কলেজ শিক্ষার্থীদের বয়স অনুসারে এই সময়ে তাদের মাঝে বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হওয়া বেশ স্বাভাবিক। এই মানসিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
কলেজগামী শিক্ষার্থীদের যে শুধু পড়াশোনা নিয়ে চাপের মাঝে থাকতে হয় তা কিন্তু নয় বরং মানসিক ও শারীরিক বিকাশের এই বিশেষ সময়ে শারীরিক ও মানসিক চাপও থাকে অনেকটা। ক্লাশ টাইম, নতুন পরিবেশ ও নতুন নিয়ম কানুনের সাথে প্রথম দিকে অনেক শিক্ষার্থীর মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়।
তাছাড়া সদ্য যৌবনে পদার্পণ করতে থাকা কিশোর কিশোরীদের মাঝে অনিয়ন্ত্রিত আবেগও থাকে বেশি। ফলে এ সময়ে বিভিন্ন কারণে বিষণ্ণতা এবং মানসিক চাপও সৃষ্টি হয় বেশি। তাদের চিন্তা ভাবনা, মানসিকতা সব কিছু খুব সহজে প্রভাবিত হয় এবং দ্রুত পরিবর্তিতও হয়।
বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে মনস্তত্ত্ববিদগণ এই সমস্যা সমাধানে কিছু বাস্তব ধর্মী কৌশল খুঁজে বের করেছেন। যেগুলো কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হওয়া মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা এবং একই সাথে অনিয়ন্ত্রিত আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
শিক্ষার্থীরা কলেজে বিদ্যার্জনের উদ্যেশে গমন করে। আর শিক্ষকবৃন্দ থাকেন তাদের সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করার জন্য। এই আদান প্রদানের সম্পর্কটি যখন জটিল হয়ে যায় অর্থাৎ শিক্ষক যখন শিক্ষক সুলভ আচরণ করে না বা শিক্ষার্থী ও তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তখনই সমস্যা সৃষ্টি হয়।
শিক্ষক বা শিক্ষার্থী একে অপরকে প্রতিপক্ষ মনে করে এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বদলে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটে। এটি কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের একটি অতি পরিচিত সমস্যা। এই সমস্যা নিরসনে উভয়েরই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করা প্রয়োজন। যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী একে অপরের প্রতিপক্ষ নয় বরং বন্ধু সুলভ আচরণ করবে। একে অপরকে সহায়তা করবে।
সহযোগী মনোভাব
সকল শিক্ষার্থীদের চাহিদা যেমন এক রকম হয় না তেমনি সকল শিক্ষকদের মানসিকতা এবং চাহিদাও ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়। শিক্ষক যদি সব শিক্ষার্থীর চাহিদার কথা মাথায় না রেখে নিজের খেয়াল খুশি মত অতিরিক্ত চাপ তাদের উপর প্রদান করেন তাহলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়াশুনায় অনীহা এবং ধীরে ধীরে অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা সৃষ্টি হয়।
আবার শিক্ষার্থী যদি শিক্ষকের মানসিকতা না বুঝে নিজের খেয়াল খুশী মত আচরণ করে তাহলেও শিক্ষকের নেতিবাচক ধারণার শিকার হয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝে পড়তে পারে। এই সমস্যা সমাধানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়কেই সহযোগী মনোভাবাপন্ন হতে হবে। এতে করে কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ইতিবাচক ও মানসিক চাপ মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
অভিভাবকদের সচেতনতা
শিক্ষার্থীদের যে কোন সমস্যা সমাধানে অভিভাবকগণ বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। যদি দেখেন আপনার কলেজ পড়ুয়া ছেলে বা মেয়ে বিষণ্ণতায় ভুগছে, মনোযোগ সহকারে পড়াশুনা করতে পারছে না বা করছে না। তাহলে অবশ্যই তাদের সাথে খোলামেলা কথা বলে তাদের সমস্যা জানার প্রয়াস করুন।
অভিভাবকেরা সচেতন হলে শিক্ষার্থীদের যে কোন মানসিক সমস্যার সহজে সমাধান হতে পারে। তাই অভিভাবকদের সচেতনতা ও ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করানো
অনেক সময়ই শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, শিক্ষক বা পিতামাতা উভয়ই সাধারণ ভাবে এই সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়ে যায়। এমন পর্যায়ে গেলে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ আবশ্যক হয়ে পড়ে। দেরী না করে তখন কাউন্সেলিং করানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাদের মানসিক সমস্যাগুলো অবশ্যই দূর হয়ে যাবে।
কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে তাদের মানসিক জটিলতা গুলো দূর করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতনতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝেও সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে