রাতজাগা থেকে হতাশার মতো সমস্যা এবং প্রতিকার

0
51

বর্তমানে সময়ে তরুণদের কাছে রাতজাগা একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন, তারা অধিকাংশ সময়ে বলে আমি লেইট নাইটে ঘুরতে যাচ্ছি। আমি ঘুরতে গিয়ে স্টোরি দিচ্ছি। আমি সারারাত না ঘুমিয়ে হ্যাংআউট করেছি। আমি ঘুমাতে গিয়েছি ফজরের পর। বর্তমান সময়ে এটাই তাদের কাছে বড় ট্রেন্ড।

আর এই ট্রেন্ড তাদের ভালোর চেয়ে খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জীবনে বিনোদনের অবশ্যই প্রয়োজন। তবে সেই বিনোদনের জন্য জীবনের স্বাভাবিকত্ব নষ্ট করা উচিত নয়। এক-আধদিন নিজের প্রয়োজনে হয়তো রাতে কিছু সময় জাগা যায়, তবে সেটাই নিয়ম হয়ে যাওয়া উচিত নয়।

আর রাতজাগা নিয়মের মধ্যে হলেই সকালে তাড়াতাড়ি ওঠা সম্ভব হয় না। এখনকার অনেক বাচ্চা বা ভার্সিটির ছাত্ররাই সকাল ৮টার ক্লাস করতে পারে না। তারা আসলে ৬টায় ঘুমাতে যায় বলে নিজেরা ক্রেডিট নিয়ে থাকে। কিন্তু এটাতো ভালো কোন কথা নয়। এর ফলে আসলে তারা অগোচরে হতাশায় আচ্ছন্ন হচ্ছে, এটাই তারা বুঝছে না।

অনেকে আসলে কোভিড এর কথা উল্লেখ করে থাকে। এটা সত্য যে, কোভিডের কারণে ডিপ্রেশনের রোগী বেড়ে গেছে। তবে এর জন্য রাতজাগাও অনেক বড় একটা কারণ। রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়না বলে ছোট ছোট বাচ্চারাও উদ্বিগ্নতায় ভোগে। যার কারণে অল্প বয়সেই তাদের চোখের নিচে কালি পড়ে যাচ্ছে।

অনেকে আবার বলে, ঘুম আসে না রাতে। এটা শুরু হইছে এক বছর ধরে, ছয় মাস বা এক মাস ধরে। এটা তার জন্য নিয়মিত একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে তারা নিজেদের জীবনাচরণে ঘুমকে স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখেনি। এক সময় আমরাও রাত জেগে পড়ছি। তবে বিষয়টা আমরা ধারাবাহিকভাবে করিনি। কিন্তু এখন রাতজাগা নিয়মিত সমস্যা হওয়াতে হতাশাও বাড়ছে মারাত্মকভাবে। ফলে রাতজাগার দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের উঠেপড়ে লাগতে হবে এই সমস্যার সমাধানের খোঁজে।

আমাদের জানতে হবে যে, রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত আমাদের শরীরের হরমোন রিলিজের সময়। যা আমাদের মুড বুস্ট করতে সহায়তা করে। আর এটা তখনই রিলিজ হবে, যখন আপনি একটা শান্ত, নীরব জায়গায় অন্ধকারে ঘুমাতে শোবেন। যদি লাইট থাকে, তখনও এটা রিলিজ হয় না। এখন কেউ যদি রাত ২টার পর ঘুমাতে যায়, তখন কিন্তু সেই হরমোন রিলিজ করার সুযোগই পাচ্ছে না।

ফলে আমাদের ১১টার মধ্যে যেকোন বয়সী মানুষের ঘুমিয়ে যাওয়া উচিত। আর সকাল ৬টা-৭টার মধ্যে উঠে যাওয়া উচিত। তাহলে দেখা যাবে সবকিছু রুটিনে চলে আসবে। তখন রাত ৮টার মধ্যে খেয়ে ফেলতে হবে। তাহলে ঘুমানোর আগে দুই ঘন্টা পাওয়া যাবে, যা খাওয়া হজমে সাহায্য করবে। এছাড়া রাত ১০টার পরে তো খাওয়াই যাবে না। এটা কিন্তু শরীরের জন্য অস্বাস্থ্যকর।

রাতজাগা সমস্যার সমাধানে কিছু নিয়ম আমাদের মেনে চলা উচিত। নিচে তার কিছু জানানো হলো।

  • আমাদের ২ ঘন্টা পর পর খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • রাতের খাবার ৮টার মধ্যে খেয়ে শেষ করতে হবে।
  • রাতে শুয়ে গেলে মোবাইল থাকতে দূরে রাখতে হবে। এতটাই দূরে যে শোয়া থেকে উঠে হেটে গিয়ে নিয়ে আসা লাগে।
  • রাতের বেলা সকল ধরণের নেট কানেকশন অফ রাখতে হবে।
  • ভোরে ফজরের সময় উঠে যাওয়া উচিত।
  • সকালের কাঁচা রোদ্রে কিছুক্ষণ হাঁটা উচিত।
  • নিয়মিত ১ ঘন্টার জন্য হলেও শরীর চর্চা করা উচিত।
  • দিনের বেলা পরিশ্রমে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে।
  • অবশ্যই হেলদি খাওয়া খেতে হবে।লিখেছেন-

    তানজিনা চৌধুরী, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, ট্রিন।

    স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
    করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
    মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

    “মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

    https://youtu.be/WEgGpIiV6V8

Previous articleজোরে কোনো কথা বললে রেগে যায়
Next articleজাপানের সুইসাইড ফরেস্ট ও আত্মহননের গল্প

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here