ইসিটি : শুচিবাই রোগে কার্যকর নয়

অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার রোগটির লক্ষণ হলো অযাচিত চিন্তা, দৃশ্য কল্পনা অথবা তাড়না যার থেকে মুক্তি লাভের জন্য বাধ্য হয়ে কোনো কাজ বারবার করা। যেমন : বারবার ধোয়া, গণনা করা, বারবার যাচাই করা ইত্যাদি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মেডিক্যাল ডিজ্যাবিলিটির প্রধান দশটি রোগের মধ্যে এটি একটি। অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারের প্রথম চিকিৎসা হলো ঔষধ এবং কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি যেমন : ইআরপি বা এক্সপোজার অ্যান্ড রেসপন্স প্রিভেনশন থেরাপি। সাধারণত এই চিকিৎসায় ৬০% রোগীর লক্ষণ নিয়ন্ত্রিত হয়।
তাছাড়াও যাদের পুরো নিয়ন্ত্রণ হয় না তাদের ক্ষেত্রে ঔষধ হিসেবে অ্যান্টিসাইকোটিক ও ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিলে দেখা যায় ৯০% রোগীর চিকিৎসা ফলপ্রসূ হয়। এতদসত্ত্বেও এই রোগের চিকিৎসা এখনো চ্যালেঞ্জিং। তার কারণ দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা না নেওয়া, পরিবারের অসহযোগিতা, ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অন্য রোগসমূহের সহাবস্থান যেমন : বিষণ্ণতা, ম্যানিয়া ইত্যাদি মুড ডিজঅর্ডার।
ঔষধ প্রতিরোধী ওসিডি বা ট্রিটমেন্ট রেজিস্ট্যান্ট ওসিডির জন্য বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে এখন গবেষণা করা তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন ধারণা হলো, ইসিটি বা ইলেকট্রো কনভালসিভ থেরাপি ওসিডির জন্য কার্যকর নয়। কিন্তু এখন গবেষণায় ওসিডির চিকিৎসায় ইসিটির বেশকিছু সাফল্য দেখা যাচ্ছে।
মতবিরোধ যদিও কম নয়। একটি ইউনিভার্সিটি নির্ভর ওসিডি ক্লিনিকে ইসিটির ব্যবহার এবং সাফল্য নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা করা হয়েছে যা আমাদের এই বিষয়ের সঙ্গে সর্ম্পকিত।
১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোট ৪২০ জন ওসিডি রোগে আক্রান্তদের নিয়ে এই গবেষণা করা হয়। তাদের বয়স এবং লিঙ্গ, রোগটির শুরুর বয়স, সঙ্গে অন্য কোনো মানসিক রোগ আছে কিনা, ইসিটি দেয়ার আগে চিকিৎসাব্যবস্থা, ইসিটি নেয়ার পর তার ফলাফল ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
ফলাফলে দেখা যায়, এই ৪২০ জন রোগীর মধ্যে ৫ জনকে ইসিটি প্রেস্ক্রাইব করা হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে একজনের ওসিডির পাশাপাশি ছিল ম্যানিয়া, বাকি চারজনের মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারের সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতা এবং এদের প্রত্যেকের ঔষধের রেসপন্স ছিল খুব সামান্য।
ইসিটি নেয়ার পর দেখা যায় ম্যানিয়া বা ডিপ্রেসিভ উপসর্গ কমেছে কিন্তু ওসিডির যে উপসর্গগুলো ছিল তার তেমন উন্নতি হয়নি। ২ জনের অবস্থার অবনতি হয়েছে যাদের একজন পরে আর চিকিৎসা নেয়নি। যদিও এই গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল কিন্তু দেখা যায় যে ইসিটিকে ওসিডির বিশেষ চিকিৎসা হিসেবে সংরক্ষিত করা প্রয়োজন যেখানে ওসিডির সঙ্গে অন্যান্য মানসিক রোগ যেমন : বিষণ্ণতা বা অন্য মুড ডিজঅর্ডার থাকে বা ট্রিটমেন্ট রেজিস্ট্যান্ট ওসিডি।
সূত্র: মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন, ২য় বর্ষ, ১ম সংখ্যায় প্রকাশিত

Previous articleপ্রেমে পড়ার কারণ জানালো গবেষণা
Next articleঅনলাইন বুলিংয়ে বাড়ছে আত্মহননের ঝুঁকি
ডা. সাদিয়া আফরিন
শিশু ও কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী রেজিস্টার- জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here