কিছুদিন আগে একজন ভদ্রলোক আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। আবিদ সাহেব (ছদ্মনাম) করপোরেট সার্ভিস করেন। উনার স্ত্রীর সাথে ছোটখাটো বিষয় থেকে শুরু করে অনেক বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হচ্ছে ,এমনকি ঝগড়া সৃস্টি হচ্ছে। একটু বলে রাখি উনার স্ত্রী স্কুল টিচার। কিন্তুু উনার অনেক স্ট্রেস আছে, যার মধ্যে একটি হলো উনার স্যালারি হয় না সময়মতো ।এখন এই পরিস্থিতিতে স্যালারি না পাবার সম্ভাবনাই বেশি।
করোনা প্যান্ডেমিক দাম্পত্য জীবন ও সংসার জীবনে এমন অনেক প্রভাব ফেলছে। এই কোয়ারান্টাইন সময় অনেক দম্পতির কাছে সুখকর আবার অনেকের কাছে তিক্ততার প্রকাশ পাচ্ছে।
অনিশ্চয়তা,দ্বিধা,সম্পর্ক এর টানাপোড়ন স্বামী স্ত্রীকে প্রচুর ডিস্ট্রেসড করছে। করোনা বদলে দিচ্ছে সকল ধরনের সহজ সরল সমীকরণ ।প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিলই শুধু বাড়ছে না,ভেঙে যাচ্ছে চিরায়ত পারিবারিক সম্পর্ক। কর্মহীন এই সময়টায় ঘরে থাকার ফলে মনঃস্তাত্বিক দুরত্ব বাড়ছে, এছাড়া মানসিক উদ্বেগ, চাপ বাড়ছে এমনকি প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তিরও হিসেব চলছে।
এই করোনা পরিস্থিতিতে দাম্পত্যকলহ শুধুমাত্র বাংলাদেশেই হচ্ছে না, পৃথিবীর প্রায় দেশেই হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি বলছে ,দেশে দেশে লকডাউন আর কোয়ারান্টাইনে ঘরবন্দি কোটি কোটি মানুষ এর লকডাউন আর কোয়ারান্টাইন লাইফে পারিবারিক সহিংসতা অতীত এর যেকোন সময় এর চেয়ে বেশী এখন বিশ্বজুড়ে।
এছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বিশ্বের সকল মানুষ এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন,পারিবারিক কলহ থেকে বিরত থাকতে।
কিভাবে ভালো থাকা যায় তার প্রচেষ্টা অথবা করণীয়:
১।এই সময় এ স্বামী-স্ত্রী ২জনকেই অনেক বেশি ধৈর্য্যশীল হতে হবে।
২। দুজনকেই দুজনের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, বুঝতে হবে, অল্পতেই রেগে যাওয়া যাবে না।
৩। পার্টনার এর দৃস্টিভঙ্গি থেকে দেখার ও বোঝার চেষ্টা করতে হবে। নিজে ভুল করে থাকলে, স্বীকার করে নিতে হবে।
৪। সংসার এর কাজে একজন আর একজনকে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে হবে।
৫। আপনার যদি বাচ্চা থেকে থাকে তাহলে সেই বাচ্চার সুস্থ স্বাভাবিক বিকাশ এর জন্য হলেও নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ভালো করে করুন। প্রতিনিয়ত ঝগড়া বন্ধ রাখার চেষ্টা করুন।
৬ ।প্রতিদিন কিছুক্ষণ হলেও একান্তে কথা বলুন। সম্মান দিন, একে অপরের উপরে বিশ্বাস রাখুন।
৭। যৌনজীবনকে গুরুত্ব দিন। এক্ষেত্রে দুজন দুজনের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিন এবং প্রতিটি বিষয় এ সরাসরি নিজের চাহিদার কথা বলুন।
৮। নিজের যেকোন ধরনের সমস্যা পার্টনার এর সাথে সরাসরি শেয়ার করুন ,ইগো নিয়ে থাকবেন না, স্বামী স্ত্রী দুজন দুজনের মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। সমস্যার কথা বললেই ইগো ক্ল্যাশ হবে না।
৯। একে অপরের যত্ন নিন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
১০। দাম্পত্য জীবন এর সুখ শুধুমাত্র স্বামী বা শুধুমাত্র স্ত্রীর উপরেই নির্ভর করে না , দুজনের উপরেই নির্ভর করে আর তাই দুজনকেই দ্বায়িত্ব নিয়ে একদম যাকে বলে পিওর ভালোবাসা, সব কিছু দিয়েই সম্পর্ককে ভালো রাখতে হবে, জীবন্ত রাখতে হবে হোক সেটা এই হোম কোয়ারান্টাইন সময়ে বা পরবর্তী সময়ে।
লেখক: নাজমুন নাহার(সনি), সাইকোলজিস্ট, মনোরোগ বিভাগ,ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।