সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামে দুই শতাধিক প্রতিবন্ধী রয়েছে বলে সম্প্রতি খবর প্রকাশিত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব লোকের মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক উভয় ধরণের প্রতিবন্ধী রয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
বিশেষজ্ঞরা জানান, গর্ভকালীন মায়েদের অসচেতনতা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও পুষ্টিহীনতা ও কুসংস্কারে বিশ্বাসের কারণে এ গ্রামে প্রতিবন্ধী লোকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২৫ হাজারেরও বেশি লোকসংখ্যা নিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম আমতৈল। যেখানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি, আর বেশির ভাগ মানুষ মৎস্যজীবী। উপজেলা সদর থেকেপ্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ গ্রামের চারপাশের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে এ গ্রামের মানুষের রোগব্যাধি নিত্যসঙ্গী।
তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এক বা একাধিক প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে। এদের কেউ শারীরিক, কেউ মানসিক, কেউ বা বাক্প্রতিবন্ধী। দারিদ্র্যপীড়িতএ এলাকার বেশির ভাগ মানুষ কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং ঝাড়-ফুঁকে বিশ্বাসী।
এ গ্রামে নেই কোনো স্যানিটেশন সুবিধা। অসচেতনতা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অগোছালো বাড়িঘর নির্মাণের কারণে প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। এখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করায় বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে প্রতিনিয়ত ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের বেলায় ঘটছে আরো মর্মান্তিক ঘটনা। গর্ভকালীন অসচেতনতা, অপুষ্টি, ঝাড়-ফুঁক করাসহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারণে প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম দিচ্ছেন মায়েরা।
গভীর নলকূপ এর স্বল্পতায় এ গ্রামে রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট রয়েছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বাজারঘাটসহ প্রতিটি স্থান দুর্গন্ধ ও ময়লা-আবর্জনায় ভরা। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠায় শিশুদের ভবিষ্যৎ থাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে। এভাবে প্রতিটি পরিবারে প্রতিবন্ধী লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকলে আগামী ১০ বছরে এ এলাকায় প্রতিবন্ধী লোকের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে সচেতন মহল। তারা মনে করেন, গর্ভকালীন মায়েদের অসচেতনতা ও অপুষ্টিজনিত কারণেই মূলত শিশুরা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মাচ্ছে। তবে সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শ ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করলে এ সমস্যা নিরসন হবে।
ইউনিয়ন পরিষদের জরিপ অনুযায়ী, এ গ্রামের দেড় শতাধিক শিশু প্রতিবন্ধী ও প্রায় ৫০ জন বয়স্ক প্রতিবন্ধী রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ৫০-৬০ জন শিশু-বয়স্ক প্রতিবন্ধী ভাতা পান।