শিশুদের মানসিক অবস্থার উপর স্ক্রিন টাইমের প্রভাব

করোনা আবহে শিশুদের শিক্ষাগ্রহণ সহ বিভিন্ন কাজ এখন প্রায় পুরোটাই অনলাইন নির্ভর। ফলে তাদের স্ক্রিন টাইম অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর প্রভাব পড়ছে শিশুদের মানসিক অবস্থার উপর।

করোনা মহামারী শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার স্বাভাবিক জীবনেই নিয়ে এসেছে চরম বিশৃঙ্খলা। দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, সামাজিক মেলামেশা সব কিছুই বন্ধ রয়েছে। আমরা এখন ঘরে থেকেই আমাদের এসব কাজ চালিয়ে নেবার প্রয়াস করছি। বড়রা তাদের পেশা গত কাজ অনলাইনে করছে। শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থাও এখন অনালাইন ক্লাশ  নির্ভর। এমনকি কেনাকাটা, বাজার সদাই সব কিছুর জন্যই এখন অনালাইন একটি সুরক্ষিত এবং সহজ উপায় হয়ে উঠেছে। আর এ কারণে, সব বয়সী মানুষের মাঝেই বেড়েছে স্ক্রিন টাইমের পরিমাণ। আমরা সারাক্ষণ ঘরে থেকে প্রয়োজনীয় কাজ করা ছাড়াও সময় কাটানোর অন্যতম উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছি টিভি দেখা কিংবা মোবাইল ফোন ব্যবহারের মতো কাজ গুলিকে। বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও এখন বেশী মাত্রায় এসব কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। একটি শিশু দিনের প্রায় দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টা অনালাইন ক্লাশ করছে। আবার গেইম খেলা, টিভিতে কার্টুন দেখা ইত্যাদি কাজের জন্য স্ক্রিন টাইম বহু গুণে বেড়ে গেছে। যেখানে পূর্বে যে সব পিতা মাতা তাদের সন্তানদের দিনে আধা ঘণ্টার বেশী মোবাইল ফোন বা টিভি দেখার অনুমতি দিতেন না, তারাই এখন বাধ্য হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিশুদেরকে মোবাইল ফোনের সাথে ছেড়ে দিচ্ছেন।  টিভি দেখার সুযোগ দিচ্ছেন। করোনা কালীন এই অস্বাভাবিক অবস্থায় বাধ্য হয়ে তারা সন্তানের স্ক্রিন টাইমকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। আর এর দুস্প্রভাব পড়ছে শিশুদের মানসিক অবস্থার উপর। এখন এটা প্রায় প্রমাণিত যে, এই সুদীর্ঘ স্ক্রিন টাইম শিশুদের মাঝে বিভিন্ন মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করছে যা একদমই হেলাফেলা করা উচিৎ নয়।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি শিশু যখন অধিক থেকে অধিক সময় টিভিতে কার্টুন দেখে বা অন্য কিছু দেখে, তার মাঝে হঠাৎ রেগে যাওয়া, অসামাজিক আচরণ, অতিরিক্ত দুরন্তপনা সহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। এর কারণ হিসেবে মনস্তত্ত্ববিদগণ উল্লেখ করেছেন যে, যখন একটি শিশু দীর্ঘ সময় ধরে এক স্থানে স্থির হয়ে বসে টিভি দেখে তখন শরীর স্থির থাকলেও মানসিক অবস্থা থাকে অত্যন্ত বিচলিত। যখন তাকে এই অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় যেতে হয় অর্থাৎ শারীরিক কোন কাজ করতে হয় তখন তার মানসিক অবস্থার সেই অস্বাভাবিক অবস্থা তাকে স্থির থাকতে দেয়না। ফলে শিশু অতি মাত্রায় চঞ্চল হয়ে ওঠে।

আবার, অতি মাত্রায় মোবাইল ফোনে সময় কাটালে সেটিও শিশুদের মানসিক অবস্থার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাদের মাঝে অতিরিক্ত যিদ, একগুঁয়েমি মনোভাব, অতি মাত্রায় ক্রোধ, ধৈর্য হীনতা, ক্ষুধা মন্দা সহ অন্যান্য মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। যা শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের পথে চরম অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

তাছাড়া, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুর শারীরিক ক্ষতিরও কারণ হয়ে উঠতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় শিশু চোখে কম দেখছে বা মাথায় ব্যাথা সহ নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

শিশুদের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশ ত্বরান্বিত করতে এই স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আমাদেরকে এটি খেয়াল রাখতে হবে যে তারা যেন শারীরিক কসরত করে। আর যেহেতু শিশুরা বাইরে খেলতে যেতে পারছেনা, বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করতে পারছেনা, তাই পিতামাতার বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে তারা যেন ঘরে থেকেই খেলাধুলার সুযোগ পায়, একাকী অনুভব না করে।

পরিশেষে এটি বলা যায় যে, মহামারীর এই দুঃসময়ে শিশুদের শিক্ষা সহ অন্যান্য অনেক কাজই হয়তো এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। চাইলেও হয়তো আমরা এটি নিবারণ করতে পারছিনা। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব যেন কমিয়ে আনা যায় সে লক্ষ্যে উপরে উল্লেখিত অন্যান্য কাজ গুলি করতে হবে। এতে শিশুর মানসিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হবেনা এবং শিশু সুস্থ থাকবে।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleমানসিক কষ্টের অভিজ্ঞতা এড়িয়ে গেলেই মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়না
Next articleজানেন কি, আপনার মন আসলে কি চায়?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here