মহামারীর এই দুঃসময়ে সুস্থ থাকতে শরীরের সাথে সাথে মনটাকেও রাখতে হবে চাঙা এবং লালন করতে হবে ইতিবাচক মানসিকতা।
কোভিড-১৯ মহামারীর অসুস্থ সময়ে আমাদের সুস্থ জীবন যাপনের জন্য মানসিকভাবে সুস্থ থাকা এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটানো খুবই জরুরী। ইতিবাচক মানসিকতা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে আমাদের মধ্যে এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার লক্ষ্যে ধৈর্য ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রেখে আমাদের শারীরিক সুস্থতা বিধান করে।
বিভিন্ন সময়ে করা বিভিন্ন গবেষণায় আমাদের সুস্থ জীবন যাপনের জন্য সুস্থ মনের গুরুত্ব কতোটা সেটি তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে যে একজন ব্যক্তি যখন তার মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা লালন করতে পারে তখন মহামারীর মত দুঃসময়ে তার মধ্যে আত্মহত্যার মত প্রবণতা গুলো হ্রাস পায়, দৈনন্দিন জীবনে অন্যান্যদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকে এবং নেতিবাচক মানসিকতার দুস্প্রভাব মুক্ত থেকে জীবনে সব কিছুর মাঝে একটি সামাঞ্জস্য বিধানের ক্ষমতা তৈরি হয়।
একজন মানুষের ইতিবাচক মানসিকতা বিকাশের লক্ষ্যে যথাযথ প্রচেষ্টা করার আগে জানা প্রয়োজন ইতিবাচক মানসিকতা বলতে প্রকৃতপক্ষে কি বোঝায় এবং সুস্থ জীবন যাপনে এটি কিভাবে আমাদের সহায়তা করে। ইতিবাচক মানসিকতা হল কঠিন সময়ে বা প্রতিকূল পরিস্থিতেও ভেঙ্গে না পড়ে সব কিছু সামলে নেওয়ার আত্মবিশ্বাস, জীবনের সব রকম অবস্থায় মনে সন্তুষ্টি বজায় রাখা এবং নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পূর্ণ আধিপত্য। যেমন ধরুন, মহামারীর মত দুঃসময়ে আমাদের মধ্যে মহামারী নিয়ে চরম আশংকা কাজ করছে। সংক্রমণের ভয় আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে।
অনেকের মনের মাঝেই সারাক্ষণ নেতিবাচক সব চিন্তাভাবনা ঘুরছে এবং এই বিপদ যে আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো সেই আত্মবিশ্বাস এবং সাহসই হারিয়ে গেছে। আর একজন ব্যক্তির মধ্যে যদি ইতিবাচক মানসিকতা থাকে তাহলে তার মধ্যে লড়াই করে টিকে থাকার মানসিকতা থাকবে। বিপদে মনে সাহস রেখে সুন্দর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার মত সাহস এবং আত্মবিশ্বাস থাকবে। মূল কথা, সব কিছু নিয়ে তার মাঝে ভালো কিছু ভাবার বা করার মত আত্মবিশ্বাস থাকবে এবং মানসিক সব সমস্যা মুক্ত থেকে আবেগ অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হবে। আর মনস্তাত্ত্বিক এমন অবস্থা একজন ব্যক্তির ইমিউনো সিস্টেমকে ভালো রাখে এবং শারীরিক ভাবেও সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।
মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিকূল সময়ে সুস্থ থাকতে ইতিবাচক মন মানসিকতা অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যেমন, এই মহামারী কালীন সময়ে নিজেকে সুস্থ রাখতে আমাদের নিজেদের মানসিক অবস্থাকে আগে সুস্থ রাখার প্রয়াস করতে হবে। কারণ নেতিবাচক মানসিকতা আমাদের শরীর ও মনের উপর আরও বিরূপ প্রভাব বিস্তার করবে এবং আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বো।
প্রতিকূল সময়ে আমাদের মনোযোগ সাধারণত নেতিবাচক দিকেই বেশী থাকে। আমরা পরিস্থিতির চাপে আমাদের মন এবং অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হই। আর এটাই হয় আমাদের সব থেকে বড় পরাজয়। আমাদের মন অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাদের শরীর ও সসুস্থ হয়ে পড়ে কারণ শরীর ও মন অঙ্গাঙ্গী ভাবেই জড়িত। আমাদের মানসিক স্থিতিই বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থায় আমাদের অবস্থা কি হবে সেটি নির্ধারণ করে। আমরা যদি ইতিবাচক মানসিকতা লালন করে বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে পারি তাহলে নেতিবাচক অবস্থা থেকে আমরা দ্রুত মুক্তি পাবো এবং শরীর ও মন সব কিছু দিয়ে বিপদ মোকাবেলা করার শক্তি পাবো।
মানুষ মাত্রই তার মাঝে আবেগ অনুভূতির প্রভাব থাকবে। কিন্তু আমাদের উপর যেন এই অনুভূতি তার নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে সেটি আমাদেরকেই খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আমাদের আবেগ অনুভূতি এড়িয়ে যাবনা। বরং সেগুলোকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাবো। যেমন, এই মহামারীর সময় আমাদের উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা এগুলো স্বাভাবিক। কিন্তু এগুলোকে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে দিলে চলবেনা। এগুলোকে আমরা আমাদের জন্য সতর্কীকরণ বার্তা হিসেবে নিয়ে করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে কাজে লাগাবো এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রেখে ইতিবাচক মানসিকতার বিকাশ ঘটিয়ে এই বিপদ মুক্তির ভাবনা ভাববো।
সুস্থ মনই সুস্থ শরীরের ভীত গড়ে দেয়। আর অসুস্থ মন কখনোই শরীরকে সুস্থ থাকতে দেয়না। তাই কোভিড-১৯ এর এই দুঃসময়ে মনকে সকল রকমের নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে রেখে আমাদের সুস্থ মন ও সুস্থ শরীরের যুগলবন্দী সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই জীবন যাপন সুস্থ হবে।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে