মানসিক কষ্টের অভিজ্ঞতা এড়িয়ে গেলেই মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়না

মানসিক কষ্টের অভিজ্ঞতা এড়িয়ে গেলেই মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়না
যখন মানুষ নিজের মানসিক অবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, কষ্টে দুঃখে নিমজ্জিত হয়, তখন সে ভেবে নেয় যে, পরিস্থিতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেই বুঝি সব কিছুর সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু তেমনটি কখনোই হয়না।

সুখ, দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবন। দুঃখের সময়ে মানসিকভাবে নিজেকে শক্ত রাখা খুবই প্রয়োজন।  নিজের দুর্বলতাগুলো এড়িয়ে গেলে বিপদ সব সময়ই বাড়ে,কখনোই কমেনা।

কোন কারণে মন যখন বিচলিত থাকে, অনেকেই নিজেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ত রাখে। আবার অনেকে শারীরিক কোন চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও এ সময়ে প্রচুর খেয়ে ফেলে এবং নিজেকে খাওয়ার মাঝে ব্যস্ত রাখে। চেষ্টা করে নিজেকে সে সব চিন্তা থেকে মুক্ত রাখার যেগুলো তাকে মানসিকভাবে পীড়া দিচ্ছে। তবে প্রকৃতপক্ষে এই কাজগুলো সাময়িক কিছুটা প্রশান্তি দিলেও দীর্ঘস্থায়ী কোন উপকার করতে পারেনা।

আমরা সবাই চাই যেন আমাদের মানসিক কষ্ট বা যন্ত্রণা খুব দ্রুত দূর হয়ে যায়। এ কারণে আমরা অনেক সময় না ভেবে চিন্তে অনেক কাজই করে ফেলি। যেগুলো বিপদ থেকে মুক্তি তো দেয়ই না, বরং আরও দীর্ঘস্থায়ী মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে।

১) মনোযোগ অন্যদিকে স্থানান্তরিত করাঃ চলচ্চিত্র দেখা, নেশা করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অত্যধিক সময় অতিবাহিত করা, কিংবা অত্যধিক মাত্রায় খাওয়া- এই সবই একজন মানুষ নিজের মনোযোগ অপ্রীতিকর কোন চিন্তাভাবনা বা মানসিক কষ্ট থেকে অন্য দিকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য করে। কিন্তু এগুলো মানসিক কষ্টের কোন দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দেয়না। বরং এগুলো তাকে দিন দিন আরও অসুস্থ করে তোলে।

২) বিপরীতমুখী পরিবেশ এড়িয়ে চলাঃ অনেকেই নিজেকে একটি পরিচিত বলয়ের মাঝে আবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করে। নতুন পরিবেশ, নতুন চাকরীতে অনেকেই বিপদের সম্মুখীন হয়, অস্বস্তিকর এবং লজ্জাজনক অবস্থায় পড়ে এবং অনেক সময় লক্ষ পূরণেও ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য অনেকেই নিজের চিরাচরিত গণ্ডির বাইরে যেতে চাননা। এতে তার পৃথিবী আরও ছোট হয়ে যায় এবং এটি অনেকাংশেই বিষণ্ণতাকেও বাড়িয়ে দেয়।

৩) নিজেকে তাৎক্ষণিক সন্তোষে আচ্ছন্ন রাখাঃ সাময়িক আনন্দে অনেকেই নিজের সন্তোষ খুঁজে নেয়। এটাকেই জীবনে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তারা এটা ভুলে যায় যে জীবনে উন্নতি করতে হলে কষ্ট সহ্য করতেই হয়। নিজেকে একাগ্র রাখতে হয় এবং চেষ্টা করতে হয়। তবেই সাফল্য আসে। কিন্তু দুঃখ কষ্টের ভয়ে মানুষ সস্তা আনন্দের পথই বেছে নেয়। যা জীবনে তাকে সাফল্যের স্বাদ পেতে বাঁধা দেয়।

সবারই উচিত মানসিক দৃঢ়তা অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা। এটি একটি দ্বিমুখী পন্থা স্বরূপ। আপনি যত বেশি মানসিক দৃঢ়তা অর্জন করবেন, মানসিক কষ্ট ভুলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ আপনার জন্য ততোটাই সহজ হবে। আর আপনি যত ভালোভাবে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, ততোটাই ভালোভাবে মানসিকভাবে সক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন।

অস্বস্তিকর অবস্থা মোকাবেলা করতে পারাটাও একটা দক্ষতা। অন্যান্য দক্ষতার মত এটির উন্নতি করতে হলেও অনুশীলন প্রয়োজন। নিজের যোগ্যতার উপর যত বেশি বিশ্বাস অর্জন করবেন, নিজের উপর ভরসা যত বাড়বে, আপনার মানসিক কষ্ট দূর হয়ে মানসিক দৃঢ়তা ততো বাড়বে এবং ব্যক্তিত্ব ততোটাই পরিপক্ক হবে।

তথ্যসূত্র: সাইকোলজি টুডে- https://www.psychologytoday.com/us/blog/what-mentally-strong-people-dont-do/201910/3-times-avoiding-misery-causes-misery

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleঅ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা: ওজন বাড়ার ভয়
Next articleশিশুদের মানসিক অবস্থার উপর স্ক্রিন টাইমের প্রভাব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here