প্রতিদিনের চিঠি : আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সেসবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন ‘প্রতিদিনের চিঠি’ বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আপনিও লিখতে পারেন আমাদেরকে। সেজন্য ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।
চিঠি : একটি মেয়ের সঙ্গে আমার এক বছরের সম্পর্ক ছিল। দুজনই চেয়েছিলাম পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়েটা হোক। তাই আমাদের নিজ নিজ পরিবারকে জানাই। একটি কারণে দুই ফ্যামিলিই আমাদের সম্পর্কে প্রথমে আপত্তি করলেও পরে আমাদের চেষ্টায় তাদের রাজি করাই। ওই মেয়ের বাড়িতে আমার পরিবার কথা বলতে যায় এবং বছরখানেকের মধ্য বিয়ে হওয়ার ব্যাপারে মৌখিকভাবে কথা দিয়ে আসে। এর কয়েক মাস পর হঠাৎই মেয়েটি আমাকে জানায়, সে আর এই বিয়েতে রাজি নয় এবং আমার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তার মা-বাবাকেও এই বিয়েতে অসম্মতি জানায়। আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে দুই পরিবারের আত্মীয়স্বজন সবাই জানতেন এবং শিগগিরই আমাদের এনগেজমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ মেয়েটির এমন অস্বাভাবিক আচরণের কারণে আমি ও আমার পরিবার এবং মেয়েটির পরিবারও অবাক হয়ে পড়ি। মেয়েটির সঙ্গে আমার কোনো ধরনের ঝগড়া বা মনোমালিন্য ছিল না। তারপরও তার এমন অতর্কিত সিদ্ধান্তে আমি মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়ি। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত আমি অত্যন্ত ডিপ্রেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। করণীয় কী?
– মুনেম, জিগাতলা, ঢাকা
উত্তর : আপনি যে বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন, সেটি সত্যিই একটি কষ্টকর ঘটনা। আপনার মন খারাপ হয়েছে, এটা কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। মানসিক ভাবে বিচলিত হওয়ার বা ভেঙে পড়ারও যথেষ্ট কারন আছে। যেকোনো কমিটমেন্ট বা চুক্তির বরখেলাপ হলেই কষ্ট হয়। সেখানে জীবনের বড় একটা সিদ্ধান্ত যদি এমন ভাবে নষ্ট হয় তবে অবশ্যই সেটা দুঃখজনক।
আপনার দিক থেকে যা করনীয় হতে পারে সেটি হলো এই রিলেশনটা টিকিয়ে রাখলে আপনার জন্য সুবিধা-অসুবিধা কোনটা কতটুকু হতে পারে তা দ্রুত অনুধাবন করা। এটাও সত্যি যে রিলেশন লাভ ক্ষতি হিসেব করে হয় না। তারপরও এখন আপনার জন্য এটি একটি প্রশ্ন! সেই সাথে হিসেব করতে হবে, মেয়েটির কি কি দিক আছে যেটি আপনি ভালো করে জানেন। সেই দিকগুলোকে ধরে আগাতে পারেন।
এখানে আপনার পছন্দ না হলেও একটি সত্যি কথা বলি, সেটি হলো আপনারা যখন ঠিক করেছিলেন বিয়ে করবেন তখন এতো লম্বা সময়ের জন্য টাইম ফিক্স করা ভালো হয়নি। হয় কিছু না করতেন অথবা এনগেজমেন্ট করে নিতেন। এটি আপনার মনে আনার জন্যই কথটি বললাম।
শেষ কথা হলো, সময় আর অবস্থা সবসময়ই পরিবর্তন হতে পারে। আপনি দ্রুত কষ্ট কাটিয়ে উঠে নতুন। মেয়েটির সাথে সম্পর্ক উন্নতি হলে ভালো। তা- না হলেও জীবন সুন্দর করে সাজাতে আপনাকে নতুন করে ভাবতে শুরু করতে হবে। মনে রাখবেন কোনোভাবেই আপনি আপনার প্রতিদিনের কাজ ফেলে রাখবেন না। যত কিছুই হোক আপনার উপর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যা যা দায়িত্ব আছে তা তা সময়মতো সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনার সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা এবং নিজের ওপর আস্থা বাড়বে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও সহায়ক হবে।
যদি আপনার প্রতিদিনের কাজে ব্যাপক সমস্যা হয়ে তবে সরাসরি দেখা করে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা নিতে পারেন। আপনার বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করতে পারেন। আশা করছি দ্রুত সমস্যা পিছনে ফেলে স্বাভাবিক কাজে ফিরতে পারবেন। ভালো থাকুন। মনের খবরের সাথে থাকুন।
- পরামর্শ দিয়েছেন,
অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব- সম্পাদক, মনের খবর
অধ্যাপক– মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সেকশন মেম্বার– মাস মিডিয়া এন্ড মেন্টাল হেলথ সেকশন অব ‘ওয়ার্ল্ড সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন’।
কোঅর্ডিনেটর– সাইকিয়াট্রিক সেক্স ক্লিনিক (পিএসসি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সাবেক মেন্টাল স্কিল কনসাল্টেন্ট – বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিম।
এই বিভাগের অন্যান্য লেখা পড়তে ক্লিক করুন এখানে :
মানসিক স্বাস্থ্যের যে কোনো প্রশ্ন/পরামর্শ পেতে চিঠি পাঠাতে পারেন পেজের ইনবক্সে অথবা মেইল করুন monerkhaboronline@gmail.com -ঠিকানায়।
[প্রতিদিনের চিঠি পর্বে দেয়া উত্তরগুলো কেবলমাত্র প্রাথমিক দিকনির্দেশনা। সঠিক ও পূর্নাঙ্গ চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সাথে সরাসরি কথা বলে চিকিৎসা নিতে হবে।]
- মাসিক মনের খবর প্রিন্ট ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে চাইলে কল করুন : 01797296216 এই নাম্বারে। অথবা মেসেজ করুন পেজের ইনবক্সে। লেখা পাঠাতে পারেন monerkhaboronline@gmail.com বা এই 01844618497 হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে।
/এসএস/মনেরখবর