আপনার মাঝে কি যখন তখন, খুব সহজে যে কারও প্রেমে পড়ার মানসিকতা এবং প্রবণতা রয়েছে? তাহলে আপনি “ইমোফিলিয়া” নামক মানসিক প্রবণতায় ভুগছেন, যাকে এক কথায় “ইমোশনাল প্রমিসকিউটি” বা বাছবিচারহীন আবেগ বলা যায়।
অনেকের মুখেই শোনা যায়, “ আমি খুব সহজে প্রেমে পড়ি”, “আমি খুব সহজে আবেগ প্রবণ হয়ে যাই”, “আমি সহজে প্রেমে পড়ার অনুভূতিকে উপভোগ করি”, বা “ আমি ভাল-মন্দ বিচার না করেই প্রেমে পড়ে যাই” ইত্যাদি। এসব কিছুই অনিয়ন্ত্রিত বা বাছবিচারহীন আবেগের মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য। ইমোফিলিয়া অন্যান্য অনেক রোম্যান্টিক মানসিক অনুভূতি থেকে একটু ভিন্ন ধরণের। যেমন, কোন মানুষ যখন ইমোফিলিয়া দ্বারা তাড়িত হয়ে খুব সহজে কারও প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে বা প্রেমে পড়ে তখন এটি হয় তার মানসিক অনুভূতিগত অর্জন।
এর পেছনে কোন নেতিবাচক আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়ে কোন কিছু করার বা কারও প্রতি দুর্বল হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু অনেক সময় এমনও হয়, কারও কোন রকম বাছবিচার না করে কারও প্রতি দুর্বল হওয়ার পেছনে অনেক নেতিবাচক অনুভূতি বা মানসিক সমস্যা যেমন বিষণ্ণতা বা হতাশাও কাজ করে। এক্ষেত্রে নেতিবাচক অনুভূতি হতে পারে সঙ্গীর দ্বারা প্রতারণা, মনোযোগের অভাব, গুরুত্বের অভাব বা তার আবেগের অবমূল্যায়ন। এ ধরণের মানসিকতা থেকে যখন তখন কারও উপর দুর্বল হওয়াকে কখনোই ইমোফিলিয়া বলা যাবেনা।
খুব দ্রুত প্রেমে পড়া বিষয়টি অনেকের কাছেই বেশ মজার এবং রোম্যান্টিক মনে হতে পারে। কিন্তু এর একটি অতি নেতিবাচক দিক ও থাকতে পারে। বিশেষত যখন কেউ এমনভাবে কারণে অকারণে প্রেমে পড়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয়। তাছাড়া তাদের মাঝে কোন বিশেষ সম্পর্ক বা মানুষের প্রতি আবেগ, অনুভূতি খুব কম থাকে। তারা কাছের মানুষদের প্রতি যথোপযুক্ত মনোযোগ বা গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হয়। খুব সহজে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মত মানসিক অবস্থা থাকলে যে কেউ খুব সহজে সেই ব্যক্তিকে নেতিবাচকভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ পায়।
তাছাড়া বিভিন্ন গবেষণাতেও দেখা গেছে, এই ধরণের মানসিকতা একজন মানুষের চরিত্রের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সব কিছু মিলিয়ে বলা যায় এ ধরণের মানসিকতা নিজের, পরিবারের ও সমাজের জন্য অনেক সময় অসঙ্গতিপূর্ণ, অসামাজিক এবং নির্মম পরিণতি বয়ে নিয়ে আসতে পারে।
একজন ইমোফিলিয়ায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি খুব সহজে অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শুধু তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় তা নয়, বরং তাদের পক্ষে বিচার বিবেচনা করার শক্তিও লোপ পায়। তাছাড়া তারা তাদের নিজেদের প্রতি অন্যদের অনুভূতিকেও তাদের মানসিক অবস্থার কারণে যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারেনা। এতে সব দিক থেকে অনুভূতির এক চরম সংকট সৃষ্টি হয় এবং সম্পর্কের মাঝে প্রতিনিয়ত ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে থাকে।
তবে সকল সময় এই ইমোফিলিয়াকে সম্পূর্ণরূপে নেতিবাচক বলাও ঠিক হবেনা। তবে এর সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার মাত্রাই বেশী। তাই যদি কেউ এ ধরণের মানসিক সমস্যা বা অবস্থাকে চিহ্নিত করতে পারে তার জন্য এবং তার চারপাশের মানুষের জন্য এই মানসিকতাকে পরিত্যাগ করার প্রচেষ্টা করাই শ্রেয়। অন্যদের আপনার প্রতি যেন বিশ্বাস এবং ভরসা বজায় থাকে সেজন্য এটি থেকে যথা সম্ভব দূরে থাকাই বা এটিকে পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা করাই উত্তম। এতে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন গুলো আরও সহনশীল ও সুদৃঢ় হবে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে