নামাজের মাধ্যমে মুসলমানগণ দিনের মধ্যে পাঁচবার আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করেন। নিজের কৃত পাপ কাজের জন্যে ক্ষমা চান, জগতের সকল সৃষ্টির কৃত পাপের জন্যে ক্ষমা চান। সহজ সরল সঠিক পথে পরিচালনার জন্যে প্রতি রাকাতে, প্রতি সেজদায় আল্লাহর সাহায্য চান, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।
একাগ্রচিত্তে নামাজ যেমন মন মননকে পরিশুদ্ধ করে তেমনি দেহকেও করে পবিত্র, শুদ্ধ, কর্মচঞ্চল। দিনের পাঁচটি সময়ের প্রত্যেকটি নামাজ প্রধানত ফরজ, সুন্নত ও নফলে বিভক্ত। ফরজ নামাজ দুই রাকাত, তিন রাকাত বা চার রাকাতের সমন্বয়ে আদায় করে নেওয়া হয়। ফরজ নামাজ যা অবশ্যই আপনাকে আদায় করতে হবে। সবচেয়ে কম রাকাত সম্পন্ন ফরয নামাজ হলো ফজরের, যা মাত্র দুই রাকাত।
দিনের মধ্যে পাঁচবার নামাজে মোট ১৭ রাকাত ফরজ নামাজ। আর সুন্নত সহ হলে তা প্রতিদিন ৪৮ রাকাত। নফল আদায় করলে আরো আরো বেশী রাকাতের মাধ্যমে নামাজ আদায় করতে হয়।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেহে অ কাপড়ে প্রত্যেক নামাজের আগে অজু করে নেওয়া বাধ্যতামূলক। সে ওজুর পানিটিও হতে হয় পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন পবিত্র। নাক, মুখ, কান, চুল, হাত, পা সবই ওজুর সময় পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়, মুছে নিতে হয় নুন্যতম তিনবার। দিনের মধ্যে এভাবে বার বার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেহে পবিত্রতা অর্জন করে নিভৃতে একাগ্রচিত্তে সৃষ্টি কর্তার কাছে আত্মসমর্পণ করা ইসলাম ধর্মের এক মহান পালনীয় অংশ।
নামাজের প্রত্যেক রাকাতের সময় হাতের সংকোচন প্রসারণ ছাড়াও দাঁড়ানো, বসা, রুকুতে ও সিজদায় যাওয়া, সালাম ফেরানো, ইত্যাদি মোট ৭ থেকে ৯ রকমের শারিরীক অঙ্গভঙ্গিতে নির্দিষ্ট সময় নিয়ে বসে বা দাড়িয়ে থাকতে হয়। এই অঙ্গবিন্যাসে অবস্থান আমাদের শরীরের প্রতিটি জোড়া বা জয়েন্টের নিয়ন্ত্রণ থাকা মাংশপেশী গুলো সুষম সংকোচন ও প্রসারণ নিশ্চিত করে।
এজন্যই বলা হয় নামাজ হলো দেহের জন্যে প্রয়োজনীয় সর্বোত্তম শরীর চর্চা বা যোগ ব্যায়াম যা একই সাথে দেহ ও মন উভয়কে শুদ্ধ করে। একজন মানুষ যদি দিনে পাঁচবার সালাত আদায় করে, তাহলে শরীর কে সুস্থ রাখতে তার আর আলাদা ভাবে শরীর চর্চা করার দরকার হয়না।
দেহকে সুস্থ সবল রাখতে, দেহের ইমিউনিটি কে সুদৃঢ় রাখতে আমাদের শরীর চর্চা বাধ্যতামূলক।
একজন মুসলমান ধর্মপ্রাণ দুই রাকাত নামাজের সময় তার শরীর কে মোট ১৪ বার বিভিন্ন শারিরীক বিন্যাসে রাখতে হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন ১১৯ বার, মাসে ৩৫৭০ বার এবং বছরে ৪২ হাজার ৮৪০ বার বিভিন্ন সুষম অঙবিন্যাসে থেকে সালাত আদায় করে নিতে হয়। এরকম সালাত আদায় নিঃসন্দেহে প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটির সুগঠনে সহায়ক।
নামাজের অঙ্গবিন্যাস এবং এর উপকারীতা নিয়ে অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা চলমান।
যদি একজন মুসলমান গড়ে ৫০ বছর বাঁচেন এবং তিনি যদি ১০ বছর বয়স থেকে বাধ্যতামূলক সালাত গুলো আদায় করা করেন তাহলে দেখা যায় সারাজীবনে তাঁকে মোট ১৭ লাখ ১৩ হাজার ৬ শ’তবার শরীরটাকে নির্দিষ্ট কিছু অঙবিন্যাসে রেখে এবং নির্দিষ্ট কিছু সময় নিয়ে অবস্থান করতে হয় যা পৃথিবীর সেরা শরীর চর্চার অন্যতম হিসেবে পরিগনিত।
নামাজে সেজদার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশী উপকৃত হয় আমাদের দেহের ফুসফুস কারন এ অবস্থানে ফুসফুস দেহের জন্যে প্রয়োজনীয় সবচেয়ে বেশী রক্ত সাথে অক্সিজেনের সমন্বয় ঘটাতে পারে। রক্তে অক্সিজেন সেচুরেশন বৃদ্ধি পায়। এজন্য দেখা যায় আই সি ইউ’তে কমায় থাকা রুগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন অবনতি ঘটলে তার রক্তের অক্সিজেন বাড়াতে রুগীকে অনেকটা সেজদার মতো পজিশনে রাখা হয়। একে বলে প্রোনিং।
একজন মুসলিমের প্রতিদিনের এই নামাজ আদায়ে প্রায় ৮০ কিলো ক্যালরি শক্তি ব্যয় হয়।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শুরু থেকেই সারা বিশ্বের সকল চিকিৎসা গবেষকগন একটা পরামর্শই বারবার দিয়ে আসছেন যা হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, বারবার হাত ধোয়া এবং ইমিউনিটি বাড়াতে নিয়মিত শরীর চর্চা ও শুদ্ধাচার অবলম্বন করা এবং মন ভালো রাখতে মেডিটেশন করা।
করোনাভাইরাস মহামারীতে সারাবিশ্ব স্থবির। অনেকে আজ লক ডাউনে বন্দী, অনেকে নিজ গৃহে আইসোলেশনে। আল্লাহর সাহায্য চাই। একাগ্রচিত্তে, নিরবে নিভৃতে নামাজ আদায় নিঃসন্দেহে এ সকল উপদেশের একটি সুন্দর সংমিশ্রণ। ।
রাব্বুল আ’লামীন বিশ্বের সবাইকে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত রাখুন। আমীন।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা বা অন্য যেকোন ধরনের দায় সর্ম্পূণই লেখকের।