বাংলাদেশে প্রতি একশ জন প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে একজন সিজোফ্রেনিয়ায় ভোগেন বলে জানিয়েছেন মনোচিকিৎসকেরা। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইক্রিয়াটিস্টস (বিএপি) এর উদ্যোগে সিজোফ্রোনিয়া নামক গুরুতর মানসিক রোগের একটি গাইডলাইন এর মোড়ক উম্মোচনের অনুষ্ঠানে এই তথ্য দেন তারা। রোববার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেলে ইন্টারকন্টিনেন্টালের বলরুমে এই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিকল্যান মন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেছেন বাংলাদেশ এসোশিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি) এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মো. ওয়াজিয়ুল আলম চৌধুরী। এছাড়াও অনুষ্ঠানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞগণ, সাইকোলজিস্ট ও অন্যান্য মেন্টাল হেলথ পফেশনাল এবং মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিএপির সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ তারিকুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রিগ. জেনা. (অব) অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম। অনষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন,দেশের দুটি সরকারি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ৪০ থেকে ৪৩ শতাংশ রোগীই সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। উপজেলা পর্যায়েও যেনো এমন রোগিদের চিকিৎসা দেয়া যায়, সেভাবেই গাইডলাইনটি তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি। আলোচকগণ তাদের বক্তব্যে সিজোফ্রোনিয়া গাইডলাইন এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং এরকমভাবে আরও ৫টি গুরুতর রোগের গাইডলাইন প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, বিপিএ অনেক পরিশ্রম করে এই গাইডলাইনটি তৈরি করেছেন। গাইডলাইনটি যাতে উপজেলা পর্যন্ত সবাই ব্যবহার করে সেজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সচেষ্ট থাকবে। সব জেলার সিভিল সার্জনসহ মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট সবার কাছে এই গাইডলাইন পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও পোস্ট কোভিডে মনোরোগে আক্রান্ত হয়েছে তাদের চিকিৎসার ব্যাপারেও মনোচিকিৎসকদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসোসিয়েশনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, দেশ স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এগিয়ে যাচ্ছে। সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণেই দেশে কোভিডে মৃত্যু নেই বললেই চলে। শুধু শারিরীক রোগ নিয়ণ্ত্রণ করলেই চলবে না, মানসিক স্বাস্থ্যের কথাও চিন্তা করতে হবে। অসংক্রামক রোগের মধ্যে মানসিক রোগ বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী যেমন মানসিক রোগ বাড়ছে বাংলাদেশে বাড়ছে।
তিনি বলেন, অনেকে সামাজিক লজ্জার কারণে চিকিৎসা নিতে চায় না। মানসিক রোগের কারণেই প্রতিবছর ১৭ থেকে ২০ হাজার মানুষ আত্নহত্যা করছে। বিষন্নতা থেকে সামাজিক, পারিবারিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। দেশে মানসিক স্বাস্থ্য আইন আছে, মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। পাবনা মানসিক হাসপাতাল আরও বিস্মৃত করার কাজ চলছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে দেশব্যাপি। আটটি বিভাগে আটটি হাসপাতালে মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সিজোফ্রেনিয়ার সব রোগী যেনো চিকিৎসা পায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের চিকিৎসকরাই ভালো মানের সেবা দিতে পারেন, আমরা সেই ব্যবস্থাই করছি।
সিজোফ্রোনিয়া নিয়ে গাইডলাইনটি তৈরীতে সার্বিক সহায়তা করে সান ফার্মাসিউটিক্যালস (বাংলাদেশ) লি.। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথিসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয় আয়োজকদের পক্ষ থেকে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে