আমরা সবাই ভালো থাকতে চাই, সুখী হতে চাই। কিন্তু এই ভালো থাকার জন্য কিংবা সুখের সন্ধানে তিল তিল করে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হয়। আর নিজেকে গড়ে তোলার পথটাও সব সময় সহজ হয় না, নানা ঘাত-প্রতিঘাত বা প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। যে কারণে মানুষ নানা ধরনের মনো-সামাজিক চাপের সম্মুখীন হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কখনো কখনো আমাদের মন বিষন্ন হয়ে ওঠে। আর এই বিষন্নতাই এক সময় রোগে পরিণত হয় যাকে বলা হয় গুরুতর বিষন্নতাজনিত রোগ (major depressive disorder)।
মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার (গুরুতর বিষন্নতাজনিত রোগ) সনাক্ত করার ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয়কে সুনির্দিষ্ট করতে হবে। যেমন: একক এপিসোড (single episode),পুনঃপুনঃ এপিসোড (recurrent episode) (পৃথক এপিসোড বিবেচনার জন্য অন্তত দুই মাসের একটি বিরতি থাকতে হবে, যাতে বৈশিষ্ট্য গুরুতর বিষন্নতাজনিত এপিসোডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়)।
রোগী কোন পর্যায়ে আছে (মাইন্ড, মডারেট, সিভিয়ার), সাইকোটিক কিনা, রিমিশন বা কতদিন হয় ভালো আছে এই বিষয়গুলো বর্তমান ডিপ্রেসিভ এপিসোড (current depressive) এর ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনতে হবে।
বিষন্নতার লক্ষণ
উদ্বিগ্নতা (with anxious distress): মেজর ডিপ্রেসিভ এপিসোড বা দীর্ঘদিন বিষন্নতায় ভোগার (ডিসথাইমিয়া) ফলে তার মধ্যে কতগুলো লক্ষণ দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলো একজন রোগীর মধ্যে কী মাত্রায় আছে তার ওপর ভিত্তি করে বোঝা যায় একজন রোগী মৃদু উদ্বিগ্নতায়, নাকি মাঝারি, নাকি গুরুতর উদ্বিগ্নতার পর্যায়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে একজন রোগী নিম্নলিখিত উদ্বিগ্নতায় ভোগে। যেমন:
=> ভীতিকর অনুভূতি
=> অস্থিরতা
=> দুঃশ্চিন্তার কারণে মনোযোগের সমস্যা
=> ক্ষতিকর কিছু ঘটতে পারে এমন ভয়
=> নিয়ন্ত্রণহীনতার অনুভূতি
মিশ্র বৈশিষ্ট্য সমেত (with mixed features):
মেজর ডিপ্রেসিভ এপিসোড চলাকালীন প্রায় প্রতিদিন বা বেশির ভাগ দিন তার মধ্যে অন্তত পক্ষে তিনটি ম্যানিক বা হাইপম্যানিক লক্ষণ থাকতে পারে। যেমন-
=> উৎফুল্ল, উত্তেজিত মন
=> স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান মনে করা
=> ঘুম কমে যাওয়া (তিন ঘণ্টা ঘুমালেই রিলাক্স অনুভব করা)
=> স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কথা বলা বা অবিরাম কথা চালিয়ে যাওয়া।
=> ধারণাগুলো নির্দিষ্ট বিষয়ে স্থির থাকে না বা চিন্তাগুলো মাথার মধ্যে দৌঁড়াচ্ছে এমন অনুভব।
=> মনোযোগ সহজেই অপ্রয়োজনীয় বা অপ্রাসঙ্গিক উদ্দীপকের দিকে চলে যায়।
=> সক্রিয়তা বেড়ে যায় সামাজিক ক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে, স্কুলের ক্ষেত্রে এবং যৌনতায় বা মনোদৈহিক অস্থিরতা বেড়ে যাওয়া।
=> অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক আনন্দ ফুর্তির কাজে হাত দেওয়া যা পরবর্তীতে বেদনাদায়ক ফলাফল বয়ে আনে। যেমন: নিয়ন্ত্রণহীন কেনাকাটা, যৌনকর্ম করে ফেলা, অলাভজনক ব্যবসায় টাকা-পয়সা খাটিয়ে ফেলা।
লক্ষণগুলো গুরুতর আকার ধারণ করার কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে তার সামাজিক, পেশাগত কাজে, স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে, অন্যের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে বা তার নিজের এবং অন্যের ক্ষতি এড়ানোর জন্য এবং যে সব সাইকোটিক লক্ষণ প্রকাশ পায় তা এড়ানোর জন্য হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়।
=> লক্ষণগুলো সরাসরি সাবস্টেন্স (মাদক) ব্যবহারের ফলে শারীরিক প্রতিক্রিয়া বা শারীরিক রোগের জন্য হয়নি (যেমন: মাদকের অপব্যবহার, ওষুধ বা অন্যকোনো চিকিৎসার জন্য হয়নি।)
(মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে বাইপোলার-১ ডিজঅর্ডার এবং বাইপোলার-২ ডিজঅর্ডারের ঝুঁকি থাকে মিশ্র বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে। এসব ক্ষেত্রে কি ধরনের চিকিৎসা পরিকল্পনা এবং তদারকি গ্রহণ করতে হবে এ বিষয়গুলো চিকিৎসার জন্য জরুরি।)
ম্যালাংকোলিক (বিষাদ গ্রস্থ) বৈশিষ্ট্য (melancholic feature)
একজন মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার বা গুরুতর বিষন্নতাজনিত রোগীর বর্তমান এপিসোডের মধ্যে ম্যালাংকোলিক বৈশিষ্ট্য আছে কিনা তা বিশেষায়িত করাও গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রে দেখা যায় যে রোগী সব কিছুতে বা সব কাজেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। সচারাচর যে বিষয়গুলো আনন্দ দেয় বা ভালো কিছু ঘটলেও ক্ষণিকের জন্য হলেও আনন্দ অনুভব করেনা।
সাধারণত সকালের দিকেই একজন মানুষ বেশি বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দুই ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠে পরে। উল্লেখযোগ্য ভাবে মনোদৈহিক অস্থিরতা বা স্থবিরতা দেখা দেয়। রুচি এবং ওজনও কমে যায় । অতিরিক্ত অপরাধী বা যথাযথ নয় এমন ক্ষেত্রেও নিজেকে অপরাধী ভাবে।
গতানুগতিক বৈশিষ্ট্যবিহীন লক্ষণ সমূহ (with a typical features):
এ ক্ষেত্রে মেজর ডিপ্রেসিভ এপিসোড বা দীর্ঘমেয়াদী ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার এর ক্ষেত্রে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন: ভালো কিছু ঘটলে তার মন ভালো হয়ে যায়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওজন বেড়ে যায় বা ক্ষুধা বেড়ে যায়। অতিনিদ্রা অর্থাৎ ১০ ঘণ্টার অধিক ঘুমিয়ে থাকে। গুরুভার পক্ষাঘাত দেখা দেয়। এক্ষেত্রে হাত-পা শীশার মতো ভারী অনুভূত হয়। আর পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হওয়ার কারণে একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রত্যাখান প্রবণতা দেখা যায়। যার ফলে সামাজিক এবং পেশাগত জীবনে বিঘ্ন ঘটে।
চলবে…
পারভীন বেগম
মনোবিজ্ঞানী, হারমনি
বনানী, ঢাকা।
পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।
খুব ভাল ছাত্র ছিলাম। আট বছর আগে এসএসসি পরীক্ষা দিছি। অসুস্থতার কারণে পরীক্ষা খারাপ হয়েছিল । মাবাবার অসচেনতা আরো নানা কারণে আমার মনটা একেবারে বিষন্নতা হয়ে গেছে। এখন কোন কাজে সিদ্বান্ত নিতে গেলে অস্থির লাগে। কোন কাজে মন বসেনা। কোন কাজ করতে চাইলেও করতে পারিনা। এখন আমার মরণ ছাড়া কোন উপায় নাই।