শিশুদের মাস্ক ভীতি

0
59
শিশুদের মাধ্যমে নীরবে ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস
মহামারীর সময়ে যখন মাস্ক পরা সবার জন্যই বাধ্যতামূলক তখন এই বিষয়টি শিশুদের মানসিক অবস্থার উপর কি ধরণের প্রভাব ফেলছে সেটি নিয়েও আমাদেরকে ভাবতে হবে।

অনেক সময়ই দেখা যায় বেশ ছোট শিশুরা জোকার দেখলে ভয় পায়। এমনকি, মুখে দাড়ি থাকলে বা চশমা পরিহিত কাউকে দেখলেও তারা ভয় পায়। শিশুদের এ ধরণের মানসিকতা সাধারণ মানসিক বিকাশের অন্তর্গত অপরিচিত কোন কিছুর প্রতি ভয়ের কারণে পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত তাদের মনের মাঝে কোন ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি যে পরিচিত ছবি থাকে সেই ছবি কোন কারণে বিকৃত বা পরিবর্তিত হলে তারা সেটিকে নেতিবাচক ভাবে গ্রহণ করে এবং সেই ব্যক্তি বা বস্তুকে দেখে ভয় পায়। মানুষের বিবর্তনের সাধারণ নিয়ম অনুসারে শিশুদের এই ভয় পাওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি বিষয়। শিশুরা ছোট বেলায় যখন কথা বলতে এবং হাঁটা চলায় অপটু থাকে তখন তারা নিজের দৃষ্টিশক্তির মাধ্যমেই অন্যান্যদের সাথে পরিচিত হওয়া এবং যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করে। চোখই তাদের আত্মার এবং মনের জানালা হয়ে কাজ করে। তাই চোখে কোন অপরিচিত কিছু ধরা পড়লে তারা মানসিকভাবে বিচলিত হয়ে পড়ে এবং ভয় পায়।

এসব কারণে, যখন একজন মানুষের মুখের স্বাভাবিক রূপ মাস্কের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় তখন একটি শিশুর মানসিক অবস্থার উপর এর কি প্রভাব পড়তে পারে বলে আপনার মনে হয়? তাদের কাছে পরিচিত কাউকেও অপরিচিত মনে হয় এবং সঙ্গত কারণেই অপরিচিত ব্যক্তি তাদের মাঝে ভীতি সঞ্চার করে। মাস্ক শিশুর কাছে একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক পরিচয়কে অজ্ঞাত রাখে এবং শিশু তার মনে ধরে রাখা পরিচিত ছবির সাথে এর মিল না পাওয়ায় মূল বিড়ম্বনার সূত্রপাত হয়। তারা অপরিচিত ভেবে পরিচিত মানুষকেও নিজের প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে এবং ভয় পায়। অনেক শিশুই মাস্ক পরিহিত কেউ কাছে আসলে ভয়ে কেঁদে ফেলে এবং তার দিকে ফিরে তাকাতেও ভয় পায়। এ কারণে অনেক অতিথি বা আত্মীয়ই এতে বেশ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। পরিবারের অন্যান্যরাও শিশুর এমন আচরণে কি করবেন সেটি বুঝে উঠতে ব্যর্থ হন।

মহামারী থেকে সুরক্ষিত থাকতে এখন পর্যন্ত কার্যকরী উপায় গুলোর মধ্যে জীবাণুমুক্ত থাকা, মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া আর কিছু আমাদের আওতার মধ্যে নেই। করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে মাস্কের বিকল্প যেহেতু কিছু নেই তাই শিশুদের মাস্ক ভীতি কাটিয়ে উঠতে আমাদেরকেই প্রয়াস করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই বাইরে যাওয়ার সময় শিশুরা মুখে মাস্ক পরতে চায়না। আর এতে তাদের দোষ দিলেও আমাদের ভুল হবে। স্বাভাবিকভাবেই তারা মাস্ক পরতে চাইবেনা কিন্তু আমাদেরকে প্রয়াস করতে হবে। মাস্ককে তাদের কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য বস্তুর মতোই পরিচিত করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই পিতা মাতার মুখে মাস্ক দেখে শিশুরা ভয় পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে মাস্ক তাদের সামনে খুলে তাদের বোঝাতে হবে যে মাস্কের আড়ালে তার সেই পরিচিত মুখটিই রয়েছে। তাকে অপরিচিত ব্যক্তি ভেবে পরিচিত মানুষের প্রতি তৈরি হওয়া মানসিক চাপ মুক্ত রাখার জন্য এটি খুবই প্রয়োজন। আপনি যদি শিশুর সামনে আচমকা মাস্ক পরিহিত অবস্থায় এসে দাঁড়ান তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সে আপনাকে চিন্তে পারবেনা এবং ভয় পাবে। তাই শিশুর সামনে আচমকা আসার আগে মাস্ক খুলে আসতে পারেন। আবার তার সামনে এসেও মাস্ক পরতে পারেন। এতে সে আশ্বস্ত হবে যে মাস্কের আড়ালে তার পরিচিত ব্যক্তিই রয়েছে। এতে তার ভীতি কিছুটা হলেও কমবে।

যেহেতু করোনা কালে মাস্ক পরা ছাড়া অন্য কিছু করার সুযোগ নেই, তাই শিশুদের মাঝে স্বভাবত কারণেই যে মাস্ক ভীতি রয়েছে সেটি দূর করার প্রয়াস আমাদের করতে হবে। তাদের কাছে মাস্ককে দৈনন্দিন আর দশটা বস্তুর মতোই পরিচিত করে তুলতে হবে, অন্তত প্রয়াস করতে হবে। বড়দের সাথে সাথে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাদের সুস্থ মানসিক বিকাশে সুস্থ মন মানসিকতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। তাই বড়দেরকে শিশুদের এই ভয় পাওয়াতে বিরক্ত হলে চলবে না। বরং গুরুত্ব দিয়ে এই ভীতি দূর করার প্রয়াস করতে হবে।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleবিষণ্ণতা: কত প্রকার-যত প্রকার
Next articleমিডিয়ার দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here