বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বে মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাসকরণে দ্বিতীয় প্রধান কারণ হবে বিষণ্ণতা- এমনটাই জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সালেহ্ উদ্দিন।
তিনি জানান, বর্তমানে বিশ্বে ৩৫০ মিলিয়ন লোক বিষণ্ণতায় ভুগছে। বাংলাদেশেও এই হার প্রকট এবং ক্রমবর্মান। তবে বাংলাদেশে ডিপ্রেশন সংক্রান্ত জাতীয় পর্যায়ের কোন গবেষণা নেই।আমাদের দেশে বিষণ্ণতার চিকিৎসার সবকিছুই বিদেশি গবেষণা নির্ভর। বিষণ্ণতার মত ভয়াবহ ঝুঁকির হাত থেকে মুক্তির জন্য দ্রুতই দেশিয় পর্যায়ে গবেষণা কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ডা. মো. সালেহ্ উদ্দিন।
তিনি গতকাল (১৮ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসিক বিজ্ঞান সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন। বিজ্ঞান সভার শিরোনাম ছিলো “ Depression as a Primary and Systemic Disorder”। মূল প্রবন্ধের পাশাপাশি, ডায়াবেটিস ও বিষন্নতা সম্পর্কিত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা উপাত্ত উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ এর হরমোনবিদ্যা বিভাগরে সহকারী অধ্যাপক ডাঃ শাহাজাদা সেলিম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় উঠে আসে যে, একজন ব্যক্তি, অন্যান্য শারীরিক রোগের সাথে যুগপৎ ভাবে বিষন্নতায় ভুগতে পারেন এবং এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের এক তৃতীয়াংশ বিষণ্ণতায় ভুগে থাকেন। উল্লেখ্য যে ডায়াবেটিস ছাড়াও অন্যান্য শারীরিক রোগ যেমনঃ হৃদরোগ, বাতরোগ, স্নায়বিক রোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি এবং গর্ভকালে বিষন্নতার হার সাধারন মানুষের তুলনায় বেশী থাকে। মূলত ঠিক কি কারণে বিষণ্ণতা অন্যান্য শারীরিক রোগের সাথে যুগপৎ ভাবে ঘটছে তা নির্ণয়ের জন্য গত এক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা নানা গবেষণা চালিয়েছেন এবং গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের শরীরে নিসৃত কিছু রাসায়নিক পদার্থ (সাইটোকাইন) এক্ষেত্রে দায়ী। উল্লেখ্য যে, গর্ভকালীন বিষণ্ণতা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় পূর্বেই বাচ্চা প্রসব ত্বরান্বিত করে এবং ফলশ্রুতিতে অটিসমের মতো মস্তিষ্ক বিকাশজনিত রোগে শিশু পরবর্তীতে ভুগতে পারে।
মূল প্রবন্ধে ডা. মো. সালেহ্ উদ্দিন বিষণ্ণতার প্রাথমিক সব ধারণা, উপসর্গ, সনাক্তকরণ পদ্ধতি ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা করেন।
সেমিনারে অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি(গবেষণা) অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, মাসিক সেমিনার আয়োজক কমিটির অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও প্যানেল আলোচক হিসেবে মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব, একই বিভাগের অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন্নাহার, অধ্যাপক ডা. এম এস আই ইসলাম, হরমোনবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দিন, অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সারওয়ার আলম, প্যালিয়েটিভ কেয়ার এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন, কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মনজুর মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও সেমিনারে প্রাণবন্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশ্নোত্তর পর্বে বিশেষজ্ঞ বৃন্দ বিভিন্ন বিভাগের সমন্বিত চিকিৎসা ও গবেষণার ব্যাপারে মতামত ব্যক্ত করেন। অধ্যাপক এম এস আই মল্লিক বলেন, কোন দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক রোগ ধরা পরা বা ঐ রোগজনিত অক্ষমতা কারণে যেমনে ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন, আবার যুগপৎ ভাবে ঐ শারীরিক রোগের সাথে বিষণ্ণতা রোগ প্রকাশিত হতে পারে যা মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।
অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার সাধারন মানুষ ও চিকিৎসকদের বিষণ্ণতা সম্পর্কিত সচেতনতার কথা উল্লেখ করেন। মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সালাহ্উদ্দিন কাওসার বিপ্লব তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, বিষণ্ণতা রোগ ও তার বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসার ব্যাপারে অজ্ঞানতার কারণে প্রায়শই রোগীরা পায়না সঠিক চিকিৎসা এবং এক্ষেত্রে এ ধরনের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের আরো বেশী পরিমাণে স্বতস্ফূর্ত অংশ গ্রহণের বিকল্প নেই।