট্রমা ফোকাসড কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি। এটি একটি বিশেষ ধরনের সাইকোথেরাপি। এখানে কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপির সাথে ঐ দুর্ঘটনার কিছু মেলবন্ধ তৈরি করা হয় যার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যাক্তি তার সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটির সম্পর্কে নেগেটিভ বা ঋণাত্মক চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেন এবং ওই ঘটনার দুঃসহ স্মৃতিগুলো সহজে ভুলতে পারেন।

আরেকটি থেরাপি দেয়া হয় যেটাকে আমরা বলি আই মুভমেন্ট ডিসেন্সিটাইজেশন এন্ড রিপ্রসেসিং বা ইএমডিআর। বিভিন্ন সিনেমা নাটকে মনোচিকিৎসকদের যেভাবে দেখানো হয় যেমন, তারা একটি ঘড়ির পেন্ডুলামের মত দেখতে বস্তুকে কোন ব্যক্তির চোখের সামনে দোলাতে থাকেন। এই থেরাপি পুরোপুরি সেই নাটক সিনেমার মনোচিকিৎসকদের কর্মকান্ডের সাথে না মিললেও অনেকটা সেরকমই। এই থেরাপির মাধ্যমেও অনাকাঙ্ক্ষিত সেই দুর্ঘটনা সম্পর্কে ব্যাক্তির নেগেটিভ বা কষ্টদায়ক স্মৃতিগুলো ধীরে ধীরে সহজ হয়ে ওঠে।Magazine site ads

পিটিএসডি’র জন্য আরেকটি থেরাপি অনেক সময় ব্যবহার করা হয় আর তা হচ্ছে প্রলংড এক্সপোজার থেরাপি, যার মাধ্যমে দুর্ঘটনা সম্পর্কিত অনুভূতির কথা এবং বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রিতভাবে দীর্ঘ সময় ধরে রোগীকে মনে করিয়ে দেয়া হয়। এতে দেখা যায় ওই ঘটনা সম্পর্কে ব্যাক্তির মধ্যে যে তীব্র মানসিক উত্তেজনা তৈরি হতো তা ধীরে ধীরে প্রশমিত হতে থাকে।

সাইকোথেরাপির পাশাপাশি অনেক সময় মনোচিকিৎসকরা আক্রান্ত ব্যাক্তিকে কিছু ঔষধও লিখে লিখে থাকেন। এই ঔষধগুলো পিটিএসডি তে আক্রান্ত ব্যাক্তির উত্তেজনা, বিষন্নতা, অস্থিরতা ইত্যাদি কমিয়ে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এছাড়া একিউম স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের রোগীদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয় যেন তারা নিয়মমাফিক একটি স্বাভাবিক জীবন যাপন চর্চা করেন। পরিমিত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত কাজকর্ম, শারীরিক ব্যায়াম, যোগব্যায়াম এগুলোও একিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার এবং পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার নিরাময়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মনে রাখা প্রয়োজন – কোন দুর্ঘটনার পর যদি কোন ব্যক্তি অস্বাভাবিক কোনো আচরণ শুরু করে অথবা তার মানসিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তবে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা অন্যান্য সমস্যার মতোই এই সমস্যাও যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা হবে তত দ্রুতই নিরাময় করা সম্ভব। আর চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হলে অন্যান্য সমস্যার মত এই সমস্যাগুলোও জটিল আকার ধারণ করে এবং পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য সময়ও খরচ দুটোই বেড়ে যায়।

Previous articleঋতুস্রাব বন্ধ সমস্যা ও সমাধানের কথা
Next article৩য় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য সম্মেলন ২০২৪-এর প্রাক-সম্মেলন অনুষ্ঠিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here