পর্নোগ্রাফি কি কোন মানসিক সমস্যা?

প্রশ্ন: তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেট সহজলভ্যতার কারণে এখন অধিকাংশ যুবক-যুবতী পর্নোগ্রাফির ভয়াবহ নেশায় আসক্ত। আমি নিজেও এর মধ্যে জড়িয়ে গেছি। এ জন্য সব সময় ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিজের ভেতরে অপরাধবোধ অনুভব করি। আমি জানতে চাচ্ছি, পর্নোগ্রাফি কোন মানসিক সমস্যা কিনা। হলে এর প্রতিকারের উপায় গুলো কি কি? __নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

 
ডা. পঞ্চানন আচার্য্য: শুরুতেই ধন্যবাদ, আপনার সুন্দর প্রশ্নের জন্য। পর্নোগ্রাফি – দিনশেষে একটা ব্যবসার নাম। এর বিভিন্ন যৌক্তিকতা উল্লেখ করা হলেও আসলে তা ক্ষতি ছাড়া লাভ বলতে তেমন কিছুই দেয় না। বিশেষত, বর্তমানের পর্নোগ্রাফিতে দেখানো উদ্ভট, বিকৃত এবং মানবতার জন্য অপমানজনক বিষয়বস্তু মানুষের সহজাত মানসিকতাকে, মূল্যবোধকে এবং যৌনতার স্বাভাবিকত্বকেই হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। এখন যেহেতু পর্নোগ্রাফি একটা ব্যবসা, যাকে আবার বাইরের কিছু দেশে একেবারে শিল্পমাধ্যম (Industry) হিসেবে উল্লেখ করা হয়, অভিনেতা-অভিনেত্রিকে রীতিমত তারকা খ্যাতি দেয়া হয়, তাকে তো আর এত সহজে উচ্ছেদ করা যাবেনা। আর উপমহাদেশের প্রেক্ষিতে সামাজিক, ধর্মীয়-সহ অন্যান্য দিক বিবেচনায় নিষিদ্ধ এই পর্নোগ্রাফির প্রতি আকর্ষন থাকবেই, যেভাবে সব নিষিদ্ধ বিষয়ে মানুষের কৌতুহল থাকে। সবচেয়ে বড় কথা, যৌন বিষয় যতদিন ‘ট্যাবু’ হিসেবে থাকবে, যৌন শিক্ষার এবং যৌন আবেগ প্রকাশের সহজ স্বাভাবিক পথ যতদিন না চালু হবে ততদিন এর মূলোৎপাটন করাও সম্ভব নয়।
এখন, পর্নোগ্রাফি দেখাটা যখন আসক্তিতে পরিণত হয়, তখন তা অবশ্যই অস্বাভাবিক। এটা স্বীকার করে নিয়েও, DSM-5* বা ICD-10**, কোথাও একে মানসিক রোগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। এর কারণ, একটা সমস্যাকে রোগ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যে পরিমাণ সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক তথ্যের উপস্থিতি প্রয়োজন, তার অনুপস্থিতি। বিষয়টি এখনও বিবেচনাধীন, হয়তো একটা সময় পরে এটাকে রোগ হিসেব উল্লেখ করলেও করতে পারে। তবে, এই আসক্তির ক্ষতিকর দিক নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। সহজভাবে বলা চলে, আসক্তি বা নেশা মাত্রেই ক্ষতিকর।
প্রতিকারের পথ অনেকগুলো এবং সেটা বিভিন্ন পর্যায়ের। কিন্তু, কষ্টসাধ্য। ব্যক্তিগত পর্যায়ে যেটা করা যায়- পর্নোগ্রাফি থেকে নিজেকে একেবারেই দূরে রাখার চেষ্টা, অন্য কোন গঠনমূলক কাজে বা বিনোদনে অংশ নেয়া প্রভৃতি। প্রথম প্রথম সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগতে পারে, মনে হতে পারে এত অবসর সময় কি করব, অন্য কাজে আগ্রহ বা মজা নাও লাগতে পারে, শারীরিক-মানসিক অবসাদ লাগতে পারে, বারবার মানসিক তাড়না জাগতে পারে আবার দেখার জন্য। যা কিছুই হোক, এগুলো সাময়িক কিছু অসুবিধা, তাই ধৈর্য্য ধরে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই এসবের তীব্রতা কমে আসবে এবং একসময় থেমে যাবে। আর মানুষের মন কখনো চিন্তা ছাড়া থাকতে পারে না। তাই, এসবের বিকল্প হিসেবে আগেই বলেছি কোন গঠনমূলক বা বিনোদনমূলক কাজে যোগ দিতে। এছাড়াও, রিলাক্সেশন বা মেডিটেশন বা প্রার্থনা করা এসবও করা যায়, মানসিক অস্থিরতা-অশান্তি দূর করতে। আর এর পরেও যদি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারেন, যদি আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপনে ব্যঘাতের সৃষ্টি হতেই থাকে তবে অবশ্যই নিকটস্থ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
তবে, কিছু বিষয় মনে গেঁথে রাখবেন- কারো মনে যৌন উত্তেজনা বা যৌনচিন্তা আসা দোষের বা পাপের নয়। এটি মানুষের আর দশটা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মতই একটি। আর নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাকালীন সময়ে তাড়নার কারণে মাঝেমধ্যে পর্নোগ্রাফি দেখে ফেলাটাও কারো পরাজয় নয়। যেকোন কাজে সফলতার আগে কয়েকবার ব্যর্থ হবার মতই একটা বিষয়। আর, পর্নোগ্রাফিতে যা যা দেখায় সে সবই অভিনয়, নাটক-সিনেমার চেয়েও বেশী অবাস্তব। এর কোনটাই বাস্তব জীবনে ঘটার বা প্রয়োগ করা চিন্তা করবেন না।
ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

Previous articleসিলেটে অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার বিষয়ক (ওসিডি) ক্লিনিক-এর কার্যক্রম চালু
Next articleদেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে
ডা. পঞ্চানন আচার্য্য
ডা. পঞ্চানন আচার্য্য। স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রাম। তবে, কলেজ শিক্ষক মায়ের চাকুরিসূত্রে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কেটেছে শৈশব। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবং উচ্চ-মাধ্যমিক চট্টগ্রাম কলেজ থেকে। সিলেট এম. এ. জি. ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস পাসের পর সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। মেডিক্যালে পড়ার সময় থেকেই মনোরোগ নিয়ে পড়ার প্রতি আগ্রহ। তাই, ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্ধারিত সময়ের চাকুরি শেষে ভর্তি হন মনোরোগবিদ্যায় এম.ডি(রেসিডেন্সি) কোর্সে। বর্তমানে তিনি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত শিক্ষকতার ধারা বজায় রেখে চিকিৎসক ও শিক্ষক হওয়াটাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। বই, সঙ্গীত আর লেখালেখিতেই কাটে অবসর সময়ের বেশির ভাগ। স্বপ্ন দেখেন - মেধা ও মননশীলতার চর্চায় অগ্রগামী একটা বাংলাদেশের।

1 COMMENT

  1. আমার বয়স ২০ বছর। উচ্চতা ৫’২”, ওজন ৬৪ কেজি।আমার সমস্যার কথা একেবারে শুরু থেকে বলছি, একেবারে ছোট থেকে যৌনতা আমাকে স্পর্শ করে। প্রায় ৯/১০ বয়স থেকে আমার স্বপ্নদোশ হতো। যৌন উত্তজনামূলক কোনো কিছু দেখলে শরীর গরম হতো, পেনিস দাঁড়িয়ে যেতো এবং কামরস বাহির হতো। ক্রমে হস্তমৈথুন শুরু হয়। প্রতিদিন ২/৩ করে হতো। কয়েক বছর পর একদিক সকালে লক্ষ করলাম আমার স্তন দুটো ব্যাথা করতে লাগলো এবং ফুলতে শুরু করলো। এভাবে হস্তমৈথুন চলতে থাকে এবং এখনো পর্যন্ত চলতেছে। এর মধ্যে আমি মোবাইলে পর্ণ ভিডিও দেখতাম,চটি গল্প পড়তাম। হস্তমৈথুন করার ফলে আমার অনেক শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেন। ২০১৪ সালে এস,এস,সি পরীক্ষার পর থেকে আমার সমস্যাগুলো প্রবল আকারে দেখা দেয়।
    শারীরিক সমস্যা ঃ ১) সব সময় শরীর দূর্বল এবং ক্লান্ত লাগে। ২) সামান্য উত্তেজনায় কামরস বাহির হয় ৩) দ্রুত বীর্যপাত হয় ৪) মাথা ব্যাথা করে ৫) বদ হজম ৬) ঘন ঘন প্রসাব ও পায়খানা হয় ৭) সব সময় পেট ব্যাথা করে পায়খানার পরে শরীর দূর্বল লাগে ৮) শরীরে আগের থেকে ওজন বেড়ে গেছে,এর জন্য অনেক ব্যায়াম এবং ডায়েট কন্ট্রোল করেছি কিন্তু ওজন কমছে না ৯) স্তন দুটো মেয়েদের মতো ফুলে গেছে এবং ব্যাথা করে ১০) মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে পাকতে শুরু করেছে ১১) দাড়ি লাল হয়ে যাচ্ছে এবং পাকতে শুরু করেছে ১২) শরীরের ভিবিন্ন জায়গায় ত্বক ফেটে গেছে ১৩) ত্বকের উজ্জলতা কমে যাচ্ছে ১৪) মনে হয় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
    মানসিক সমস্যা ঃ ১) মাথা ঘোরে এবং মাথা ব্যাথা করে ২) স্মৃতি শক্তি কমে যাচ্ছে, কোনো কিছু রাখতে পারি না ৩) কর্মস্পৃহা কমে যাচ্ছে ৪) পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে গেছে ৫) নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে ৬) মনের জোর কমে যাচ্ছে ৭) কোন কাজে মন বসে না ৮) সব সময় বিষণ্ণতায় ভোগি ৯) সব সময় বাসায় থাকি এবং একাকী থাকি ১০) কারো সাথে কথা বলতে মন না চাওয়া ১১) পারিবারিক ও সামাজিক কোনো কাজ করতে মন না চাওয়া ১২) সব সময় মন খারাপ থাকে ১৩) সব সময় মনের মধ্যে হতাশা কাজ করে ১৪) বন্ধুদের না মিশতে চাওয়া।
    গত মাসে আমার হার্নিয়ার অপারেশন হয় এবং ডান পাশের testis টা পেটের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় থাকায় সেটা কেটে ফেলা হয়। এছাড়া স্তনগুলো দেখে ডাক্তার বলেছে গাইনোকোম্যাষ্টিয়া হয়েছে।
    * বর্তমানে, আমি সারাদিন যৌন উত্তজনায় ভোগি এবং মনের মধ্যে সারাদিন যৌন চিন্তা ঘোরে। এ ছাড়া panis দাড়িয়ে যায় এবং কামরস বাহির হয়। যৌন উত্তজনায় আমার হাত ও পায়ের শিরায় এজ ধরনের উত্তজনা অনুভুত হয় এবং মনে হয় রক্তের মধ্যে কিছু একটা হচ্ছে । এছাড়া স্তনগুলো ফুলে যায় এবং ব্যাথা করে। হাটা -চলা করতে, এবং উঠতে – বসতে panis নাড়া খেলে মনে হয় বীর্য বেরিয়ে যাবে। হস্তমৈথুন না করতে পারলে আমার এ সমস্যাগুলো আরো প্রবল আকারে দেখা দেয়।
    আমি মনে করি আমার মানসিক, হরমোন এবং যৌন সমস্যা রয়েছে। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য না থাকায় এগুলো হচ্ছে। এবং হাইপার সেক্সুয়াল ডিজ অর্ডারে ভুগছি। সাথে যৌন আসক্তিতে ভুগছি।
    এখন এই সমস্যা গুলোর জন্য আমি কি করতে পারি? কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিলে আমার জন্য ভালো হবে, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ/ যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ / হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ। মনোরোগ ও যৌন রোগের সাথে হরমোন রোগের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা?
    মনোরোগ এবং যৌন রোগ বিশেষজ্ঞরা কি হরমোন রোগের চিকিৎসকা করতে পারে। এ সকল ব্যাপারে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here