দোকানে গেছেন খুব প্রয়োজনীয় কিছু কিনতে। কিন্তু বাসায় ফিরে এলেন হাতভর্তি কেনাকাটার ব্যাগ নিয়ে। এমন যদি দু-একবার হয়, তবে একে সাধারণই ধরা যায়। তবে যখনই বাজারে যাচ্ছেন, তখনই এমন হওয়া মোটেও স্বাভাবিক নয়।
কেনাকেটা করলে মন ফুরফুরে হয় এটা যেমন সত্য; তেমনি মাত্রাতিরিক্ত কেনাকাটা মানসিক রোগের কারণ। দেখা যাচ্ছে, আপনি বাজারে যাচ্ছেন। যা দেখছেন তাই কিনতে মন চাচ্ছে। পরে দেখলেন, এমন অনেক কিছুই কিনেছেন যা কোথায় রাখবেন, কি কাজে ব্যবহার করবেন- তা বুঝে উঠতে পারছেন না। অবস্থা যদি এমন হয় তবে আপনি শপঅ্যাহলিক। মানে অধিক পরিমাণে কেনাকাটায় আসক্ত। এটি একটি নেশার মতোন।
নিজের মনকে কোনোভাবেই কেনাকাটা থেকে দূরে রাখতে না পারা একটি মানসিক রোগ। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, শপঅ্যাহলিক মানুষ আসলে একটা মানসিক রোগে আক্রান্ত, যার আভিধানিক নাম ‘কম্পালসিভ বায়িং ডিজঅর্ডার’। কেনাকাটায় নেশাগ্রস্ত মানুষের আচরণে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
দোকানে গিয়ে কোনো কিছু কেনার সময় শপঅ্যাহলিকদের শরীরে ‘অ্যাড্রেনালিন’-এর গতি বেড়ে যায়। এটা তাঁদের একটা সাময়িক সুখের অনুভূতি দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কেনাকাটায় নেশাগ্রস্ত মানুষ কোনো কিছু কেনার সময় তাঁদের মস্তিষ্ক থেকে ‘ডোপামিন’ নামের একধরনের কেমিক্যাল নিঃসরিত হয়, যা আনন্দ-বেদনার সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেক উচ্চবিত্ত আর উচ্চমধ্যবিত্ত আবার ব্যক্তিগত আর পারিবারিক হতাশা, বিষণ্নতা থেকে দূরে থাকতেও ‘উড়াধুরা’ কেনাকাটা করেন। কেনাকাটা করে তাঁরা অনেক সময় যেটা কিনলেন, সেই প্যাকেট খুলেও দেখেন না। অন্যদেরও দেখান না, ব্যবহারও করেন না। কিনলেন, ওই পর্যন্তই। আবার নতুন কিছু কেনার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন তাঁরা। আর্থিক সচ্ছলতার সঙ্গে শপঅ্যাহলিকদের সুমধুর সম্পর্ক আছে। এখন অবশ্য কেনাকাটা অনলাইনে হয়ে পড়ায় শপঅ্যাহলিক হওয়া আরও সহজ হয়ে পড়েছে। ২০১৬ সালের গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৬ জন এ রকম অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন তাঁরা শপিংয়ে যান। অনেকে আবার প্রতিদিনই একটা নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখেন কেনাকাটার জন্য।
কেনাকাটায় মন ভালো হয়। রাগ বা মনের ওপর চাপ কমে। কিন্তু কেনাকাটা করেই হাতের সব টাকা শেষ করে ফেলাই প্রধান সমস্যা। এমন সমস্যার সমাধান কিছুটা কঠিন, তবে অসাধ্য নয়। নিজের কাছে টাকা রাখবেন না। কাছের সম্পর্কগুলোর প্রতি যত্নশীল হতে পারেন। নানা কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারেন। এই যেমন, নতুন কোনো কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলেন। সেটা হতে পারে সেলাই, রান্না বা গাড়ি চালানো অথবা নতুন কোনো ভাষা। সৃজনশীল কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারেন। শুরু করতে পারেন ছবি আঁকা, বাগান করা বা নতুন কোনো কাজ।
শপঅ্যাহলিকদের নিয়ে কত মন্দ কথা লিখলাম! শেষ করি একটি ইতিবাচক তথ্য দিয়ে। গবেষণা বলছে, যাঁরা শপঅ্যাহলিক, সাধারণদের চেয়ে তাঁদের কল্পনাশক্তি উন্নত। আর একটা কথা না বললেই নয়, বাজার অর্থনীতির চাকার ঘূর্ণনে কিন্তু শপঅ্যাহলিকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন!
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে