অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন দেশের মানুষ বেশী মানসিক রোগে ভুগছেন। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত। এদের কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন তো কেউ আবার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ফলে মানসিক বিষাদগ্রস্ত এসব রোগী এক পর্যায়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত হচ্ছেন।
গবেষণা বলছে, করোনা মহামারিতে তরুণ প্রজন্ম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঝুঁকি উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সরকারি হিসাব বলছে, পাবনা মানসিক হাসপাতাল ও ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে মহামারি শুরুর আগে মাসে যে সংখ্যায় রোগী আসত এখন তার চেয়ে গড়ে প্রায় ১ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। মনোচিকিৎসকদের মতে, মানসিক রোগের এখন ভয়াবহ অবস্থা। দীর্ঘ সময় ঘরের বাইরে যেতে না পারা, চাকরি হারানো, জীবিকা ও ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, প্রিয়জনের মৃত্যু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মানুষ মানসিকভাবে আগের চেয়ে বিপর্যস্ত। আশঙ্কা করা হচ্ছে মহামারীর পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে মানসিক রোগের মহামারী শুরু হতে পারে।
বেসরকারি সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের ‘করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মানসিক বিপর্যয় : একটি প্রায়োগিক জরিপ’ থেকে জানা যায়, করোনা মহামারী শুরুর পর (৮ মার্চ ২০২০-৮ মার্চ ২০২১) পর্যন্ত সর্বমোট আত্মহত্যা করে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন। এর মধ্যে ৩২২টি কেস স্টাডি থেকে দেখা যায় যে, আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৪৯ শতাংশই তরুণ-তরুণী। যাদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এ সময় দেশের ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে বলা হয়, করোনা সংক্রমণের কারণে মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে এই শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসেন ৪ হাজার ৭৪৭ জন রোগী। আর অক্টোবরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৭০ জন। আবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির এক জরিপ বলছে, করোনায় ৮০ শতাংশ যুবকের আয় কমে গিয়েছে। করোনার কারণে ৯৬ শতাংশ যুবকই বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে ৫৯ ভাগ জানান যে, তারা প্রকট মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। মূলত মানসিক স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন দেশে আশঙ্কাজনকহারে মানসিক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর মানসিক রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকেই দায়ী করছেন।
মহামারীতে দুই ধরনের মানসিক রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে একদল আছে যাদের করোনা সংক্রমণ না হলেও তারা সংক্রমণের ভয়, আত্মীয়-স্বজনদের করোনায় আক্রান্ত হতে দেখে উদ্বেগ থেকে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। আর আরেক দলে আছেন যারা করোনা সংক্রমণের পরে পুনরায় সংক্রমণের ভয় ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে আতঙ্কিত হয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এ ধরনের রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন।
মহামারীতে পুরনো রোগীদের সমস্যা আরও বেড়েছে এবং নতুন করে আরও অনেকেই মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে মহামারিতে সব ধরনের মানসিক রোগীর সংখ্যাই বৃদ্ধি পেয়েছে। মানসিক রোগে ভুগছে কোমলমতি শিশু-কিশোররাও। করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা ঘরবন্দী ছিল। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ায় শিশুরা আবার স্কুল-কলেজে যেতে পারছে। কিন্তু আগের মতো কোচিং, বিভিন্ন সৃজনশীল শিক্ষা যেমন-নাচ, গান, ছবি আঁকার ক্লাসে এখনো অভিভাবকরা শিশুদের পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। এর মধ্যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে অভিভাবকরা আবারও শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত। খেলার জন্য শিশুরা ঘরের বাইরে এখনো যেতে পারছে না। আবার ছুটির সন্ধ্যায় ঘুরতে যাওয়া আগের মতো হচ্ছে না সব মিলিয়ে চাপে আছে শিশু এবং তাদের অভিভাবকরা।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, লকডাউনের নিষেধাজ্ঞার কারণে শিশুরা বাইরে যেতে না পেরে এক ধরনের দম বন্ধ অবস্থার মধ্যে আছে। অথচ করোনার আগে শিশুরা সারা দিন স্কুল, কোচিং এবং বিভিন্ন ধরনের চর্চা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। শিশুরা এখন তাদের বন্ধুদের সঙ্গে আগের মতো দেখা করার সুযোগ পাচ্ছে না। ইন্টারনেটেই বেশি সময় কাটাচ্ছে। ফলে শিশুদের জীবনে এক ধরনের বিরক্তি চলে এসেছে। জীবনে কোনো বৈচিত্র্য না থাকায় শিশুরা একটি স্থবির জীবনে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে।
সব মিলিয়ে ভয়াবহ মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।
সুত্রঃ ইন্টারনেট
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে