“আপনার রোগটি একটি ক্যান্সার” এই খবরটি প্রথাগত ভাবে প্রথম প্রকাশ করা চিকিৎসক, রোগী, রোগীর পরিবার সবার জন্যই বেশ সংকটময় অবস্থা। আমাদের আর্থসামাজিক ও চেতনাগত দিক থেকে রোগীর পরিবারের সদস্যগণ রোগীর কাছে তার রোগ সম্পর্কে না বলতে অনুরোধ করেন। সাথে সাথে রোগীর চারপাশে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে রাখেন যে রোগী ঠিকই বুঝতে পারেন যে তার বড় একটা অসুখ হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে বেশিরভাগ রোগীই তার রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে চান। শতকরা ৮০-৯০ ভাগ রোগীই তার রোগের নাম জানতে চান। নৈতিকভাবে সব রোগীরই তার রোগের নাম এবং বিস্তারিত জানার অধিকার রয়েছে। রোগের নাম এবং বিস্তারিত জানলে জীবনের শেষ দিনগুলোর পরিকল্পনা সুন্দরভাবে করা যায়।
Kubler-Ross গবেষণা করে দেখিয়েছেন মানুষ খুব বড় সংকটের সংবাদ শুনলে ক্রমাগতভাবে পাঁচ প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখায়।
প্রথম ধাপ: Shock and Denial
খুব বড় দুঃসংবাদ শুনলে মানুষ স্বভাবত স্তম্ভিত হয়ে পড়ে ও সেটিকে অস্বীকার করতে চায়, ভাবতে থাকে তার ক্ষেত্রে এটি হতেই পারে না, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। কেউ কেউ রোগের লক্ষণ অস্বীকার করে তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে নেয়, চিকিৎসকের পরামর্শও নিতে চায় না। এটা আমাদের প্রতিক্রিয়ার প্রথম ধাপ। অনেকে এই ধাপ থেকে আর পরবর্তী ধাপে নাও যেতে পারেন। এই ধাপেই মৃত্যু হয়ে যেতে পারে।
দ্বিতীয় ধাপ: Anger
দ্বিতীয় ধাপে মানুষ স্বভাবত রাগান্বিত হয়, নিজের প্রতি, ভাগ্যের প্রতি, বিশ্বাসের প্রতি। ভাবতে থাকেন তার ক্ষেত্রেই কেন এমন হতে হবে, আরও তো অনেক লোক রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা তাকেই কেন এই রোগ দিবেন বা এই পরিণতি দিবেন, ইত্যাদি।
তৃতীয় ধাপ: Bargaining
তৃতীয় ধাপে মানুষ তার বিশ্বাস বা সৃষ্টিকর্তার সাথে দর কষাকষি করতে থাকেন মনে মনে। ভাবতে থাকেন আমি যদি এবার বেঁচে যাই তাহলে আমার সম্পদের একটা অংশ দান করে দিব, অনেক অনেক ভালো কাজ করব, আর খারাপ কাজ করব না ইত্যাদি। সৃষ্টিকর্তা তুমি এবার আমাকে ভালো করে দাও, মনের গভীরে এই চিন্তা কাজ করতে থাকে।
চতুর্থ ধাপ: Depression
চতুর্থ ধাপে যখন বুঝতে পারেন রোগটি আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যাচ্ছে, তখন বিষণ্ণতা এসে ভর করে মনের ওপর। তখন আস্তে আস্তে মন খারাপ হয়, মেজাজ খিটখিটে হয় এবং বিষণ্ণতার অন্যান্য উপসর্গ এসে হাজির হয়।
পঞ্চম ধাপ: Acceptance
সর্বশেষ পর্যায়ে সবাই মেনে নিতে বাধ্য হয় তার শেষ পরিনতির হিসাব। তখন স্বভাবত সবাই বুঝতে পারেন এবং মেনে নেন জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য মৃত্যকে।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।