করোনা যেমন পৃথিবীব্যাপী মহামারীর আকার ধারণ করেছে তেমনি এর ফলে উৎপন্ন মানসিক সমস্যা গুলো বিশেষ করে একাকীত্ব একইভাবে আমাদের ক্ষতি সাধন করে চলেছে। করোনা থেকে যেমন সুরক্ষিত থাকা প্রয়োজন, একাকীত্বের মত মানসিক সমস্যাগুলোর ও যথাযথ সমাধান প্রয়োজন।
করোনা থেকে বাঁচতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের গৃহবন্দী করে রেখেছি। স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে, আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সবার থেকে আলাদা হয়ে নিজেদেরকে একদম এক আলাদা দুনিয়ার বাসিন্দা করে ফেলেছি। সারা দিন ঘরে বসে শুধু দিন থেকে রাত আর রাত থেকে দিন হতে দেখছি। মানসিক স্বস্তি নেই, নেই কাজের চাপ, কিংবা বাইরে যাবার তাড়া। সারা জীবন যারা ভেবে এসেছে ঘরে থাকতে পারলে, একটু ছুটি পেলে আর কিছু চাইনা, আজ তারাই বাইরে যাবার জন্য, কাজে যোগদানের জন্য ছটফট করছে। দীর্ঘ দিন ধরে আমরা গৃহ বন্দী। না আমাদের সাথে কারও দেখা হচ্ছে, না কারও সাথে কথা বলতে পারছি। আমরা ভুলেই গেছি শেষ কবে বাইরে ঘুরতে গেছিলাম বা কবে আমাদের কাছের মানুষদের সাথে আমাদের দেখা হয়েছে। আর এই মনকষ্ট, এই একাকীত্ব সব বয়সের মানুষকেই পীড়া দিচ্ছে। ঘরে থেকেও তাই আমরা সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারছিনা।
আমরা সামাজিকভাবে, সবার সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে অভ্যস্ত। আর একাকীত্ব হল মানুষের এমন এক মানসিক অবস্থা বা অনুভূতি যার ফলে সে ভাবে তার মনের ভাব আদান প্রদান করার মত কেউ নেই, তাকে বোঝার মত কেউ নেই। সে নিজেকে সব কিছু থেকে পৃথক মনে করে। এটি একটি নেতিবাচক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ, এক ধরণের মানসিক ও সামাজিক পীড়া। একাকীত্ব মানুষের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতাকে হ্রাস করে, তাকে অবসাদগ্রস্ত করে দেয় এবং তার নিদ্রা ও মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। করোনার সময়ে সুরক্ষিত থাকতে আমরা সামাজিক দূরত্ব, আইসোলেশন ইত্যাদি মেনে চলছি। আর এই আইসোলেশন হল একাকীত্ব সৃষ্টির একটি অন্যতম প্রধান কারণ। বিশেষত যারা একাকী বসবাস করে তাদের মাঝে তীব্র একাকীত্ব সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা পরিবার ও বন্ধুদের থেকে পৃথক রয়েছে এবং করোনার ফলে তাদেরকে এভাবে একাকী থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে এমন জীবন যাপন করার ফলে তাদের মধ্যে আরও বেশী মানসিক সমস্যা যেমন উদ্বিগ্নতা, হতাশা, বিষণ্ণতা ইত্যাদি সৃষ্টি হচ্ছে যা ধীরে ধীরে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করছে, তাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিচ্ছে এবং তাদের এক সামগ্রিক ভয়াবহ সমস্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমনকি আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটাতে বাধ্য করছে।
করোনা নিয়ে আমরা যেমন অত্যন্ত চিন্তিত, তেমনি এই মানসিক সমস্যা গুলো নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। আমাদেরকে বুঝতে হবে আইসোলেশন আমাদের এক ধরণের প্রতিক্রিয়া মাত্র। এটা কোন দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়। আমাদের এই দুঃসময় অবশ্যই সমাপ্ত হবে। কিন্তু সে পর্যন্ত আমাদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। এমনটা নয় যে একাকীত্বকে অস্বীকার করতে হবে। বরং এই একাকীত্বকে আমাদের স্বীকার করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। যে কোন বিরূপ অবস্থা মোকাবেলা করার প্রথম পদক্ষেপ হল সেটিকে স্বীকার করে নেওয়া। আমাদেরকেও এই পরিস্থিতি এবং একাকীত্বকে মেনে নিতে হবে। স্বীকার করতে হবে। নিজের আবেগকে কখনো অবহেলা করলে চলবে না। আমাদের অন্যান্য ভালোলাগা মন্দ লাগা নিয়েও ভাবতে হবে। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে বিভিন্ন কাজে। সর্বদা ইতিবাচক মানসিকতা লালন করতে হবে। নতুন নতুন কাজ শেখার প্রচেষ্টা করতে হবে। আর অত্যধিক সমস্যায় অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে। নিজের প্রচেষ্টায় কিংবা একজন চিকিৎসকের পরামর্শে একটি অর্থপূর্ণ জীবন যাপন করার চেষ্টা করতে হবে।
আমাদেরকে আশাহত হলে চলবে না। হয়তো আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত নই, কিন্তু আমরা আশা ছাড়তে পারিনা। আমাদের স্বদিচ্ছা, স্বপ্ন এবং ইতিবাচক মানসিকতাই আমাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। একাকীত্ব সহ সব ধরণের মানসিক সমস্যা নিবারণ করতে পারলে তবেই আমরা ঘরে থেকে সুরক্ষিত থাকার ফল সঠিকভাবে পাবো। আমরা সুস্থ থাকতে চাই এবং অবশ্যই সুস্থ থাকবো।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন