স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে তখনই স্ট্রেস হরমোন নিঃসরিত হয় যখন আমরা খুব অপরিচিত এবং অনভ্যস্ত অবস্থায় পড়ে যাই। এটি যে কোন সময়ে যে কারও সাথেই হতে পারে। অনাকাঙ্ক্ষিত যে কোন কিছুই আমাদের মানসিক চাপের মাঝে ফেলে দেয় এবং আমাদের মস্তিষ্ক থেকে স্ট্রেস হরমোন নির্গত হয়। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও বিশেষ সমস্যার কারণ তখন হয়ে ওঠে যখন এর মাত্রা বেড়ে যায়।
মানসিক চাপের কারণে যখন আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত হয় তখনই এটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয় যার সমাধান করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
যখন অধিক মাত্রায় স্ট্রেস হরমোন নিঃসরিত হয় আমাদের নার্ভাস সিস্টেম আমাদের হৃদ যন্ত্রের গতি বাড়িয়ে দেয়, শ্বাসপ্রশ্বাসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, আমরা অধিক মাত্রায় ঘামি এবং আমাদের মানসিক উত্তেজনাও বেড়ে যায়। এভাবে যখন আমরা অত্যধিক মাত্রায় মানসিক চাপের মাঝে থাকতে শুরু করি আমাদের নার্ভাস সিস্টেম একেবারেই অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করতে শুরু করে। মানসিক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও অকারণে আমাদের নার্ভাস সিস্টেম অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করতে থাকে। এ কারণে, মানসিক চাপের স্থায়ী সমাধান করতে হলে আমাদের প্রথমে নার্ভাস সিস্টেমকে পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। নাহলে কোন বড় ধরণের দুর্ঘটনা যে কোন সময় আমাদের সাথে ঘটতে পারে।
আমাদের নার্ভাস সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের প্রথমেই প্রয়োজন মস্তিস্ককে এই সংকেত পাঠান যে আমাদের চারপাশের পরিবেশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছলে মস্তিষ্ক থেকে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হবে এবং আমাদের নার্ভাস সিস্টেম পুনরায় আমাদের নিয়ন্ত্রণে এসে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করবে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকা মানুষ ঠিক এই কাজটিই করতে ব্যর্থ হয়। তারা মস্তিষ্ককে এই সংকেত পাঠাতে ব্যর্থ হয় যে আমাদের চারপাশের পরিবেশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ কারণে তদের নার্ভাস সিস্টেম স্বাভাবিক আচরণ না করে অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করে। যেমন, কোন রকম মানসিক চাপে যদি আমাদের হৃদ যন্ত্রের গতি বেড়ে যায় আমরা এটা ভেবে নেই যে আমাদের হয়তো হার্ট এট্যাক করবে বা আরও খারাপ কিছু হয়ে যাবে। এতে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে আরও বেশি পরিমাণে স্ট্রেস হরমোন নিঃসরিত হয় এবং আমাদের মানসিক চাপ আরও বৃদ্ধি পায়।
এই স্ট্রেস হরমোনের কারণে আমাদের শরীর ঘামতে শুরু করে এবং হৃদ যন্ত্রের গতি আরও বেড়ে যায়। এ সময় আমাদের মাঝে চিন্তা শক্তি লোপ পায় এবং এই পরিস্থিতি আমাদের মনে হার্ট এট্যাকের ধারণা আরও প্রবল হয় কিন্তু আসল পরিস্থিতি কিন্তু মোটেও তেমনটা নয়। এভাবেই পরিস্থিতির প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এবং মস্তিষ্ককে ভুল সিগন্যাল পাঠিয়ে আমরা অনেক ছোট বিষয়কেও অনেক বড় বানিয়ে ফেলি এবং অযথা অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতি সাধন করে।
একজন ব্যক্তি নিজের চেষ্টাতেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। এজন্য প্রয়োজন স্থির মানসিক স্থিতি এবং ইচ্ছা শক্তি। ইচ্ছা শক্তি থাকলে মানুষ অনেক মানসিক চাপের মধ্যেও স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে পারে আবার স্বাভাবিক অবস্থাকেও অস্বাভাবিক করে তুলতে পারে। মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের উচিৎ সে সব পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা যা আমাদের মানসিক চাপ বাড়ানোর পেছনে কাজ করে। আমাদের শুধু আমাদের মস্কিস্ককে এই সিগন্যাল পাঠাতে হবে যে আমারা সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারি এবং সব কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মস্কিস্ক যখন স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করবেনা আমাদের নার্ভাস সিস্টেমও সুষ্ঠু ভাবে কাজ করতে পারবে।
এভাবে আমরা অতিরিক্ত মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ জীবন যাপন করতে পারব।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে