অনলাইনে যৌন হয়রানীর শিকার হয়ে বেশির ভাগ মেয়েরা হয়ে পড়ছে মানসিকভাবে বির্পযস্ত। যার প্রভাবে পরবর্তী সময়ে দেখা দিতে পারে র্দীঘমেয়িাদী মানসিক রোগ। তাই যৌন হয়রানির বিষয় গোপন না করে প্রকাশ্যে আনতে হবে, যার ফলে অপরাধীদেরকে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনাও সহজ হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ।
গতকাল (১৬ জুলাই) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যৌন হয়রানী প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে “Online Sexual Harassment: Legal & Psychological Aspects” শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যৌন হয়রানী প্রতিরোধ কমিটির চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড.ফারহানা হেলাল মেহতাব এর সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব, নেটওর্য়াক ফর রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এন আর টি) এর নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সানাইয়া আনসারী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর সাইবার ক্রাইম ইউনিট এর এডিশনাল ডেপুটি পুলশ কমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর এসিট্যাটান্ট ডিরেক্টর (মেডিটেশন) তাপসী রাবেয়া।
তাপসী রাবেয়া বলেন, আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনলাইনে যৌন হয়রানীর বিষয়টা এমন একটি বিষয় যা কেউ প্রকাশ্যে আনতে চান না। তবে এটার সম্মুখীন অনেক বেশি হচ্ছেন। গোপন ক্যামেরায় পর্নোগ্রাফি ধারণ, স্বামী স্ত্রীর একান্ত মুর্হূত ধারণ করে প্রচার করা; এসব এখন খুব বেশি হচ্ছে। আবার এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে বন্ধু বান্ধবদের সাথে ছবি দিয়ে, বিশেষ মূহুর্তের ছবি এডিট করে হুমকি দেয়া হচ্ছে, যেগুলোকে এখন সাইবার ক্রাইম বলা হচ্ছে। শুধু যে মেয়েরা হচ্ছেন তা নয় কিছু ক্ষেত্রে পুরুষরাও এসবের শিকার হচ্ছেন। এসব বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলাও আসে আমাদের কাছে।
অনলাইনে যৌন হয়রানী সংক্রান্ত মানসিক সমস্যা নিয়ে মেয়েরা সাইকিয়াট্রিস্টদের কাছে আসে কিনা এবং ভিকটিম মেয়েদের সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট বিষয়ে অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, অনলাইন হয়রানীরর কারণ নিয়ে সরাসরি কেউ আসে না। যারা আসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন একটি লক্ষণ নিয়ে আসে, অথবা কিছু ফিজিক্যাল অর সাইকোলজিক্যাল লক্ষণ নিয়ে আসে। যেমন: থাকে বিষণ্ণতা, কমপালসিভ ডিসঅর্ডার সহ নানান লক্ষণ থাকে। তখন আমরা এসব সমস্যার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। কিন্তু সরাসরি কেউ বলতে আসেন না হয়রানীর ব্যাপারে। সরাসরি বলতে আসে না বলেই মনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়, সেখান থেকে সাইকোলজিক্যাল সমস্যা নিয়ে আসেন।
অনলাইনে যৌন হয়রানী কেন ঘটছে, কি কারণে ঘটছে সবার আগে এসব জানা প্রয়োজন। তারপর তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আইন শাস্তির জন্য না, শুদ্ধিকরণের জায়গা। এছাড়া যৌনতা একটি বায়োলজিক্যাল বিষয়, এক্ষেত্রে আইন, নিয়ম, ধর্মীয় বিষয় সবকিছু মেইনটেইন করতে হবে। সেক্স এর ক্ষেত্রেও এনজাইটির বিষয় আছে, প্রতিটা মানুষ যেকোন এনজাইটি থেকে মুক্তি পেতে চায়। কি কারণে এনজাইটির বিষয়গুলো ঘটছে সেগুলো জানতে হবে। কেউ যদি একবারও আত্মহত্যার চিন্তা করে থাকে তাহলে তাকে প্রফেশনাল সাহায্য নিতে হবে, জানান অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
নারী ও শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হলে কোথায় যাবে, এ বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন অ্যাডভোকেট সানাইয়া আনসারী। তিনি বলেন, আইনের জায়গাটা আইনি পেশাজীবি ছাড়া অন্যান্যরা সহজে৷ বুঝতে চায় না। সাধারন মানুষ আইনি বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়ার চেষ্টা করে না বলে অনেকেই জানে না যে আইনে কি আছে। আইনে অনেকগুলো ধারা রয়েছে যেখানে সাপোর্ট দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে আইনের দ্বারস্থ হওয়ার পাশাপাশি এসব ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য আমাদেরকে সামাজিকভাবে সচেতন হতে হবে।
অনলাইনে যৌন হয়রানী বিষয়ে সাইবার ক্রাইম ইউনিট এর কার্যক্রম সম্পর্কে মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে DMP ছাড়াও আরও ২ টি ইউনিট CID ও RAB কাজ করে আসছে। সাইবার পর্নোগ্রাফি বা বুলিং এর শিকার হচ্ছেন মেয়েরা বেশি, যাদের মধ্যে টিনেজার ৯০%। প্রতিদিন ২২ থেকে ৩০ টি কেস আসে আমার কাছে। এখন কভিড-১৯ এর কারণে সেবাটা পরিবর্তন হয়ে আসছে। আমরা ফোনে কথা বলি, হোয়াটসঅ্যাপে, মেইলে সেবা দিয়ে থাকি। এছাড়া আমাদের এরোসিটি অ্যাপস আছে।
কেউ যদি সাইবার ক্রাইম এর শিকার হয় আমরা সবার আগে তাদের পুলিশ স্টেশন গিয়ে জিডি বা FIR করতে বলি। ফেসবুক, ই- মেইল হেরেজমেন্ট এর শিকার হলে ব্লক না করে কাউন্টার অ্যাটাক করতে হবে। তা না হলে ক্রাইমটা বার বার ঘটবে। আমাদের একটি হটলাইন নাম্বার আছে – ০১৭৬৯৬৯১৫২২ এখানে ফোন করলে আমরা সহযোগিতা জন্য এগিয়ে যাই, বলেন মো. নাজমুল ইসলাম।
ওয়েবিনার আয়োজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব হিউম্যানিটিস অ্যান্ড সোশ্যাল সয়েন্স এর অ্যাসোসিয়েট ডীন অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব মনের খবর’কে বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও যৌন হয়রানী প্রতিরোধে কমিটি থাকার বিধান রয়েছে। সেই মোতাবেক ড্যাফোডিলে বেশ শক্তশালী একটি কমিটি রয়েছে। আমরা প্রতি সেমিষ্টারে একটি করে অর্থাৎ বছরে তিনটি এবিষয়ক সেমিনারে করে থাকি, যেখানে শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়। যেহেতু করোনা পরিস্থিতিতে এবার সেটি সম্ভব হচ্ছে না তাই আমরা এবার অনলাইনে ওয়েবিনার এর আয়োজন করেছি।”
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন