বর্তমান বিশ্বে সমকামিতার ব্যপকতা অনেক। পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে এই ব্যাধি। বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবস্থায় সমকামিতা ব্যাধি হিসেবেই পরিচিত। তাছাড়া ধর্মের দিক দিয়েও তা নিষিদ্ধ।
সমকামিতা নিয়ে তিনটি জোরালো বিতর্ক রয়েছে—১. সমকামিতা কি শারীরিক বা মানসিক রোগ? ২. সমকামিতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ না স্বাভাবিক? এবং ৩. সমকামিতা বা সমকামী সম্পর্ক/বিবাহের বৈধতাদান কতটুকু যৌক্তিক?
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, জন্মগতভাবে ব্যক্তির জিন বা হরমোনের বৈষম্যই (নেতিবাচক অর্থে ‘ত্রুটি’) সমকামিতার পেছনে দায়ী। যারা একে রোগ বলতে নারাজ তাদের প্রধান যুক্তি হলো, প্রাকৃতিক ও জন্মগতভাবে কোনো ব্যক্তি এই বৈষম্যের শিকার। অন্য দলের যুক্তিও আছে, প্রাকৃতিক বা জন্মগত কোনো ত্রুটিকে রোগ না বলার কোনো কারণ নেই। যেমন কেউ শারীরিক প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে, কেউ বুদ্ধি প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে জন্মালে আমরা তাকে ‘প্রতিবন্ধী’ হিসেবে চিহ্নিত করি। আর প্রতিবন্ধিত্ব একটি রোগ বলে বিবেচিত। তাই এই অর্থে সমকামিরা ‘যৌন প্রতিবন্ধী’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ বলছেন, রোগের স্বাভাবিক সংজ্ঞা অনুসারে যা কোনো মানুষকে শারীরিক বা মানসিকভাবে কষ্ট দেয় তাই যদি রোগ হয়, তবে সমকামিতা কোনো রোগ নয়। কারণ এতে কোনো ব্যক্তি শারীরিক বা মানসিক কষ্ট পায় না। এটি কোন ধরনের জেনেটিক বিকৃতি নয়, জেনেটিক রোগও নয়। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯০ সালে মানসিক রোগের তালিকা থেকে সমকামিতাকে বাদ দিয়েছে।
আবার আরেকটি অংশ বলছেন, সমকামিতা জেনেটিক নয়, মানসিক বিকারগ্রস্ততা। অপর অংশ একে রোগ মনে করে, কারণ সমকামীদের বিশেষ দুটি বিষয়ে মানসিক যন্ত্রণা রয়েছে—১. বিষমকামিদের যৌনকাম সমকামীদের মধ্যে হীনমন্যতা ও মানসিক বিকারগ্রস্ততার জন্ম দেয় যার ফলে অনেক সমকামী ধীরে ধীরে শিশুকামিতা, পায়ুকামিতা, পশ্বাচার (পশুর সঙ্গে যৌনসংগম), ধর্ষকামিতার মতো অবাধ ও উন্মত্ত যৌনাচারী হিসেবে গড়ে ওঠে; ২. সমকামীদের অতৃপ্ত পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের অবদমিত বাসনা এক সময় এতটাই প্রবল হয়ে উঠতে পারে যে, তারা যেকোনো সময়ে পিতৃ হন্তারক বা মাতৃহন্তারকও হতে পারে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিষমকামী নারীদের চেয়ে সমকামী নারীদের মানসিক সমস্যা (বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা, ফোবিয়া বা ভীতি, আত্মহত্যা প্রবণতা, মাদকাসক্তি ইত্যাদি) দ্বিগুণ ও উভকামী নারীদের সমস্যা তিনগুণেরও বেশি। সুতরাং তাদের মতে, প্রকৃতির স্বভাববিরুদ্ধ কোনো কিছুকে কখনোই রোগ না বলাটা যৌক্তিকতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না।
তবে সমকামীদের স্বর্গরাজ্য হলো নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম। সেখান থেকেই ২০০১ সালে সমকামী সম্পর্ক/বিয়ের বৈধতার যাত্রা শুরু। বাংলাদেশের আইন সমকামিতাকে এখনো প্রকৃতিবিরুদ্ধ মনে করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেওয়ার বিধান রেখেছে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোনো পুরুষ, নারী বা জন্তুর সঙ্গে প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করেন, সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। এ ধারায় বর্ণিত অপরাধীরূপে গণ্য হওয়ার জন্য যৌন সহবাসের নিমিত্তে অনুপ্রবেশই যথেষ্ট বিবেচিত হবে। আইনের ব্যাখ্যায় পায়ুকাম এবং পশ্বাচারকেই ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
স্যার নিওনার্ড ওলঙ্গের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ইরাক ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী এক স্থানে লুত নামে এক জাতি বসবাস করত। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত রয়েছে, এই জাতির মধ্যে সমকামিতা ছিল বলে মহান আল্লাহতায়ালা এই জাতির ওপর আসমানি গজব নাজিল করেছিলেন এবং তাদের ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক ইতিহাসেও সমকামিতার উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। দেবতা বিষ্ণু ও মহাদেব শিবের হরিহর রূপে মিলনের সবচেয়ে প্রচলিত উদাহরণ।
সুত্র- ডি ডব্লিউ বাংলা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে